Page: 242

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২৪২
নিবারণ শীতল কার্ত্তিক রতিকান্ত।
সাধু মহাজন প্রতি ভকতি একান্ত।।
তারকের শিষ্যপুত্রী সুমতী শ্রীমতী।
পাগলকে ধরিলেন সেই গুণবতী।।
শুকচাঁদ কানাই নিমায় কয় ভাই।
নাচিছে কীর্তনে আনন্দের সীমা নাই।।
তাহাদের ভগ্নী ধনী বসন্ত নামিনী।
হরি বলে পাগলে ধরিল সেই ধনী।।
পাগল তখনে দুই বাহু প্রসারিয়া।
সেই দুই মেয়েকে ধরিল সাপুটিয়া।।
অজ্ঞান হইয়া দোঁহে ঢলিয়া পড়িল।
যেন ভাদ্রে বান ডেকে ভাসাইয়া নিল।।
পূর্ণ অধিকারী হরিপাল পড়ে তথি।
মূর্ছা প্রাপ্তে পড়িল অক্ষয় চক্রবর্তী।।
কে কারে কি করে পড়ে কেবা কার গায়।
কি সুখ বাড়িল শুকচাঁদের আলয়।।
মদন বিশ্বাস এক পদ ধরি এল।
নিল প্রাণ নিলরে গৌরাঙ্গরূপে নিল।।
গৌরাঙ্গ দাঁড়ায়ে অই সুরধনী কূলে।
চল গো সজনী চল যাই গো সকলে।।
জল আনা ছল করি চল ন’দে বাসী।
জল আনা ছলেতে গৌরাঙ্গ দেখে আসি।।
এতেক বলিয়া কক্ষে লইল কলসী।
চল গিয়া গৌরাঙ্গ চরণে হই দাসী।।
সবে মিলে হ’ল যেন উন্মত্ত পাগল।
নর নারী বাল্য বৃদ্ধ বলে হরি বোল।।
কেহ কেহ উঠে গিয়া বসিল গৃহেতে।
কেহ নৃত্য করে অন্তঃপুর প্রাঙ্গণেতে।।
প্রেমাবেশে বাল্য বৃদ্ধ যুবা নর নারী।
সবে মিলে অম্লান অন্তরে ধরাধরি।।
স্ত্রী পুরুষ ধাবমান হ’ল একত্রেতে।
এক এক জন পাত্র লইল কক্ষেতে।।
কেহ ধায় এলোকেশে কেহ ঘোমটা টানে।
পুরুষে ঘোমটা দেয় কোঁচার বসনে।।
দুপুরের মধ্যেতে কেহ হ’তে নারে স্থির।
বাহির বাটীতে সব হইল বাহির।।
মতুয়ারা রামাগণে ধরিয়া ধরিয়া।
বাড়ীর উপরে সবে রাখে ঠেকাইয়া।।
কতক মতুয়াগণ বাড়ীদিকে ধায়।
নিবারণ শীতলের বাটীতে উদয়।।
কেহ কয় গঙ্গাতীরে উদয় অরুণ।
কেহ কয় অরুণের চরণে বরুণ।।
কেহ কয় তবে জল নিতে হ’ল ভাল।
গৌরাঙ্গ অরুণ পদে বরুণ পড়িল।।
তরুণ অরুণ সঙ্গে চন্দ্র যোগাযোগ।
কেহ বলে এই সেই পুস্পবন্ত যোগ।।
কেহ বলে তার মধ্যে গঙ্গা সুরধনী।
কেহ বলে এই যোগ যোগ চূড়ামণি।।
কেহ বলে ভাসিয়া গেলাম অশ্রুজলে।
কেহ বলে দেখা কি পাইব গঙ্গাকূলে।।
কেহ বলে নাহি পেলে জাহ্নবীর কূলে।
কেহ বলে তবে দাসী হইবি কি ছলে।।
কেহ কেহ তুলে নিজ কক্ষেতে কলসী।
কেহ বলে হইব গৌরাঙ্গপদে দাসী।।
কেহ পিত্তলিয়া কুম্ভ করিয়াছে কক্ষে।
কেহ নাচে মেটে কুম্ভ ক্ষপরে রেখে।।
কেহ বাহিরের কুম্ভ পূর্ণ কিংবা খালি।
কেহ তার একটা লইল কক্ষে তুলি।।
কেহ বলে ক্ষান্ত না করিও সংকীর্তন।
কেহ বলে ধর ওই গৌরাঙ্গ চরণ।।
কেহ নাচিয়া গাইয়া চলেছে কাঁদিয়া।
কেহ কার গায় পড়ে হেলিয়া দুলিয়া।।
কেহ যায় স্নানে কালীগঙ্গা মরানদী।
কেহ সেই ঘাটে গিয়া করে কাঁদাকাঁদি।।
কেহ কেহ বলিতে সকলে ঘাটে গেল।
কেহ বলে কে গো এই বর্ণ যেন কালো।।
কেহ বলে গোরা ছবি প্রাতঃ রবি প্রায়।
কেহ বলে কালশশী তাতে মিশি রয়।।
কেহ বলে কাল গৌর মাঝেতে দাঁড়ায়।
কেহ কেহ বলে অই বাঁশী করে লয়।।
কেহ বলে কাল গোরারূপ জলের ছায়ায়।
কনক কমল কাল কমলে উদয়।।
কাল জলে কাল জ্বলে দেখ গো কেমন।
নিলাজ হেমাব্জ মাঝে হ’য়েছে মিলন।।
জলে জ্বলে জলদধ দেখে সখীগণ।
জলে যাই হেরি রাই শ্যামের মিলন।।
একা আমি আমি তোরা না নামিস কেউ।
দেখ রূপ জ্বলে জলে দিওনা লো ঢেউ।।
একা আমি ধরে আমি শ্যাম জলধর।
নামিলে হারাবি জলে পাবি না অধর।।