Page: 021

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২১

রামকান্ত ধেয়ে গিয়ে বলে ওরে বাসো ।
পরিশ্রম হ’য়েছে ছায়ায় এসে বস ।।
বাসুকে করিয়া কোলে বলে মনোদুঃখে ।
ঘামিয়াছে চাঁদমুখ হাসি নাই মুখে ।।
ওরে বাসো! তুমি দাড় বাহিওনা আর ।
আমার বক্ষের নিধি বক্ষে রও আমার ।।
এত বলি বাসুদেবে বসাইয়া বুকে ।
ঘুম পড় বলিয়া চুম্বিত চাঁদ মুখে ।।
শিষ্যদের ঘাটে গিয়া ঘোনাইত নাও ।
বলিত উঠরে বাসো শিষ্যবাড়ী যাও ।।
কান্তলীলা মধুর শুনিতে চমৎকার ।
ভনে শ্রীতারক খেলে জন্ম নাহি আর ।।


রামকান্তের বাসুদেব ও জগন্নাথ রথযাত্রা।

পয়ার

রামকান্ত বাসুদেব গলাগলি ধরে ।
শয়ন করিত সুখে শয্যার উপরে ।।
এই ভাবে প্রবীণ হইল রামকান্ত ।
বর্ণনে অতীত লীলা নাহি তার অন্ত ।।
এদিকে ব্রাক্ষণগন রথযাত্রা করে ।
কান্তের হইল মন রথ করিবারে ।।
বাঁশ দিয়া রামকান্ত রথ বানাইল ।
বাঁশো রথে বাসুদেব উঠিতে ইচ্ছিল ।।
অধিবাস দিনে সব লোক আসে যায় ।
লোকের সংঘট হ’ল লোকারণ্য ময় ।।
ব্রাক্ষণেরা সবে মিলে করে পরামিশে ।
রথযাত্রা না হইতে এত লোক আসে ।।
আমাদের রথে কল্য মানুষ হবে না ।
বৈরাগীর রথে কল্য লোক ধরিবে না ।।
ভাল বলি বাসুদেবে দিলাম ফিরা’য়ে ।
এতেক স্পর্ধা তার বাদ হাটা মিলা’য়ে ।।
কল্য প্রাতে সবে মিলে গিয়ে তার বাড়ী ।
আর বার বাসুদেব ল’য়ে এস কাড়ি ।।
প্রভাতে সকল দ্বিজ ক্রোধভরে যায় ।
জোর করি বাসুদেব আনিল আলয় ।।
রামকান্ত বলে মম কি দোষ পাইলে ।
পরাণ পুতুলী বাসু কেড়ে নিয়ে গেলে ।।
রথে উঠাইয়া দেখিতাম বাসুরাজে ।
দেখিতাম বাসুদেব কি রকম সাজে ।।
বাসুরে লইয়া গেল আর লক্ষ্য নাই ।
লয়ে গেল বাসুরে জগার কাছে যাই ।।
অবশ্য যাইব আমি জগার নিকটে ।
দেখি সে বাসুর মত উঠে কিনা উঠে ।।
যাত্রা করে রামকান্ত ক্ষেত্র যাইবারে ।
পথে যেতে দৈববাণী হইল তাহারে ।।
ফিরে যাও রামকান্ত যাও নিজালয় ।
অবশ্য যাইব রথে মোরা দু’জনায় ।।
আমি যাব আর তব বাসুদেব যা’বে ।
দু’জনার রথযাত্রা দেখিবারে পাবে ।।
শুনে শান্ত রামকান্ত এল আখড়ায় ।
প্রেমে পুলকিত চিত নাচিয়া বেড়ায় ।।
হাসে কাঁদে নাচে গায় হাতে দিয়া তালি ।
ক্ষণে ক্ষণে লম্ফ দেয় দুই বাহু তুলি ।।
ডেকে বলে ভক্তগণে আমি ত দুর্ভাগা ।
তোমাদের ভক্তি-জোরে আসিবে সে জগা ।।
উৎকলেতে থাকে জগা বড়ই দয়াল ।
চলে না জগার রথ না গেলে কাঙ্গাল ।।
কাঙ্গালের বন্ধু জগা কাঙ্গালের বন্ধু ।
জগা বাসো এবার তরা’বে ভবসিন্ধু ।।
যাইতে ছিলাম ক্ষেত্রে জগারে আনিতে ।
পথ মাঝে দৈববাণী হইল দেবেতে ।।
জগা বাসো দুইজন উঠিবে সে রথে ।
দেখিব যুগলরূপ বাসনা মনেতে ।।
ব্রাহ্মণেরা শালগ্রাম উঠাইয়া রথে ।
রথযাত্রা নির্ব্বাহ করিত বিধিমতে ।।
অদ্য তারা বাসুদেবে রথে উঠাইয়া ।
নির্ব্বাহ করিল সুখে রথযাত্রা ক্রিয়া ।।
দ্বিজদের রথযাত্রা সকালে হইল ।
বৈকালে কান্তের রথে বাজার মিলিল ।।
বহুলোক সংঘটন হৈল সেই রথে ।
এত লোক হইল ধরেনা বাজারেতে ।।
খাদ্যবস্তু বাদ্যবস্তু শিল্প পুত্তলিকা ।
ক্রয় করে যুবা বৃদ্ধ বালক বালিকা ।।
কুম্ভকার মৃন্ময় পাত্র মৃন্ময় ছবি ।
চিত্র ঘট চিত্র পট চিত্র দেব দেবী ।।
কেনা বেচা হয় কত কে করে গণন ।
স্থানে স্থানে হয় হরিনাম সংকীর্ত্তন ।।
অপরাহ্ন হ’ল দিবা যামেক থাকিতে ।
ব্রাক্ষণেরা দেখে বাসুদেব নাই রথে ।।