Page: 229

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২২৯
গোলক বিহারী হরিপুত্র রূপ হ’ল।
দেখিবারে দেবগণে কৈলাসেতে এল।।
শঙ্করের পুত্র হ’ল শঙ্কট ভঞ্জন।
বাঞ্ছাপূর্ণকারী হরি জগৎ রঞ্জন।।
ভবের আরাধ্য পুত্র পাইল ভবানী।
সকলে দেখিল কিন্তু আসিল না শনি।।
সে কারণে মহাদেবী মনে হ’ল রোষ।
হেন পুত্র পাইলাম শনি অসন্তোষ।।
তাহা শুনি শনি যায় তাহাকে দেখিতে।
তার নারী ঋতুমতী ছিল সে দিনেতে।।
শনির রমণী কয় আমি ঋতুমতী।
ঋতু রক্ষা সময় হ’য়েছে কর রতি।।
শনি কহে যাব আমি কৈলাস পর্বতে।
হরি হন দুর্গা সুত তাহাকে দেখিতে।।
হেনকালে রতি! রতি না পারি করিতে।
বিশেষতঃ মাতা দুঃখী আমি না দেখা’তে।।
দেখিব গোলকনাথে পার্বতীর কোলে।
না করিব রতিক্রিয়া হেন যাত্রাকালে।।
এতবলি শনৈশ্চর করিল গমন।
শনির রমণী স্নান করিল তখন।।
ঋতু রক্ষা না করিয়া যাইবা যথায়।
যারে দেখ তার যেন মুণ্ড খ’সে যায়।।
রাগে রাগে গেল শনি ক্রোধ ছিল মনে।
রমণীর প্রতি ক্রোধ ছিল যে তখনে।।
ক্রোধভরে যায় শনি শিবের ভবন।
অই ক্রোধে পার্বতীর পুত্রকে দর্শন।।
মুণ্ড খণ্ড হ’য়ে গেল গণ্ডকী পর্বতে।
কীটরূপে শনি যায় মুণ্ড সাথে সাথে।।
কীটেতে পর্বত কাটে খণ্ড খণ্ড শীলে।
খণ্ড শিলা পড়ে গণ্ডকী নদীর জলে।।
চক্র বিশেষতে তায় হয় শালগ্রাম।
শালগ্রাম রূপেতে গোলোকনাথ শ্যাম।।
যদ্যপিও এই ভাব জাগে কারু মনে।
গোলোক নাথের মুণ্ড খ’সে গেল কেনে।।
একেত শনির নারী তাহার কোপেতে।
আর ত শনির দৃষ্টি হইল তাহাতে।।
তার মধ্যে আরো আছে পূর্বের ঘটনা।
প্রভু বুঝে হরিভক্তের মনের বাসনা।।
ভগবানের কাজ এই এক কার্য হ’তে।
স্বয়ং এর কত কাজ ঘটে সে কাজেতে।।
ব্রহ্মলোকে যাইয়া দুর্বাসা মুনিবর।
পারিজাত মালা পাইলেন উপহার।।
ব্রহ্মা বলে এই মালা যার গলে দিবে।
অগ্র পূজনীয় সেই হইবেক ভবে।।
পেয়ে হার মুনিবর ভাবে মনে মন।
এই মালা মম গলে না হয় শোভন।।
বনে থাকি বনফল করি যে আহার।
তপস্বীর কভু নাহি সাজে এই হার।।
এত ভাবি হার দিল ইন্দ্রদেবরাজে।
অহংকারে মত্ত ইন্দ্র মালা দিল গজে।।
গজের গলায় মালা বাঁধাইয়া শুণ্ড।
ছিঁড়িয়া গলার হার করে খণ্ড খণ্ড।।
ছেঁড়া হার পথে দেখি কুপিল দুর্বাসা।
ধ্যানস্থ হইয়া সব জানিল দুর্দশা।।
মুনিবর মনেতে পাইল বড় কষ্ট।
ইন্দ্রকে দিলেন শাপ হও লক্ষ্মীভ্রষ্ট।।
মালার মাহাত্ম্য আছে যে পরিবে গলে।
অগ্রপূজ্য হবে সেই ব্রহ্মাদেব বলে।।
ভবানীর পুত্র খণ্ড হ’ল যেইকালে।
চিন্তান্বিত হ’ল বড় দেবতা সকলে।।
নন্দীকে দিলেন আজ্ঞা শীঘ্র চলে যাও।
উত্তর শিয়রী যারে শয়নেতে পাও।।
কাটিয়া তাহার মুণ্ড আনিবা ত্বরায়।
সেই মুণ্ড জোড়া দিব পুত্রের গলায়।।
নন্দী গিয়া শ্বেতকরী শয়ন দেখিল।
উত্তর শিয়রী দেখি সে মুণ্ড ছেদিল।।
সেই মুণ্ড দেবগণ ধরি সকলেতে।
স্কন্ধে লাগাইয়া দিল শৈল সুতা সুতে।।
ভগবান পুত্র হ’ল জনক মহেশ।
গজানন গণশ্রেষ্ঠ নাম যে গণেশ।।
হেনপুত্র কোলে নিয়া বসিল ভবানী।
জন্ম-মৃত্যুহরা তারা গণেশ জননী।।
আর এক আছে তার দৈবের ঘটনা।
শঙ্খচূড় দৈত্য করে দেবতা তাড়না।।
দৈত্য ভয়ে ভীত সব দেবতা হইল।
দেবতার সঙ্গে শিব যুদ্ধেতে চলিল।।
সপ্ত রাত্রি সপ্তদিন যুদ্ধ করে ভোলা।
যুদ্ধকরে শঙ্খাসুরে জিনিতে নারিলা।।
দেবগণ স্তব করে বিষ্ণুর সদন।
কর প্রভু তুলসীর সতীত্ব ভঞ্জন।।