Page: 052

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৫২

উপায় নাহিক আর অন্ন নাহি পায়।
অন্ন বিনে দৈন্য দশা জীর্ণ শীর্ণ কায়।।
ব্রাহ্মনী কহিছে এবে উপায় কি করি।
অন্নকষ্টে ইচ্ছা হয় ফাঁসী ল’য়ে মরি।।
ব্রাহ্মণ কহিছে তবে ব্রাহ্মণীর ঠাই।
তিষ্ঠ তিষ্ঠ অদ্য আমি ভিক্ষা লাগি যাই।।
যদি ভিক্ষা নাই পাই মরিব পরাণে।
শেষে তুমি প্রাণ ত্যাজ মম মৃত্যু শুনে।।
এত বলি দস্যু কাননেতে চলে গেল।
গলে ফাঁস ল’য়ে দ্বিজ ঝুলিতে লাগিল।।
তাহা দেখি রাজদূত ফিরাইয়া আনে।
ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণী দোহে দিল রাজা স্থানে।।
হুকুম হইল এরা সাত দিন তরে।
বন্ধিভাবে থাকিবেক রাজ কারাগারে।।
আর সাতদিন এরা বাটিতে থাকিবে।
রাজদূত সঙ্গে করি ভিক্ষা মেগে খাবে।।
এই ভাবে কষ্ট করে কালের হরণ।
জীয়ন্তে মরণ সম না হয় মরণ।।
কাঞ্চিগ্রামে এক বিপ্র বৈষ্ণব সুজন।
লীলাজী বলিয়া নাম প্রেম মহাজন।।
সেই গ্রামে বৈশ্য সাধু এক সদাগর।
সাধু বৈষ্ণবের সেবা করে নিরন্তর।।
বৈশ্য সাধু বাড়ী সাধু আসে আর যায়।
অন্য ঠাই ভ্রমি আসে সাধুর আলয়।।
সাধু বৈশ্য বৈষ্ণব সেবায় মন কৈল।
শত শিষ্য সঙ্গে করি লীলাজী চলিল।।
দস্যু দুষ্ট বৃদ্ধ দ্বিজ ভেবেছেন মনে।
এ সব লোকেরে সাধু খেতে দেয় কেনে।।
পায়স পিষ্টক ঘৃত দুগ্ধাদি শাল্যণ্য।
লুচি পুরী ছানা দধি জল পান জন্য।
মালা ল’য়ে সাধু হ’য়ে অঙ্গে করে ফোঁটা।
কি বুঝিয়া খেতে দেয় সদাগর বেটা।।
এবে আমি সাধু হয়ে ভুলাইব লোক।
ভিক্ষা করি খেতে পা’ব পরিয়া তিলক।।
লীলাজী যাইতে পথে দস্যু ধরে পায়।
বলে প্রভু এক ছড়া মালা দেও আমায়।।
লীলাজী বলেন তোর মালাতে কি কাজ।
দস্যু বলে সাধু হ’ব ল’ব সাধু সাজ।।
হাসিয়া দিলেন সাধু এক খন্ড মালা।
ব্রাহ্মণ বলেন মোর গেল ভব জ্বালা।।
মালাটি লইয়া গেলে লইলেন ফোঁটা।
চুল ফিরাইয়া মাথে বাঁধে উভ ঝুটা।।
হরি হরি বলি ছাড়ে ঘন ঘন ডাক।
সদাগর ভবনেতে দিল গিয়া হাক।।
সদাগর ভাবিলেন দস্যু এ ব্রাহ্মণ।
এর যদি হ’য়ে থাকে হরিনামে মন।।
বেশী করি সমাদর করিবে উহারে।
তাতে যদি দস্যুবৃত্তি হ’তে মন ফিরে।।
সেবা শুশ্রূষাদি বহু মতে তারে কৈল।
তাহাতে দস্যুর আরো গাঢ় ভক্তি হৈল।।
ভাবে মনে বহু দিন করি দস্যুবৃত্তি।
এই মত খেতে দিয়া কেবা করে ভক্তি।।
অন্নাভাবে দুটা ভাত খাইবার লাগি।
ভাব ধরে হইয়াছি কপট বৈরাগী।।
তাহাতে না খেতে মেলে কহন না যায়।
প্রকৃত বৈরাগী হ’লে আরো কিবা হয়।।
অন্বেষী কাঁচের পাত্র প্রাপ্ত হৈনু সোনা।
সাধুপদরজ বাঞ্ছে তারক রসনা।।


দস্যুর দীক্ষা গ্রহণ।

পয়ার।

লীলাজীর কাছে গিয়া কেঁদে কেঁদে কয়।
প্রভু মোরে শিষ্য করি দেহ পদাশ্রয়।।
লীলাজী তাহাকে দিল কৃষ্ণ মন্ত্র দীক্ষে।
বলে আমি হরি বলে মেগে খাব ভিক্ষে।।
সদাগর ভবনেতে ছিল যে বৈষ্ণব।
হরি হরি বলে উঠে নৃত্য করে সব।।
সবে বলে চেয়ে দেখ বৈষ্ণবের গণ।
বৈষ্ণব হইয়া গেল এ দস্যু ব্রাহ্মণ।।
সদাগর ভাবে ডাকাইত এ ব্রাহ্মণ।
দায় ঠেকে হরি বলে পাইতে ভোজন।।
অধিকাংশ ধন দিলে বলিবেক হরি।
খেতে পেলে আর নাহি করিবেক চুরি।।
এত ভাবি সদাগর তারে দিল ধন।
রজত সহস্রমুদ্রা করিল অর্পণ।।
আশাতীত ধন পেয়ে আনন্দ বাড়িল।
দৃঢ় করে ব্রাহ্মণ বলিছে হরি বল।।
ধন লয়ে ভক্ত হ’য়ে দ্বিজ গেল বাড়ী।
ব্রাহ্মনীকে কহে পূর্ব্ব বুদ্ধি দিনু ছাড়ি।।