Page: 039
শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৩৯
গিয়া বৃন্দাবন বাসে, ভ্রমণ চৌরাশী ক্রোশে
বেল ভাণ্ডি তমালের বন।
বন ভ্রমি একে একে, গন্ধরাজ শেফালিকে
তালতরু দেখে হৈল মন।।
বসি তালতরু মূলে, ভেসেছে নয়ন জলে
হরি বলে কাঁদি উচ্চৈঃস্বরে।
আমি শক্তি কৃষ্ণাঙ্গিনি, ভাগবত শাস্ত্র মুনি
লেখ তুমি মম বক্ষঃ পরে।।
দেখে পরাশর পুত্র, পড়িতেছে তালপত্র
তালপত্রে কহে মুনিবর।
যাহ শ্রীকৃষ্ণের ঠাই, বলগে বলেছে রাই
শিরে শিখিপাখা দিতে মোরে।।
ব্যাস অতি ব্যস্ত হ’য়ে, শ্যামকুণ্ড তীরে গিয়ে
করেছেন কৃষ্ণ আরাধন।
যুগল মিলন হ’য়ে, ব্যাসের সম্মুখে গিয়ে
রাধা কৃষ্ণ দিল দরশন।।
বলেছেন শ্রীরাধিকে, যা লিখিবে মম বুকে
অন্য কলমে তা কি হয়।
শুনিয়া রাধার বাণী, রাধানাথ রসখনি
শিখিপাখা দিলেন তাহায়।।
শিখিপুচ্ছ অংশ করি, ব্যাসেরে দিলেন হরি
হাসিয়া বলে রাধানাথ।
যাহা অনন্ত গোচরে, জিহ্বা সে দিবে তোমারে
তাহাতে না কর অস্ত্রাঘাত।।
উদয় ক্ষীরোদ কূলে, তপ করে হরি বলে
হরি ছিল অনন্ত শয়নে।
ফণা এক কোন হ’তে, এক জিহ্বা হৈল তাতে
এনে দিল ব্যাসমুনি স্থানে।।
বলীকে ছলিতে হরি, নাভি হ’তে পদতরী
বাহির করিল যে প্রকার।
তেমনি অনন্ত ফণা, জিহ্বাকণা এককণা
প্রকাশিল ক্ষীরোদ ঈশ্বর।।
কলম কালি সহিত, সুচিক্কণ মনোগীত
মিশ্রিত করিলা শিখিপুচ্ছে।
বাসুদেব নন্দসুত, ঘন সৌদামিনীবৎ
অঙ্গে অঙ্গ মিশ্রিতায় যৈছে।।
তেমনি মিশ্রিত হ’ল, কলম আনিয়া দিল
গণেশের কলম করেতে।
মসী নীল সরস্বতী, মস্যাধারে শ্বেত সতী
গণপতি লাগিল লিখিতে।।
ব্যাসের মুখ নিঃসৃত, গণেশের নিজ হস্ত
লিখিল ভারত ভাগবত।
আমি অতি অভাজন, হীন সাধন ভজন
বিদ্যাহীন না জানি সংস্কৃত।।
ত্রেতাযুগে সেতুবন্ধে, ভল্লুক বানরবৃন্দে
বড়বৃক্ষ আনে বড় বীরে।
বড় বড় যে পর্বত, বানরেরা আনে কত
হনুমান লোমে বন্ধি করে।।
রামকার্য করিবারে, ব্যস্ত ভল্লুক বানরে
কাষ্ঠ বিড়ালের হৈল মন।
পড়িয়া সমুদ্র নীরে, গড়াগড়ি দিয়া তীরে
সেতুবন্ধ উপরে গমন।।
মনে মনে বিবেচনা, শ্রীপদে পাবে বেদনা
বালি দিলে খাদ পূর্ণ হয়।
পন্থা হয় সুকোমল, যতেক কাষ্ঠ বিড়াল
কার্য করে সাধ্য অনুযায়।।
সেইমত লিখি পুঁথি, হরিচাঁদ লীলাগীতি
রামকার্য মাজ্জারের ন্যায়।
আমি অজ্ঞ নাহি যোগ্য, মার্জার হ’তে অযোগ্য
হরিলীলা মহাযোগ্য প্রায়।।
সজ্জনের দয়াগুণ, হরিচাঁদ লীলাগুণ
প্রকাশিয়া সে গুণ গাওয়ায়।
যদ্যপি লেখনী ধরি, বলি এ বিনয় করি
শ্রোতাগণ মহাজন পায়।।
শ্রোতাগণ হংসবৎ, দোষ ছাড়ি গুণ যত
দুগ্ধবৎ করুণ গ্রহণ।
হরিলীলামৃত কথা, তেমনি করি মমতা
কর্ণপথে পিও সর্বজন।।
হরিলীলা শ্রবণেতে, ভবসিন্ধু পারে যেতে
পাতকীর নাহি আর ভয়।
ঘুচিবে শমন শঙ্কা, হরিনামে মার ডঙ্কা
ধর পাড়ি ভাস ঐ নায়।।
দশরথ হীরামন, মহানন্দ শ্রীলোচন
রামকান্ত যশোমন্ত পদে।
গুরুচাঁদ কৃপালেশ, গোলোক নৃসিংহ বেশ
তারক রচকাভয় সাধে।।