Page: 113

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১১৩

বিশ্বনাথ দরবেশে, বলে স্নান কর এসে
কেশ ধৌত কর ল’য়ে মাটি।
তুই ফকির মানুষ, হ’য়ে দেওনা পুরুষ
চুল ছেড়ে যেতে হ’বে কুঠি।।
মহাপ্রভু স্নান ছলে, যান পুষ্করিণী জলে
এ দিকেতে যত নারীগণ।
কলসী লইয়া কাঁখে, কেহ জল আনে সুখে
কেহ করে মস্তক মার্জন।।
কেহ বা গাত্র মার্জন, কেহ পদ প্রক্ষালন
শ্রীঅঙ্গ মোছায় কোন নারী।
যেখানে যে কার্য করে, সবে হরিষ অন্তরে
দলে দলে বলে হরি হরি।।
এদিকে মেয়েরা যত, সবে হ’য়ে হরষিত
এসেছেন বিশ্বাসের বাটী।
কোন কোন নারীগণে, আশ্চর্য মেনেছে মনে
শুনেছে ঠাকুর যাবে কুঠি।।
শুনেছে বাটী হইতে, দশরথের বাটীতে
আসিয়াছে মতুয়া সকল।
কেহ এনেছে চাউল, কেহ এনেছে ডাউল
কেহ আনে দধি দুগ্ধ ঘোল।।
কুষ্মাণ্ড কদলী আদি, তরকারী নানা বিধি
থোড় মোচা শাক শিম মূল।
আলু কচুক আলাবু, কেহ কেহ আনে লেবু
কেহ আনে পদ্মবীজ মূল।।
ব্যঞ্জন লাবড়া পাক, সরিষা বাটা শুক্ত শাক
মেয়েরা রন্ধন করে ঘরে।
দৈবে এক মেয়ে এল, সেই ঘরে প্রবেশিল
কোন মেয়ে নাহি চিনে তারে।।
তণ্ডুল ঠিক দু’মন, পাক হইল যখন
এমন সময় দয়াময়।
গিয়া সেই রসই ঘরে, নিষেধিল মেয়েদেরে
পাক ক্ষান্ত কর এ সময়।।
এই অন্নে হ’য়ে যা’বে, বসাইয়া দেহ সবে
ক্ষুধার সময় বয়ে যায়।
ঠাকুর বাহিরে এসে, বলিলেন হেসে হেসে
খেতে বৈস সাধুরা সবায়।।
যত সব ভক্তগণ, ক্ষান্ত করি সংকীর্তন
মহাপ্রভু নামে ভীড় দিল।
করিতে অন্ন ভোজন, করি পদ্ম পত্রাসন
তারপরে সকলি বসিল।।
ঠাকুরের প্রিয় দাস, দেওড়া গ্রামেতে বাস
নামেতে প্রহ্লাদচন্দ্র ঘোষ।
ল’য়ে ছয় হাঁড়ি দধি, গিয়াছিল ওঢ়াকাঁদি
উপনীত হইয়া সন্তোষ।।
কহিছেন হরিচাঁদ, কি ক’রেছ রে! প্রহ্লাদ
ক্ষীর কি মাখন আন নাই।
সাধু সেবা হ’বে হেথা, শুনিয়াছ এই কথা
তোর দধি বড় ভাল খাই।।
ঘোষ কহে হ’য়ে নত, মেয়েরা এনেছে ঘৃত
সেই ঘৃত এবে হবে ব্যয়।
এই সেবা হোক শেষ, ক্ষীর মাখন পায়স
আমি দিব বৈকালী সেবায়।।
ছয় হাঁড়ি দধি ছিল, দুই হাঁড়ি মথি নিল
মাখন তুলিল সে সময়।
কতকাংশ জ্বাল দিয়া, সদ্য ঘৃত বানাইয়া
উঠাইয়ে রাখিল শিকায়।।
মেয়েদের দেয় দুগ্ধ, জ্বালাইয়া করি স্নিগ্ধ
ক্ষীর বানাইল কতকাংশে।
দিয়া মালাবতী স্থলে, বলে লহ, মা! বৈকালে
দিও ঠাকুরের সেবা রসে।।
হইল পরিবেশন, যত সব সাধুগণ
প্রভু প্রতি হরিধ্বনি দিয়া।
উত্তম ভোজন করি, সবে বলে হরি হরি
আচমন করিল উঠিয়া।।
যে যে দ্রব্য এনেছিল, সিকি মাত্র ব্যয় হ’ল
আর সব রহিল পড়িয়া।
প্রভু ক’ন মালাদেবী, তুমি পরমা বৈষ্ণবী
এই সব দ্রব্য রাখ নিয়া।।
যতনে না কর ত্রুটি, আমরা যাইব কুঠি
সাধু ভক্তগণ এই সব।
সব ল’য়ে সমিভ্যরে, রাত্রি এসে তব ঘরে
পুনশ্চ করিব মহোৎসব।।
সাধ্বীগণ একতরে, সবে বসি এই ঘরে
চিন্তা কর মঙ্গল আমার।
ঠাকুরের কুঠি যাত্রা, শেষ লীলা শুভবার্তা
কহে দীন রায় সরকার।।