Page: 121
শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১২১
গলে বস্ত্র করজোড়ে উঠিয়া দাঁড়াল।
হরি হরি ব’লে নারী কাঁদিতে লাগিল।।
বাহ্যেতে দেখায় পদ দিল মেয়েটিরে।
শ্রীপদ পরশ করে পিশাচের শিরে।।
পাদস্পর্শে সে পিশাচ মুক্তি হ’য়ে গেল।
ব্যাধিমুক্ত রমণী সে পূর্ববৎ হ’ল।।
প্রভু বলে কেন আ’লি আমার সাক্ষাতে।
মৃত্যুঞ্জয়ের কথামত আইলি মরিতে।।
আসিলি করিলি ভাল মম বাক্য ধর।
এ পাপে শ্রীক্ষেত্রধামে যাহ একবার।।
মুক্ত হ’লি কি না হ’লি বল শুনি বাছা।
মোরে এনে দেহ এক ময়ূরের বাচ্চা।।
পেটে হাত দিয়া তবে সেই নারী কয়।
ওহে প্রভু আমার ঘুচিয়ে গেছে দায়।।
ঠাকুর বলে মণি পাঁচসিকে দিয়ে।
এতবড় বিপদ কি যা’বি মুক্ত হ’য়ে।।
তোর পেটে ব্যাধি ছিল পাঁচমাস বটে।
তারে পাঠিয়েছি আমি ময়ূরের পেটে।।
পাণ্ডাদের সঙ্গে বাছা ক্ষেত্রে চলে যা।
মোরে এনে দিন এক ময়ূরের ছা।।
সে নারী শ্রীক্ষেত্রে গেল জগন্নাথে আর্তি।
রথের উপরে দেখে হরিচাঁদ মূর্তি।।
নারী বলে কেন আমি আসি এতদূর।
ওঢ়াকাঁদি আছ যদি দয়াল ঠাকুর।।
এই সেই সেই এই ভিন্নভেদ নাই।
এবে আমি ময়ূরের বাচ্চা কোথা পাই।।
রথে থেকে প্রভু বলে বাচ্চা পাইয়াছি।
দেশে যা দেশে যা আমি ওঢ়াকাঁদি আছি।।
এ বাণী শুনিল যেন দৈববাণী প্রায়।
দেশে এসে গেল শেষে ওঢ়াকাঁদি গায়।।
প্রভুর চরণে নারী নোয়াইল মাথা।
কেঁদে কেঁদে কহে সেই ক্ষেত্রের বারতা।।
প্রভু বলে ওঢ়াকাঁদি আমি হরিদাস।
জগবন্ধু বলে তোর হ’ত কি বিশ্বাস।।
তেঁই তোরে পাঠাইনু শ্রীক্ষেত্র উৎকলে।
বাড়ী যাগো মন যেন থাকে আমা বলে।।
ওঢ়াকাঁদি অবতীর্ণ কাঙ্গালের বন্ধু।
কবি কহে ভবসিন্ধু তার কৃপাসিন্ধু।।
বুধই বৈরাগীর গৃহদাহ বিবরণ।
পয়ার।
লক্ষ্মীপুর গ্রামে বুদ্ধিমন্ত চূড়ামণি।
ভাই ভাই ঐক্য হেন নাহি দেখি শুনি।।
একদিন দুই ভাই ওঢ়াকাঁদি গিয়া।
বাটী আসিলেন মহাপ্রভুকে লইয়া।।
ক্ষণে গান করে দোঁহে দিয়া করতালি।
ক্ষণে নাচে দুই ভাই হরি হরি বলি।।
প্রভুকে আনিয়া ঘরে পুলকিত কায়।
মেয়েরা আনন্দে মগ্ন ঠাকুর সেবায়।।
হেনকালে দীক্ষাগুরু আইল বাটীতে।
দু’টি ভাই আরো পুলকিত হইল তাতে।।
নামেতে গোবিন্দচন্দ্র পাল মহাশয়।
অধিকারী কায়স্থ সে পাল উপাধ্যায়।।
রামভদ্র পাল সিদ্ধ পুরুষ রতন।
সেই বংশধর ইনি সাধু মহাজন।।
রামভদ্র পাল যদি বৃক্ষতলে যেত।
ডাক দিলে পক্কফল মাটিতে পড়িত।।
তাল তাল তোরে ডাকে রামভদ্র পাল।
বলিতে বলিতে অম্নি পড়িত সে তাল।।
অকালে অপক্ক ফল বৃক্ষেতে থাকিত।
ডাক দি’লে পক্ক হয়ে মাটিতে পড়িত।।
আম জাম বদরী বা খর্জূর কাঁঠাল।
অন্যে বলে ডাকে তোরে রামভদ্র পাল।।
বলা মাত্র ফল সব পড়িত তলায়।
অপক্ক থাকিলে পক্ক হ’ত সে সময়।।
এমন মহৎ লোক রামভদ্র পাল।
তাঁর বংশধর শ্রীগোবিন্দচন্দ্র পাল।।
শুষ্ক কাষ্ঠ ধর্ম তার স্নানাদি দু’বেলা।
তিলক ধারণ জপে তুলসীর মালা।।
এহেন গোস্বামী যবে আসিল বাটীতে।
দুই ভাই আনন্দিত হইল মনেতে।।
আসিয়া গোবিন্দ কহে বাছারে বুধই।
বসিতে আসন বাছা করিয়াছ কই।।
চূড়ামণি বুধই কহিছে দু’টি ভাই।
মহাপ্রভু নিকটেতে করিয়াছি ঠাই।।
আমাদের ঠাকুর আছেন যেই ঘরে।
দুই প্রভু সেখানে বসুন একতরে।।