Page: 180

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৮০

অতিরিক্ত মূল্য তারা দুই আনা নিল।
হাটে গিয়া খোদার নামেতে লুঠ দিল।।
গোস্বামীর নৌকা মেরামত করিবারে।
নৌকাখান উঠাইল নদীর কিনারে।।
তারক আনিয়া নৌকা দিল ধৌত করি।
পরিষ্কার করে তরী বলে হরি হরি।।
ধর্মনারায়ণ পুত্র ঈশান নামেতে।
নৌকা ধৌত করে তারকের সাথে সাথে।।
পাড়িল গাছের ডাব ঢেঁকিতে কুটিল।
তারক ঈশান দোঁহে রস বানাইল।।
সেই রস করিবারে নৌকায় লেপন।
তারক গাবের হাঁড়ি আনিল যখন।।
লোচন কহিছে ওহে তারক থাকহ।
অন্যে দিয়া গাব দিব তুমি রহ রহ।।
গাওনি করিল নৌকা ডাকি ঈশানেরে।
গাব দিতে পাইলেন হৃদয়নাথেরে।।
গোঁসাই দয়াল বড় অভিমান শূন্য।
সে হৃদয়নাথের অবস্থা বড় দৈন্য।।
দুইদিন গাব দিল মেরামত করি।
তৃতীয় দিবসে জলে ভাসাইল তরী।।
তারপর ডাকাইল হৃদয়নাথেরে।
নৌকা মেরামত মূল্য দিব যে তোমারে।।
চারি টাকা দিল তারে নিল সে যতনে।
তারক বলেরে হৃদে এত নিলি কেনে।।
হৃদয় বলিল গোস্বামীর পদ ধরি।
এই টাকা দেহ কেন মনে শঙ্কা করি।।
দুইদিন খাটিয়াছি পাব অর্ধ টঙ্কা।
চারি টাকা নিতে প্রভু মনে করি শঙ্কা।।
গোস্বামী বলেন আমি ভিক্ষা করি খাই।
পুঁজিকরে খেতে দিব হেন কেহ নাই।।
দীন জনে দিব দান এই মোর মন।
নীরু ভীরু লোক মোর পুত্র পরিজন।।
আমি দেই দয়া করে নেও হ’য়ে রাজি।
এই টাকা দিয়া কর ব্যবসার পুঁজি।।
তারক নীরব হ’ল সে কথা শুনিয়া।
হৃদয় লইল টাকা সন্তুষ্ট হইয়া।।
ভিক্ষার তণ্ডুল বিক্রি করিতে করিতে।
ক্রমে চৌদ্দ টাকা হ’ল গোস্বামীর হাতে।।
তারকের নিকটে কহিছে বারে বারে।
এই টাকা দিয়া আমি তোষিব কাহারে।।
একদিন সেই চৌদ্দ টাকা ল’য়ে সাথে।
নৌকাবাহি গেল লক্ষ্মীপাশা বাজারেতে।।
রাধামণি নামে ছিল বৃদ্ধা এক বেশ্যা।
দিন পাত নাহি চলে না চলে ব্যবসা।।
গোস্বামী যাইয়া সেই গৃহেতে প্রবেশে।
হেসে হেসে কহে তারে মৃদু মৃদু ভাষে।।
একেবারে বৃদ্ধা নয় এমতি বয়স।
বৃদ্ধামধ্যে গণ্য হয় প্রৌঢ়ার যে শেষ।।
রাধামণি বাহিরেতে ছিল কার্যান্তরে।
বারে বারে ডাকে তারে শীঘ্র আয় ঘরে।।
রাধামণি যেই গেল গৃহের মাঝেতে।
সেই চৌদ্দ টাকা দিল রাধামণি হাতে।।
রাধামণি ভীত হ’য়ে বাহিরেতে গিয়ে।
নৃত্যমণি বেশ্যাস্থানে বলিল ডাকিয়ে।।
নৃত্যমণি সেই টাকা গোস্বামীকে দিল।
গোঁসাই বিরস মনে ফিরিয়া আসিল।।
লোচন আনিয়া টাকা দিল তারকেরে।
পরদিন নৃত্যমণি আসিয়া বাজারে।।
তারকেরে দেখে বলে গোপনেতে ডাকি।
কেমন গোঁসাই তব মোরে বল দেখি।
যারে তারে ভকতি করেন মহাশয়।
আমাদের তত বড় বিশ্বাস না হয়।।
রাধামণি বৃদ্ধা মাগী তার ঘরে এসে।
চৌদ্দ টাকা সাধে আর মৃদু মৃদু হাসে।।
বলে তোর এখনে ত নাহিক যৌবন।
তোর দশা মোর দশা সমান এখন।।
তুই বৃদ্ধা কি কারণ থাকিস বাজারে।
আমি রোগী ভিক্ষামাগি নগরে নগরে।।
অর্থহেতু অনর্থের কিবা প্রয়োজন।
তোর ভাল হবে তুই মোর কথা শোন।।
তারক শুনিয়া তাই নৃত্যকে বলিছে।
এ কথার মধ্যে কিবা দোষ কথা আছে।।
টাকা যদি সাধিবেন কাম ব্যবহারে।
কেন টাকা সাধিল না যুবতী নারীরে।।
রূপবতী বেশ্যা কত আছে ত বাজারে।
কেন বা না গেল সাধু তার এক ঘরে।।
রূপ নাই গুণ নাই প্রৌঢ়া শেষ বৃদ্ধা।
এটুকু বুঝিয়া দেখ কোনভাবে শ্রদ্ধা।।
তাহা শুনি নৃত্যমণি গলে বাস দিয়া।
বলে অপরাধ ক্ষম সাধুকে আনিয়া।।