Page: 112

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১১২
নায়েব যেদিন মারে, রামতনু অগোচরে
গোপনেতে করে যত খল।
শেষে সকল শুনিল, ক্রোধে পরিপূর্ণ হ’ল
বলে এর দিব প্রতিফল।।
মানিব না উপরোধ, দিব এর প্রতিশোধ
ভিটা বাড়ী করিব উচ্ছন্ন।
ঠাকুর বারণ করে, বাছাধন বলি তোরে
তুমি কিছু কর না এ জন্য।।
তাহাতে বারণ হ’ল, কুঠির পেয়াদা এল
রামতনু জানিবারে পায়।
দশরথ নিকটেতে, কহে গিয়ে যোড়হাতে
এতে গুরু নাহি কিছু ভয়।।
রামতনু বাল্যকালে, সাধু দশরথ স্থলে
পাঠশালে লেখাপড়া শিখে।
রামতনু সেইজন্য, দশরথে করে মান্য
চিরদিন গুরু বলে ডাকে।।
তিনি ক’ন পেয়াদারে, কেন আ’লি মরিবারে
বল গিয়া সাহেবের কাছে।
মূলমর্ম নাহি জেনে, পেয়াদা পাঠা’লে কেনে
অত্যাচারে নায়েব ম’রেছে।।
রামতনু কুঠি গিয়ে, নিরপেক্ষ ভাব ল’য়ে
সত্য জানাইল সাহেবেরে।
সাহেব কহে বিশ্বাস, আর নাহি অবিশ্বাস
ঠাকুরে কি দোষ কার্য করে।।
বল শুনি রামতনু, আমার জীবন তনু
ঠাকুরে কেন দেখিতে চায়।
শীঘ্র গিয়া কহ তুমি, ঠাকুর দেখিব আমি
আসুন আমার কামরায়।।
সাহেবে কড়ার দিয়ে, রামতনু গৃহে গিয়ে
গুরুদেব নিকটেতে কয়।
দশরথ পদ ধরে, জানাইল ঠাকুরেরে
সাহেবেরে দেখা দিতে হয়।।
মহাপ্রভু শুনি তাই, বলে যাব তার ঠাই
করিবারে রাজ দরশন।
যে দেখিতে চায় মোরে, আমিও দেখিব তারে
মন চাহে তার সম্মিলন।।
ঠাকুর করিল দিন, বল গিয়া আমি দীন
কুঠি যাব তিন দীন পরে।
রামতনু এইকালে, বলে দশরথ স্থলে
এবে দণ্ড দিব পাষণ্ডীরে।।
সে কথা ঠাকুর শুনে, কহে দশরথ স্থানে
মানা কর তোমার শিষ্যরে।
পাষণ্ডীর কিবা ভয়, যারা মম কিছু নয়
তারা মম কি করিতে পারে।।
ঠাকুর কুঠিতে যাবে, দিন ধার্য করি তবে
যে স্থানে যে ভক্তগণ ছিল।
প্রধান প্রধান ভক্ত, নামগানে অনুরক্ত
আসিতে সবারে আজ্ঞা দিল।।
ঠাকুর সে দিন মত, লইয়া ভকত কত
দশরথ ভবনে আসিল।
প্রেমিক প্রবীণ যত, নাম বা লইব কত
এসে সবে একত্রিত হ’ল।।
রাউৎখামার বাসী, অনেক মিশিল আসি
রামচাঁদ হীরামন বালা।
আইল বদনচন্দ্র, কুবের আদি গোবিন্দ
নারিকেল বাড়ীর পাগলা।।
লক্ষ্মীপুর বাসী ভক্ত, চূড়ামণি বুদ্ধিমন্ত
আসিলেন তারা দু’টি ভাই।
এল নাটুয়া পাগল, ব্রজ নাটুয়া পাগল
হরিবোল বিনে বোল নাই।।
বিশ্বনাথ দরবেশ, আসিল পাগলবেশ
নেচে নেচে ধায় আগে আগে।
যতেক ভকতগণ, হরিনামেতে মগন
সিংহের প্রতাপে ধায় বেগে।।
গেল দশরথ ঘর, সবে হ’ল একতর
ভয়ে ভীত হ’ল দশরথ।
ঠাকুরের সাঙ্গোপাঙ্গো, দেখিয়ে হ’ল আতংক
লোক হ’ল দুই তিন শত।।
দশরথ পদ ধরে, বলে প্রভুর গোচরে
এত ভক্ত কৈল আগমন।
দৈবে লোক বহুজন, করাতে স্নান ভোজন
মম সাধ্য না হবে কখন।।
ঠাকুর কহিছে বাছা, কেন তুমি ভাব মিছা
এল যত সাধু মহাজন।
যে করে হরির চিন্তে, হরি করে তার চিন্তে
খেতে দিবে যাঁহার সৃজন।।
তুমি কি করিবে ভেবে, যার কার্য সে করিবে
স্নান করাইয়া সবে আন।
যাইতে হইবে কুঠি, মাথায় লইব মাটি
কেশ মুক্ত বেশই প্রধান।।