Page: 200

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২০০

হেন হেন মহাজন এই বংশে রয়।
এই বংশে রামতনু সাধু অতিশয়।।
জনমিয়া নারীসঙ্গ না করেন তিনি।
বিবাহ করেছে মাত্র স্পর্শে না রমণী।।
ঠাকুরানী মনে করে পুত্রের কামনা।
সাধু বলে স্ত্রী ক্রিয়া করিতে পারিব না।।
ঠাকুরানী ওঢ়াকাঁদি যাইয়া বলিল।
একটি পুত্রের মম কামনা রহিল।।
ঠাকুর বলেন আমি পারি না বলিতে।
যে লোকের মন নাই স্ত্রীসঙ্গ করিতে।।
স্ত্রীসঙ্গ করিতে যার নাহি লয় মন।
তাহাকে কেমনে বলি হেন কুবচন।।
তবে যদি সাধ কর পুত্র কামনায়।
থাকগে নির্জনে রামতনুর সেবায়।।
নিদ্রা না যাইয়া যদি থাকিবারে পার।
এক পুত্র হ’বে তব দিলাম এ বর।।
পঞ্চ বর্ষ নিশিদিনে অনিদ্রিতা র’য়ে।
তনুর চরণ পার্শ্বে রাত্রিতে বসিয়ে।।
পতি প্রতি রতি মতি প্রীতি অতিশয়।
পুত্রেষ্টি যজ্ঞের ফল তাতে পাওয়া যায়।।
শুনিয়াছি শতানন্দ অস্তিকের জন্ম।
পুত্র পাবে কর যদি সেইরূপ কর্ম।।
তবে তব পুত্র হবে বিনা সঙ্গমেতে।
বাঞ্ছাপূর্ণ হবে তব সেই পুত্র হ’তে।।
একদিন রামতনু গেল ওঢ়াকাঁদি।
ঠাকুর বলেন রামতনু শুন বিধি।।
তব নারী করে এক পুত্র আকিঞ্চন।
আমি কহিয়াছি এক নিগুঢ় কারণ।।
পঞ্চ বৎসরের মধ্যে নিদ্রা নাহি যাবে।
বিনা সঙ্গমেতে এক সন্তান জন্মিবে।।
পঞ্চবর্ষ পূর্ণ হ’লে কনিষ্ঠ অঙ্গুলি।
নাভি পদ্মে স্পর্শ কর কর্ণ কর্ণ বলি।।
তা হ’লে ঠাকুরানীর বাঞ্ছা হবে পূর্ণ।
সেই পুত্র হ’লে তার নাম রেখ কর্ণ।।
রামতনু শস্যাদির শীল রাখিতেন।
মাঠে গিয়া ফুঁক দিয়া শিঙ্গা বাজাতেন।।
একা গিয়া ধান কিংবা তিলের ডাঙ্গায়।
শীল যেন নাহি পড়ে বলিত তথায়।।
আমার মহান মধ্যে ধান আর তিল।
এর মধ্যে ইন্দ্রবেদ না ফেলিও শীল।।
এতবলি শিঙ্গা ধরি ধ্বনি দিত তায়।
পড়িত না শীল হরিচাঁদের আজ্ঞায়।।
হেন সাধু ঠাকুরের আজ্ঞামাত্র রাখে।
পাদ পার্শ্বে নারী বসা সাধু শুয়ে থাকে।।
পঞ্চবর্ষ পরিপূর্ণ হইল যখনে।
নাভিতে অমৃতাঙ্গুলি স্পর্শিল তখনে।।
সেই হ’তে ভাগ্যবতী পুত্রবতী হ’ল।
বিনা রমণেতে এক পুত্র জনমিল।।
সেইত পুত্রের নাম রাখে কর্ণধর।
রচিল তারকচন্দ্র কবি সরকার।।


দেবী তীর্থমণির উপাখ্যান

পয়ার

রামকৃষ্ণ চারি পুত্র জ্যেষ্ঠ মহানন্দ।
শ্রীকুঞ্জবিহারী রাসবিহারী আনন্দ।।
রামকৃষ্ণ অনুজ শ্রীরামনারায়ণ।
তার হ’ল পঞ্চপুত্র হরি পরায়ণ।।
নামে মত্ত বালা বংশ কৃষ্ণপুর গ্রামে।
সাধু কোটিশ্বর আর ধনঞ্জয় নামে।।
মতুয়া হইল সবে বলে হরি বলা।
স্বজাতি সমাজে বাদ র’ল যত বালা।।
তাহারা বলেন মোরা শঙ্কা করি কায়।
হরিনাম ত্যজিব কি স্বজাতির ভয়।।
হরিবলে কেন হীনবীর্য হ’য়ে রব।
সমাজিতে ত্যজ্য করে হরিবোলা হ’ব।।
মাতিয়াছি মহাপ্রভু হরিচাঁদ নামে।
নমঃশূদ্র তুচ্ছ কথা ডরি না সে যমে।।
বাবা হরিচাঁদের করুণা যদি হয়।
বালাবংশ কুলমান কিছুই না চায়।।
হরি প্রেম বন্যা এসে কূল গেছে ভেসে।
জাতি মোরা হরিবোলা আর জাতি কিসে।।
সাধুর ভগিনী ধনী তীর্থমণি কয়।
তিনি কন হরিবোলা কারে করে ভয়।।
মাতিল পুরুষ নারী ভয় নাই মনে।
অভক্তের ভয় কিসে মানিনে শমনে।।
অন্যে বলে জাতিনাশা আরো দর্প করে।
পাষণ্ডীরা ম’তোদিগে যায় মারিবারে।।
তাহা শুনি তীর্থমণি রাগে হুতাশন।
বলে আমি দলিব সে পাষণ্ডীর গণ।।