Page: 096

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৯৬
নিত্যানন্দ জ্যেষ্ঠা কন্যা নামে কলাবতী।
চণ্ডীচরণের নারি অতি সাধ্বী সতী।।
পদুমা নিবাসী রামমোহন মল্লিক।
তাহার তনয় চণ্ডীচরণ নৈষ্ঠিক।।
নিত্যানন্দের আর এক কন্যা রসবতী।
মৃত্যুঞ্জয়ের কনিষ্ঠা অতি সাধ্বী সতী।।
গোবিন্দ মতুয়া প্রভু ভক্ত শিরোমণি।
রসবতী সতী হয় তাহার ঘরণী।।
অষ্ট সাত্ত্বিক বিকারী গোবিন্দ মতুয়া।
হরিনাম করিতেন নাচিয়া নাচিয়া।।
প্রভাতী গাইত যবে প্রভাত সময়।
শুনিয়া সবার চিত্ত হ’ত দ্রবময়।।
গোগৃহে থাকিত গরু ঊর্ধ্ব মুখ চেয়ে।
নয়ন জলেতে তারা যাইত ভাসিয়ে।।
পক্ষীগণ এসে সব উড়িয়া পড়িত।
বৃক্ষপরে পক্ষীগণ বসিয়া শুনিত।।
পক্ষী সব দিত স্বর গানের স্বরেতে।
জ্ঞান হ’ত পক্ষী গান করে সাথে সাথে।।
ভাস্কর উঠিলে শেষে গান ভঙ্গ হ’ত।
পক্ষীগণ চিঁ চিঁ কুচি রবে উড়ে যেত।।
হেন-ই গায়ক ছিল গোবিন্দ মতুয়া।
নাচিত কীর্তনমাঝে যেমন নাটুয়া।।
রসবতী সতীর কনিষ্ঠা সহোদরা।
সাধ্বী সতী সুকেশা সুন্দরী মধুস্বরা।।
সবার কনিষ্ঠা ধনী জানকী নামেতে।
তার বিয়া হ’ল গৌরচন্দ্রের সঙ্গেতে।।
শ্রাবণ মাসেতে বিকশিতা কৃষ্ণকলি।
ফুল দেখে জানকী হইল কুতূহলী।।
ভেবেছেন এই ফুল গেঁথে বিনাসুতে।
এ হার দিতাম হরিচাঁদের গলেতে।।
এমত জানকী দেবী মনেতে ভাবিয়া।
ফুলপানে এক দৃষ্টে রহিল চাহিয়া।।
দেখে ফুল প্রাণাকুল হ’লে উত্তরাক্ষ।
চক্ষের জলেতে তার ভেসে যায় বক্ষ।।
অবসন্নমনা ফুল কাছে উপনীত।
মনে মনে কহে ফুল কেন বিকশিত।।
প্রভু এলে তুই যদি বিকশিতা হ’তি।
তা’হলে প্রভুর গলে যাইতে পারিতি।।
অদ্য বিকশিত হ’লি কল্য হ’বি বাসি।
ঝরিয়া পড়িবি তুই জলে যাবি ভাসি।।
পুস্পপানে চেয়ে র’ল না পালটে আঁখি।
পিছে হাঁটি পিছাইয়া চলিল জানকী।।
ঘরের পিড়ির প’র বসিল তখনে।
আত্ম হারাইয়া চেয়ে আছে ফুল পানে।।
তথা বসি মনে মনে গাঁথিলেন হার।
ধবল লোহিত ফুল হরিদ্রা আকার।।
তিন বর্ণে ফুল তুলে বর্ণে বর্ণে গাঁথি।
থরে থরে গাঁথনি করিল সাধ্বী সতী।।
চারি চারি সাদা ফুল চারি চারি লাল।
চারিটি হরিদ্রা ফুলে করিয়া মিশাল।।
এইভাবে পুস্পহার করিয়া গ্রন্থন।
প্রভুর শ্রীকণ্ঠে দিল করিয়া যতন।।
হরিচাঁদে ফুলসাজে সাজিয়া জানকী।
মনোহর রূপ দেখে অনিমেশ আঁখি।।
আরোপে শ্রীরূপ দেখে স্পন্দহীনা রয়।
ঠিক যেন ধ্যান ধরা যোগিনীর ন্যায়।।
প্রহরেক কালগত এরূপে বসিয়া।
এইভাবে একেশ্বরী আছেন চাহিয়া।।
মৃত্যুঞ্জয় গিয়াছিল দক্ষিণ পাড়ায়।
এসে গৃহে এইভাব দেখিবারে পায়।।
সম্বোধিয়া কহে মৃত্যুঞ্জয়ের রমণী।
প্রহরেক এইভাবে তোমার ভগিনী।।
অঙ্গের স্পন্দন নাহি শ্বাস আছে মাত্র।
চক্ষের নিমিষ নাহি যেন শিবনেত্র।।
দক্ষিণাভিমুখ ছিল দণ্ড চারি ছয়।
উত্তরাভিমুখ এই দণ্ড দুই হয়।।
আহারান্তে ননদিনী ছিলেন শয়নে।
নিদ্রাভঙ্গে গিয়াছিল ফুলের বাগানে।।
বিকশিতা কৃষ্ণকলি দেখিল চাহিয়া।
ফিরে না আসিল গৃহে এল পিছাইয়া।।
জানকীর সেই ভাব মৃত্যুঞ্জয় দেখি।
উচ্চঃস্বরে ডাকে তারে জানকী জানকী।।
চিৎকার ঈষৎ মাত্র শুনিল জানকী।
জ্ঞান নাই অঙ্গে মাত্র দিল এক ঝাঁকি।।
এক ডাক দুই ডাক তিন ডাক দেয়।
তিনবার অঙ্গ কম্প যোগ ভঙ্গ নয়।।
সুভদ্রা কহিছে ডেকনারে মৃত্যুঞ্জয়।
এ যেন কৃষ্ণ আরোপ হেন জ্ঞান হয়।।
মৃত্যুঞ্জয় জানকীকে কহে কাঁদি কাঁদি।
জানকীরে দেখ আমি যাই ওঢ়াকাঁদি।।