Page: 097

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৯৭

ওঢ়াকাঁদি প্রভুধামে যান মৃত্যুঞ্জয়।
উপনীত হ’ল গিয়া সন্ধ্যার সময়।।
ঘোর হয় নাই সন্ধ্যা দ্বীপ জ্বলে ঘরে।
ঠাকুর বসিয়াছেন গৃহের বাহিরে।।
প্রণমিল মৃত্যুঞ্জয় ঠাকুরের পায়।
অপরূপ ফুলসজ্জা দেখিবারে পায়।।
কৃষ্ণকলি পুষ্পহার প্রভুর গলায়।
কি শোভা হয়েছে তাহা কহা নাহি যায়।।
চারি চারি শ্বেত পুষ্প চারি চারি লাল।
চারিটি হরিদ্রা বর্ণ তাহাতে মিশাল।।
চারি পুষ্প শ্বেত আর চারি পুষ্প লাল।
চারিটি হরিদ্রা বর্ণ থরে থরে মাল।।
এই মালা দুই সারি প্রভুর গলায়।
আর দুই সারি মালা দিয়াছে মাথায়।।
মস্তকের পার্শ্ব দিয়া আকর্ণ বেষ্টিত।
ঝুমুকা আকার হার গলেতে দোলিত।।
এক সারি বক্ষঃপর রয়েছে সাজান।
আর এক সারি নাভি পর্যন্ত ঝুলান।।
অপরূপ তাহাতে হয়েছে কিবা সাজ।
গোপীরা সাজায় যেন কুঞ্জ বন মাঝ।।
ফুলহার ঈষৎ ঈষৎ ঝুলিতেছে।
তার মাঝে দলগুলি ঈষৎ লড়িছে।।
বহিতেছে মন্দ মন্দ দক্ষিণে বাতাস।
ফুল হতে বহিতেছে অপর্যাপ্ত বাস।।
এতেক শ্রাবণ মাস আরও সন্ধ্যাকালে।
অল্পক্ষণ দিনমণি গেছে অস্তচলে।।
আকাশে বিচিত্র শোভা স্থগিত বরুণ।
এদিকে উদিত যেন দ্বিতীয় অরুণ।।
মৃত্যুঞ্জয় এসে তাই করে দরশন।
অপরূপ রূপ যেন মদন মোহন।।
জ্ঞানহারা প্রায় যেন হইল অধৈর্য।
ভেবেছেন মৃত্যুঞ্জয় এই কি নিকুঞ্জ।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে প্রভু বল বল বল।
কোন গোপী ব্রজভাবে তোমাকে সাজা’ল।।
প্রভু কন মল্লকাঁদি জানকী নামিনী।
আমাকে সাজিয়ে গেল সেই যে গোপিনী।।
তুমি যারে দেখে এলে যেন ধ্যান ধরা।
উত্তার দেখিলে যার নয়নের তারা।।
মানসেতে মনসুতে মালা গেঁথে ফুলে।
মনে মনে মালা গেঁথে দিল মোর গলে।।
আরোপেতে দেখে মোরে বাক্য নাহি স্ফুরে।
এসেছ যাহার ভাব জানাতে আমারে।।
কি কহিবি তার কথা বল বল বল।
দেখিব দেখিব তারে চল চল চল।।
মৃত্যুঞ্জয় ধরায় পড়িল কাঁদি কাঁদি।
প্রভু বলে চল শীঘ্র যাই মল্লকাঁদি।।
মহাপ্রভু নৌকা ‘পরে উঠিল অমনি।
আস্তে আস্তে মৃত্যুঞ্জয় বাহিল তরণী।।
শুক্লাপক্ষ শুভাস্টমী তিথির সময়।
তরী পরে হরি, তরী বাহে মৃত্যুঞ্জয়।।
ক্রমে ক্রমে নিশাকর কর প্রকাশিল।
ঈশানে ঈষৎ মেঘ ক্রমে দেখা দিল।।
গগনে নক্ষত্র সব হ’য়েছে উদয়।
তার মধ্যে চন্দ্রোদয় কিবা শোভা তায়।।
শোভা দেখি মৃত্যুঞ্জয় আনন্দ অপার।
জয়ধ্বনি করে ক্ষণে করে হুহুঙ্কার।।
স্বেদকম্প পুলকিত মৃত্যুঞ্জয় দেহ।
বলে তোরা হেন শোভা দেখিলি না কেহ।।
বিস্মিত হইল ঠাকুরের পানে চেয়ে।
প্রভু কয় যারে বাছা ত্বরা তরী বেয়ে।।
ধীরে ধীরে বাহে তরী মালা দেখি মোহে।
নিরখি নিরখি নীর নিরবধি বহে।।
বহিতেছে বাহিতেছে মোহিতেছে মালা।
উপনীত হল আসি খাল তালতলা।।
মৃত্যুঞ্জয় গিয়াছেন উড়িয়া নগরী।
আশাপথ চেয়ে তার নারী কাশীশ্বরী।।
নিবাসী নিশ্চিন্তপুর তপস্বী সদ্জ্ঞানী।
দেবী কাশীশ্বরী তার প্রাণের নন্দিনী।।
মৃত্যুঞ্জয় গিয়াছেন যেই পথ দিয়া।
ঠাকুরানী সেই পথে আছেন বসিয়া।।
প্রাণকান্ত গিয়াছেন প্রাণকান্ত স্থানে।
ভাবে কান্ত হেরি কান্ত আসে কতক্ষণে।।
ক্ষণেক বসিয়া থাকে উত্তরাভিমুখে।
ক্ষণে গৃহকার্য করে পুনঃ গিয়া দেখে।।
গৃহকার্য করি যায় গৃহের বাহিরে।
পুনঃ গৃহ পিছে এসে আশাপথ হেরে।।
আবার আসিয়া গৃহকার্য করে ক্ষণে।
ক্ষণে ক্ষণে দৃষ্টি করে জানকীর পানে।।
নিভৃতে বসিল গিয়া গৃহের পশ্চাতে।
আসে কিনা আসে নাথ দেখে আরোপেতে।।