Page: 139

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৩৯

না হ’লে এমন বোল কে পারে বলিতে।
তারকের গণ নৈলে চাহে কে ডুবিতে।।
নৌকা মধ্যে নামে মত্ত ছিল যত লোক।
সকলের মুখে শব্দ তারক তারক।।
মধ্যে ফাঁক করে দিল সকল তরণী।
তার মধ্যে জয়পুরে নৌকা নিল টানি।।
তারকের নৌকা এই বলিয়া গোঁসাই।
লম্ফ দিয়া বলে তারকের নৌকা বাই।।
পড়িয়া নৌকার মাঝে ভাসিয়া চলিল।
অক্রুর বিশ্বাস এসে লাফিয়া পড়িল।।
রাইচাঁদ নিবারণ বদন গোঁসাই।
গোলোকের পুত্র গিরি মথুর দু’ভাই।।
গোলোক ঠাকুর গিরি মথুরের পিতে।
ঈশ্বরাধিকারী সবে বসি একত্রেতে।।
নাম করে প্রেমাবেশে বড় নৌকা থেকে।
সিংহনাদ প্রায় ধ্বনি উঠে ঝোঁকে ঝোঁকে।।
বলিতে বলিতে হরি নৃত্য গীত রসে।
বর্ণির খালের মধ্যে সব নৌকা পশে।।
যাহারা বিদেশী নৌকা সঙ্গে এসেছিল।
ছাড়িয়া কতক নৌকা বড় নদী গেল।।
নিজ নিজ স্থানে যায় কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে।
কেহ কেহ সঙ্গে রৈল প্রেমে মত্ত হ’য়ে।।
লোক ভিড় জয়পুরে নৌকার উপরে।
গায় গায় লোক ফাঁক নাহি ডালি জুড়ে।।
ঊর্ধ্ব সংখ্যা ধরে নায় বিশ ত্রিশ জন।
নৌকার উপরে লোক ঊনত্রিশ জন।।
তার মধ্যে গোস্বামী উল্লম্ফন করিছে।
নৌকা হ’তে কেহ কেহ কিনারে পড়েছে।।
নায় নায় যোড়াযোড়ি ক্ষণে লাগে তটে।
কিনারার লোক গিয়া নৌকাপরে উঠে।।
গোস্বামী গোলোক গিয়া পড়েন কিনারে।
ফিরে লম্ফ দিয়া পড়ে নৌকার উপরে।।
নৌকায় যত মানুষ ছিলেন বসিয়া।
মাথার উপর দিয়া পড়েছে লাফিয়া।।
কূল হ’তে পড়ে এসে বড় নৌকা মাঝ।
দুইবার দেখা গেল পাছে আছে ল্যাজ।।
আঙ্গুল পাছায় লম্বা আট নয় হাত।
শরীর প্রমাণ লম্বা তের চৌদ্দ হাত।।
গোলোক কীর্তনিয়া ঈশ্বরাধিকারী।
ভক্তি ভয় আনন্দে সকলে বলে হরি।।
তালুকের মহেশচন্দ্র শ্রীহরি পোদ্দার।
আড়ঙ্গ বৈরাগী মহানন্দ কোটিশ্বর।।
এমত অনেক ভক্ত দেখে চমৎকার।
ধুমকেতু তারা তুল্য লেজের আকার।।
এমত আশ্চর্য কার্য দেখে সব নরে।
জয় হরি গৌর হরি বলে উচ্চৈঃস্বরে।।
পড়িল গোস্বামী গিয়া কূলের উপর।
রাখালেরা হরি বলে শুনিতে সুন্দর।।
মিশিল গোঁসাই সব রাখালের সঙ্গে।
জয় জয় হরিধ্বনি দিতেছেন রঙ্গে।।
পাগলের লীলাখেলা বড় চমৎকার।
বিরচিল কবি চূড়ামণি সরকার।।


রাখালসঙ্গে গোস্বামীর তিলবনে নৃত্য।

পয়ার।

নাচে গায় রাখালেরা বলে হরিবোল।
নেচেছে গোস্বামী যেন উন্মত্ত পাগল।।
এক এক বার প্রভু উঠেন নৌকায়।
তখন রাখাল হয় পাগলের প্রায়।।
কহে কেহ বলে ভাই পাগল কোথায়।
কোথা গেল বলে কেহ খুঁজিয়া বেড়ায়।।
যখনে সকলে হয় শোকাকুল মন।
তখন পাগল এসে দেন দরশন।।
আসিয়া গোঁসাই কহে ওরে রাখালেরা।
বল বল হরি বল হে দেরে শালারা।।
রাখালেরা বলে যাহা বল তাতে রাজি।
গো-রাখাল বলে ফেলে যেওনা বাবাজী।।
রাখালের সঙ্গে সঙ্গে পাগল গোঁসাই।
হুঙ্কারিয়া নাচে আনন্দের সীমা নাই।।
নাচিতে নাচিতে হরি হরি বলে কাঁদে।
গোস্বামী হুঙ্কার ছাড়ি ডাকে হরিচাঁদে।।
কেঁদে কেঁদে তিল বনে লুকাল গোঁসাই।
অন্বেষণ করি ফিরে রাখাল সবাই।।
কোথা গেল কোথা গেল রাখালের রব।
পেলেম বা কারে তারে হারাইনু সব।।
সকল রাখাল মিলে খুঁজে বনে বন।
সবে মিলে তিল বন করে অন্বেষণ।।
তিল তিল অন্বেষণ করিয়া না পায়।
তাহাতে তিলের চারা গাছ ভেঙ্গে যায়।।