Page: 114

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১১৪

কুঠিতে নাম সংকীর্ত্তন।

পয়ার।

ভক্তবৃন্দ সঙ্গে ল’য়ে দয়াল ঠাকুর।
চলিলেন সাহেবের কুঠি জোনাসুর।।
মৃদ্ধৌত-মার্জিত কেশ বেঁধে রেখেছিল।
অর্ধ পথে গিয়া সবে চুল ছেড়ে দিল।।
উড়িছে চিকুর যেন ঠিক ব্যোমকেশ।
চলিল কবরী ছাড়ি বিশে দরবেশ।।
আগে যায় বিশ্বনাথ নাচিয়া নাচিয়া।
তার পিছে নেচে যায় গোবিন্দ মতুয়া।।
মাঝে মাঝে গোবিন্দ মতুয়া দেয় লম্ফ।
জ্ঞান হয় তাহাতে হ’তেছে ভূমিকম্প।।
পাগলের দল যায় তার আগে আগে।
হীরামন যায় ঠাকুরের অগ্রভাগে।।
ঠাকুরের পিছে পিছে যায় দশরথ।
পিছেতে মতুয়া জুড়ে ঘাট মাঠ পথ।।
দশরথ গান করে নিজকৃত পদ।
সবে গায় তাহা প্রেমে হয়ে গদগদ।।
মহাপ্রভু পিছে যত ভক্তগণ ধায়।
ঠাকুরের সম্মুখেতে কেহ নাহি যায়।।
আগ্নেয় মেঘেতে যেন উল্কার পতন।
সবাকার কণ্ঠস্বর হ’তেছে তেমন।।
আগে পাছে ঠাকুরের বহুলোক ধায়।
জড়াজড়ি ধরাধরি ধরাতে লোটায়।।
রক্তজবা সম চক্ষু কাল মণি ঘেরা।
তার মধ্যে জ্যোতি যেন আকাশের তারা।।
ঠাকুরের আগে আগে হীরামন ধায়।
ঠিক যেন বীরভদ্র যায় দক্ষালয়।।
ঠাকুরের পিছে চারিখানা খোল বাজে।
অষ্টজোড়া করতাল বাজে তার মাঝে।।
পশ্চিম দিকেতে প্রভু করেছে গমন।
মুখপদ্ম ঝলসিছে সূর্যের কিরণ।।
রক্তবর্ণ চক্ষু কালফণী মণি ঘেরা।
ভুরুধনু মণি র’ক্ষে দিতেছে পাহারা।।
ভালে কোটা শশীছটা হ’য়েছে সংযোগ।
তাহাতে ঘটেছে যেন পুষ্পবন্ত যোগ।।
দূর হতে সাহেব ক’রেছে দরশন।
রামতনু অগ্রে গেল সাহেব সদন।।
সাহেব জিজ্ঞাসা করে রামতনু ঠাই।
ঘোর শব্দ ভীম মূর্তি কি দেখিতে পাই।।
বাজে খোল করতাল হুংকারের রোল।
এতলোক কোথা হতে আসিল সকল।।
রামতনু বিশ্বাস কহিছে সাহেবেরে।
ইচ্ছা করিলেন যে ঠাকুর দেখিবারে।।
সেই প্রভু এসেছেন ল’য়ে ভক্তগণ।
মহাসংকীর্তন যেন ভীষণ গর্জন।।
সাহেব কহিছে তনু এত ভক্ত যার।
সামান্য মানুষ নহে বুঝিলাম সার।।
রাজা রামরত্ন রায় আমি কর্মচারী।
এত লোক একত্রিত করিতে না পারি।।
যদি একত্রিত হয় রাজদণ্ড ভয়।
হেতু বিনা এত লোক ভীর কেন হয়।।
ভক্তবৃন্দ সঙ্গে দেখি চা’র পাঁচ শত।
হেলে দুলে নাচে গায় যেন মদ মত্ত।।
লোকে অসম্ভব এই অলৌকিক কার্য।
ক্ষণ জন্মা লোক ইনি করিলাম ধার্য।।
সাহেবের মাতা ছিল খট্টায় শয়ন।
ডিক কহে মাদার করহ দরশন।।
দেখ মা ঠাকুর এল কামরা বাহিরে।
মতুয়রা উপস্থিত কুঠির উপরে।।
বিশ্বনাথ দরবেশ প্রেমে মত্ত হ’য়ে।
ধরণী পতিত হয় নাচিয়ে নাচিয়ে।।
দাঁড়াইয়া কামরার দরজা সম্মুখে।
সাহেবেরা মাতা পুত্রে ম’তোদিগে দেখে।।
সাহেবের মাতা যবে করিয়া দরশন।
এমন সময় ক্ষান্ত করিল কীর্তন।।
একে একে সাহেব করিয়া দরশন।
বলে তনু কহত’ ঠাকুর কোন জন।।
সাহেবের মাতা কহে শুন বাছা ডিক।
ঠাকুরে দেখিয়া কি করিতে নার ঠিক।।
আজানুলম্বিত ভুজ চৌরাশ কপাল।
উর্দ্ধরেখা করে চক্ষু কর্ণায়ত লাল।।
চুল ছেড়ে দাঁড়িয়েছে ঠাকুর ঐ জন।
স্বভাবত রূপ যেন ভুবন মোহন।।
ভালমত ঠাকুরকে দেখ হ’য়ে স্থির।
দেখেছ কাঙ্গালী মাকে এই তার পীর।।
মনুষ্যের শরীরে কি এত হয় জ্যোতি।
পবিত্র চরিত্র যেন ঈশ্বর মূরতি।।