Page: 183

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৮৩
কেহ বলে ও কথায় নাহি কোন ফল।
বাঁধিয়া থানায় ল’য়ে চল এ পাগল।।
কেহ বলে এ পাগল বাঁধা বড় দায়।
কবে কারে খুন করে কহা নাহি যায়।।
কেহ বলে এ পাগল থাকিতে হেথায়।
এজাহার কর গিয়া যাইয়া থানায়।।
বাল্যক আসুক বাড়ী নাহিক বাড়ীতে।
তার দ্বারা এজাহার করিব থানাতে।।
বলিতে বলিতে তথা বাল্যক আসিল।
সকল বৃত্তান্ত সবে বাল্যকে কহিল।।
বাল্যক শুনিয়া বলে গোঁসাই মারিল।
মা যদি মরিল তবে ভালই হইল।।
বড়ই প্রসন্ন মোর মায়ের কপাল।
গোস্বামী সাক্ষাতে মৃত্যু পাবে পরকাল।।
এজাহার দিতে যাব কিসের কারণ।
মাতা মোর গিয়াছেন বৈকুণ্ঠ ভবন।।
গ্রামীরা অবাক হ’ল সে কথা শুনিয়া।
যার যার নিজ কর্মে গেলেন চলিয়া।।
বাল্যকের গৃহমধ্যে গোঁসাই বসেছে।
বেলা অপরাহ্ণ মুহূর্তেক মাত্র আছে।।
রায়চাঁদ নামে কবিরাজ একজন।
গোস্বামী নিকটে গিয়া কহে সেই জন।।
গলায় বসন দিয়া বিনয় ভক্তিতে।
গোস্বামী চরণ ধরি লাগিল কাঁদিতে।।
কহ প্রভু তব পদে করি নিবেদন।
মৃত দেহ ল’য়ে মোরা করি কি এখন।।
আপনি করুণ আজ্ঞা সেই আজ্ঞামতে।
ল’য়ে শব যাই সব দাহন করিতে।।
বিষম বিপদ তাতে মনে ভয় গণি।
এতে কি বিপদ যার সহায় আপনি।।
প্রাতেঃ মরিয়াছে গাভী সেই এক দায়।
ডাকিতে ডাকিতে তার বৎস্য মৃতপ্রায়।।
গাভী মরা ফেলিয়াছি মা মরা পোড়া’ব।
দুধ বিনা কাঁদে বৎস্য কি দিয়া বাঁচাব।।
হীরামন বলে ডেকে শুন ওরে রাই।
অদ্য মাকে পোড়াইয়া কার্য কিছু নাই।।
শঙ্খধ্বনি কর গিয়া মাতৃ কর্ণমূলে।
রামাগণে হুলুধ্বনি করুক সকলে।।
আমি আছি প্রভু হরিচাঁদেরে ভাবিয়া।
গাভীটা কোথায় আছে দেখে আসি গিয়া।।
মরা গাভী ফেলাইয়া এসেছে গো-চরে।
গিয়ে গাভীটার মাথা উঁচু করে ধরে।।
মা কেন রহিলি শুয়ে আসিয়া ডাঙ্গায়।
দুধ না পাইয়া বুন কাঁদিয়া বেড়ায়।।
দুগ্ধপোষ্য ছোট ভগ্নী ঘাস নাহি ধরে।
তুই দুধ না দিলে মা বাঁচে কি প্রকারে।।
দিন ভরি ভগ্নী মোর করিছে রোদন।
তুই দুধ না দিলে মা হইবে মরণ।।
অবলা ভগিনী সদা হাম্বা হাম্বা করে।
চেয়ে দেখ দুধ বিনে গোঙ্গাইয়া মরে।।
গৃহস্থ মরিল তোর আমার প্রহারে।
তবু তার পুত্র মোরে দৃঢ় ভক্তি করে।।
কর্ম কর্তা হরিচাঁদ তার নামে ভ্রমি।
যাহা করে তাহা করি কর্মী নহে আমি।।
এমন গৃহস্থ ছেড়ে যাইবা কোথায়।
মা হয়ে মা কেন হেন কঠিন হৃদয়।।
আমারে করহ দয়া রক্ষ এ বিপদে।
প্রভু হরিচাঁদ সেবা দিব তোর দুধে।।
এতবলি পৃষ্ঠদেশে মারিল চাপড়।
হাম্বারব করি গাভী উঠে দিল দৌড়।।
যেখানেতে ছিল বৎস্য সেই খানে গিয়া।
বাছুরে পিয়ায় দুগ্ধ অঙ্গ ঝাড়া দিয়া।।
উহুড়িয়া উহুড়িয়া বৎস্য অঙ্গ চাটে।
হেনকালে হীরামন আইল নিকটে।।
বৎস্যকে ছাড়িয়া গাভী হীরামনে চাটে।
বৎস্য গিয়া হীরামন পদে মাথা কোটে।।
এ দিকেতে কৌশল্যার দুই কর্ণমূলে।
দুই শঙ্খধ্বনি করে দুইজন মিলে।।
নারীগণে হুলুধ্বনি দিতেছে আসিয়ে।
শত্রুলোকে কহে বাল্যকের মার বিয়ে।।
মুহুর্মুহু হরিধ্বনি করিছে সকলে।
বাল্যকের মা উঠিল হরি হরি বলে।।
বাল্যক বলিছে হরি দিয়া হুহুঙ্কার।
তাহা দেখি পাষণ্ডীর লাগে চমৎকার।।
পাষণ্ডীরা বলে ধর কোথায় গোঁসাই।
জনমের মত তার চরণে বিকাই।।
ধন্য ওঢ়াকাঁদি বাবা হরিচাঁদ।
না জানিয়া নিন্দি মোরা করি অপরাধ।।
ধন্য ধন্য হরিচাঁদ ভক্ত মতুয়ারগণ।
ধন্য ধন্য বাল্যক ভকত একজন।।