Page: 146

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৪৬

গুরুমাতা পাগলের পাগলাই হেরি।
করযোড়ে দাঁড়াইয়া বলে হরি হরি।।
সন্ধ্যার পরেতে রাত্রি হ’ল দুই দণ্ড।
এমন সময় মেঘ হইল প্রচণ্ড।
আইল প্রবল বৃষ্টি হ’ল দণ্ড চারি।
পাগল বাদল মধ্যে বলে হরি হরি।।
একবার ঘরে যায় হরিবোল দিয়া।
একবার বৃষ্টি মধ্যে পড়ে লাফাইয়া।।
বৃষ্টি মধ্যে ঘুরে যেন কুমারের চাক।
জলধর রবে দেয় হরি ব’লে ডাক।।
জয় হরি বল মন গৌর হরি বল।
মেঘের গর্জন সঙ্গে গর্জিছে পাগল।।
যখন শ্রীঅঙ্গে লাগে বিদ্যুতের আভা।
সে সময় হইতেছে বিদ্যুতের শোভা।।
আকাশে বিদ্যুৎ শোভা জলদ গর্জন।
পাগলের হাব ভাব তেমন তেমন।।
বিদ্যুতের জ্যোতি শূন্যে নিক্ষরে যখন।
পাগলের অঙ্গ জ্যোতিঃ হ’তেছে তেমন।।
উভয় জ্যোতিতে মিশামিশি ঠেকাঠেকি।
ধাঁ ধাঁ দিয়া লোক চক্ষে লাগে চকমকি।।
পাগল বিক্রম দেখি সবে জ্ঞান শূন্য।
হরি হরি বলিতেছে নাহিক চৈতন্য।।
মেঘের গর্জন কিংবা পাগলের রব।
তাহা কিছু নির্দিষ্ট না হয় অনুভব।।
জয় হরি বল ধ্বনি শুনা যায় বটে।
নির্দিষ্ট না হয় শব্দ কোথা হ’তে উঠে।।
চৈতন্য পাইয়া কেহ করিতেছে জ্ঞান।
পাগলের ধ্বনি কেহ করে অনুমান।।
বাহির বাটীতে ছিল চাঁদোয়া টানান।
অধিকারী কহে চাঁদা শীঘ্র খুলে আন।।
ছিঁড়ে যাবে ভিজিবে থাকিলে ঐ খানে।
পাগল করেন মানা বিনয় বচনে।।
পাগল কহিছে যদি চাঁদোয়া খসাবে।
আপনার এত ভক্ত কোথায় বসিবে।।
শুনে মানা করে অধিকারী মহাশয়।
পাগল সকল লোকে কহিয়া বসায়।।
চাঁদোয়ার নীচে থাক কেহ না উঠিও।
বৃষ্টি অন্তে সব লোক উঠিয়া যাইও।।
সব লোক বসাইয়া বৃষ্টির সময়।
বারবাটী অন্তঃপুরে পাগল ভ্রময়।।
কিছু পরে ঝড় ক্ষান্ত বায়ু বন্ধ পিছে।
জলবিন্দু নাহি পড়ে চাঁদোয়ার নীচে।।
বৃষ্টি অন্তে আকাশে প্রকাশে সব তারা।
পাগল বলিল এবে উঠহে তোমরা।।
মহানন্দ মহানন্দ বলি ডাক দিল।
মহানন্দ ডাক শুনি নিকটে আসিল।।
মহানন্দ মাধবেরে কহিল পাগল।
তোমরা উভয়ে গিয়া দেখহে সকল।।
রসই করিবে যারা সবে দিল ডাক।
চুলা জ্বালাইয়া বলে শীঘ্র কর পাক।।
সবে দেখে পাগলের শুকনা বসন।
চাঁদোয়া অনাদ্র পূর্বে যেমন তেমন।।
খাল ঘাট, বাটী আর পুকুরের পথ।
রথখোলা শুকনা আছয় পূর্ববৎ।।
মধ্যবাড়ী অন্তঃপুর সকল শুকনা।
জলা কাঁদা কিছু নাই দেখে সর্বজনা।।
দেখিয়া সকল লোকে মানিল বিস্ময়।
হরি হরি বলে সবে কার্যান্তরে যায়।।
পুকুরের দক্ষিণ পাড়ের দক্ষিণেতে।
বিঘত প্রমাণ জল ঘোর ঝটিকাতে।।
পাগল জিজ্ঞাসা করে মহানন্দ ঠাই।
কেমনে ছিলিরে বাপ! বল শুনি তাই।।
মহানন্দ বলে তা কি বলিতে হইবে।
যে ভাবে রাখিলে মোরা ছিলাম সেভাবে।।
সেই ভাঙ্গা চাঁচখানি দিয়া আচ্ছাদন।
সেখানে ছিলাম লোক দশ বারো জন।।
আমরা শুকনা আছি থেকে সেই স্থান।
তাহার নীচেতে জল বিঘত প্রমাণ।।
সেখানে অধিক বৃষ্টি ভাবে বোঝা যায়।
জলময় হইয়াছে শুকনা ডাঙ্গায়।।
দেখে শুনে সকলের লাগে চমৎকার।
কহিছে তারকচন্দ্র রচিয়া পয়ার।।
গুরুপাটে এইখেলা পাগল খেলিল।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি হরি বল।।