Page: 115

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১১৫
আমাদের অধিকারে হেন লোক আছে।
এ ঠাকুর দেখিলে মনের দুঃখ ঘুচে।।
সাহেব কহিছে তনু ঠাকুরকে আন।
নিকটে আসুন উনি দূরে র’ন কেন।।
মাদার চিনেছে ভাব ভঙ্গিতে নিশ্চিতে।
আমিও ঠাকুর চিনে লই ভালমতে।।
ঠাকুর বুঝিয়া সাহেবের অভিপ্রায়।
আগু হ’য়ে সাহেবের নিকটে দাঁড়ায়।।
সাহেবের মাতা দেখে হ’য়ে অনিমিখ।
সাহাবেরে বলে তোম দেখ দেখ ডিক।।
হিন্দু বলে শ্রীহরি যবনে বলে আল্লা।
দরবেশ ফকিরে যারে বলে হেলেল্লা।।
বৌদ্ধ যারে বুদ্ধ কহে খ্রিষ্টে বলে যিশু।
এই তিন নবরূপে উদ্ধারিতে বসু।।
সাহেব আনিয়া দিল চেয়ার পাতিয়া।
ঠাকুরকে বলিলেন বৈঠহ আসিয়া।।
ঠাকুর কহেন একি কহ অসম্ভব।
চেয়ারে কি বৈসে কভু ঠাকুর বৈষ্ণব।।
সাহেব কহে ঠাকুর যে ইচ্ছা তোমার।
যথা ইচ্ছা তথা বৈঠ হাম পরিহার।।
গান ক্ষান্ত দেহ কেন গাও গাও গাও।
নাচিয়া গাহিয়া সবে মেরা পাছ আও।।
কামরার বাহিরেতে সকলে বসিয়া।
পদ ধরি কেহ কেহ উঠিছে নাচিয়া।।
নাচিয়া নাচিয়া করে হরি সংকীর্তন।
কেহ কেহ শিব নেত্র ধরায় পতন।।
নাচে গায় দশরথ দিতেছে চিৎকার।
সিঙ্গাস্বরে বারে বারে করে হুহুঙ্কার।।
লোমকূপ কুণ্ডুলোম কণ্টক আকার।
মস্তকে চৈতন্য শিখা উর্দ্ধ হয় তার।।
ক্ষণে ক্ষণে ধরাতলে পড়ে দশা হ’য়ে।
গোবিন্দ মতুয়া উঠে ফিকিয়ে ফিকিয়ে।।
শয়নে স্বপনে কিংবা মলমূত্র ত্যাগে।
উচ্চৈঃস্বরে হরিনাম যার মুখে জাগে।।
সে বদন হরি হরি হরি বলে মুখে।
বিকারের রোগী যেন উঠে কালহিক্কে।।
কাঁদে আর নাচে মাথা স্কন্ধে ঘুরাইয়া।
ফিরিয়া ঘুরিয়া নাচে বিমুখ হইয়া।।
উলটিয়ে মাথা নিয়ে পায়ের নিকটে।
সেইভাবে হরি বলি পালটীয়ে উঠে।।
নাচিতে নাচিতে যায় কামরা ভিতর।
শতধারে চক্ষে বারি সাহেবের মার।।
কুবের বৈরাগী নাচে মুখ ফুলাইয়া।
অলাবুর পাত্র দেয় পেটে ঠেকাইয়া।।
গোপীযন্ত্র পরে অম্নি মারিয়া থাপড়।
নাচিতে নাচিতে যায় কামরা ভিতর।।
গোঁসাই গোলোক যেন বাণ বেড়পাক।
ফিরে ঘুরে নাচে যেন কুম্ভাকার চাক।।
দরবেশ বিশ্বনাথ চুল ছেড়ে দিয়ে।
উগ্রচণ্ডা নাচে যেন হাতে খাণ্ডা ল’য়ে।।
নাচিতে নাচিতে যায় পুলকে পূর্ণিত।
অনিমিষ রক্ত চক্ষু করয় ঘূর্ণিত।।
নেচে নেচে যায় সাহেবের মার ঠাই।
ফিরে ঘুরে নাচে যেন দিল্লীর সুবাঈ।।
নেচে নেচে লেংটি খ’সে হইল উলঙ্গ।
মেম আছে কাছে তাতে নাহি ভুরুভঙ্গ।।
অশ্রুপূর্ণ নেত্র সাহেবের মা দেখিয়া।
সাহেবের স্কন্ধ পরে বাহুখানি দিয়া।।
বাম হস্তে সাহেবের গলায় গ্রন্থিক।
ডান হাতে তুলে বলে চেয়ে দেখ ডিক।।
ইহারা নাচিছে সবে হ’য়ে জ্ঞান শূন্য।
বাহ্যজ্ঞান নাহি এরা রহিত চৈতন্য।।
একে রাজবংশ তুমি তাতে জমিদার।
রাজা প্রজা এই ভয় থাকেত’ প্রজার।।
আরো আমি বামালোক আছি সম্মুখেতে।
উলঙ্গ হইতে নারে বিকার থাকিতে।।
নির্বিকার দেহ ঈশ্বরেতে প্রাণ দান।
লজ্জা ঘৃণা মরা বাঁচা একই সমান।।
বেলা অপরাহ্ণ হ’ল যেতে কহ দেশে।
এইসব সাধুদিগে পাষণ্ডীরা দোষে।।
অধীনস্থ মধ্যাগাতি তুমি হও রাজা।
পাষণ্ডী প্রজাকে এনে তুমি দেও সাজা।।
অগ্রভাগে ডেকে এনে করহ বারণ।
আর যেন সাধু হিংসা না করে কখন।।
সাহেবের মাতা বলে ওরে ডিক আয়।
সেলাম করহ সবে ঠাকুরের পায়।।
সেলাম করিল যদি সাহেবের মাতা।
পরিবারসহ ডিক নোয়াইল মাথা।।
ঠাকুরের সম্মুখেতে সাহেব দাঁড়ায়।
সেলাম করিয়া সবে করিল বিদায়।।