Page: 038

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৩৮
ফিরে যাক যোগে বসা, দেখি করিয়া তপস্যা
তপস্যায় বসিলেন মুনি।
কতদিন গত হয়, দৈবে এমন সময়
শুনিতে পাইল দৈববাণী।।
শীঘ্রই রচনা কর, বৃথা কেন কাল হর
উপলক্ষ তোমারে রাখিব।
লিখিতে উদ্যোগী হও, করে তুলি তুলি’ লও
যা করিবে আমি সে করিব।।
এই দৈববাণী শুনি, লিখিতে লাগিল মুনি
কৃষ্ণলীলা রস ভাগবত।
লিখিতে লিখিতে, গ্রন্থ ব্রজলীলার বৃত্তান্ত
ব্রজলীলা লিখে মনোরথ।।
শান্ত দাস্য সখ্য আদি, বাৎসল্যের নিরবধি
মধুরের রাধা প্রেমরস।
দাস্য শান্ত ক্রিয়াগুণ, লিখিতে হ’ল নিপুণ
মধুরের ক্রিয়া গুণ যশ।।
লিখিতে উদ্যত হ’ল, হেন কালেতে শুনিল
দৈববাণী হ’ল পুনর্বার।
আর না লিখ আগত, ব্রজভাব তত্ত্ব যত
তা লিখিবে নন্দন তোমার।।
পরে ব্যাস পুত্র যিনি, শুকদেব মহামুনি
তিনি লিখিলেন ভাগবত।
লিখিতে লিখিতে মুনি, পরে হ’ল দৈববাণী
আর না লিখিও তুল হাত।।
কতদিন গত হ’ল, ব্যাস ভাবিতে লাগিল
আমি লিখি আমি করি সই।
যদ্যপি লেখান হরি, জানিতে তা আমি পারি
অন্যে তাহা জানিল বা কই।।
দৈববাণী শুনিলাম, আমি একা জানিলাম
গ্রন্থ মান্য হ’বে স্বর্গমর্ত্য।
গোলোক বৈকুণ্ঠ মান্য, হইল যে গ্রন্থ ধন্য
দেবগণে না জানিল তত্ত্ব।।
গোলোক বিহারী হরি, গণপতি রূপ ধরি
হ’য়েছেন শিবের নন্দন।
কোলে করিয়া ভবানী, হ’ল গণেশ জননী
কোলে আদি ব্রহ্ম সনাতন।।
এবে বক্তা আমি হ’ব, গণেশেরে লেখাইব
চলিলেন কৈলাশ শিখর।
স্তব করে মহামুনি, ব্যাসের স্তবন শুনি
তুষ্ট হ’ল দেব দিগম্বর।।
আজ্ঞা দিলেন গণেশেরে, যেতে ব্যাস সমিভ্যারে
গণেশ বলিল আমি যা’ব।
বলিতে বিলম্ব হ’লে, হস্ত অবসর পেলে
লিখিব না ফিরিয়া আসিব।।
শুনি ব্যাস চমকিত, হইলেন উপস্থিত
বৈকুণ্ঠ নারায়ণ সদনে।
গললগ্নী কৃতবাসে, স্তব করে পীতবাসে
তুষ্ট হরি ব্যাসের স্তবনে।।
ব্যাস কহিছে ভারতী, ভারতে যাবে ভারতী
ভাগবত-ভারত রচনে।
আমি যা বলিব বাণী, বাণী যোগাইবে বাণী
বসি মম রসনা আসনে।।
আজ্ঞা দেন চক্রপাণি, আজ্ঞায় চলিল বাণী
গজানন কহে পুনর্বার।
কণ্ঠে রহিবে ভারতী, বলিবেন যে ভারতী
লিখিব হে যে সাধ্য আমার।।
কালি হ’লে মসিপাত্র, মসি ফুরাইলে মাত্র
আর না লিখিব যা’ব ফিরি।
শুনি ব্যাস বারিনেত্র, আমি হ’ব মসিপত্র
ডেকে কন শ্বেত বাগীশ্বরী।।
শুনিয়া এ সব বার্তা, ব্যাস মুনি করে যাত্রা
গোলোকের পানে চাহি কাঁদে।
গোলোকে ছিলেন স্থিতি, যিনি নীল সরস্বতী
তাকে করে আজ্ঞা কালাচাঁদে।।
বৈকুণ্ঠেতে শ্বেতবাণী, মসিপত্র হ’বে তিনি
তুমি গিয়া হও তাতে মসী।
কজ্জ্বলস্বরূপা হ’য়ে, তুমি তাতে থাক গিয়ে
আমি তব পিছে পিছে আসি।।
আসি ব্যাস মুনিবর, গণেশের বরাবর
কহে দেব লিখ কহি কথা।
ডেকে বলে শিব-পুত্র, দিলে মোরে মসিপত্র
লিখিবার লেখনিটা কোথা।।
এরণ্ডের কুঞ্চি আনি, দিলা ব্যাস মহামুনি
অস্ত্র দিল প্রস্তুতে কলম।
কূপিলেন গজানন, ক্রোধে ঘূর্ণ ত্রিনয়ন
বলে ব্যাস তোর মতিভ্রম।।
বাণী কণ্ঠে বিরাজিত, শ্বেত সরস্বতী দত
কালী হ’ল নীল সরস্বতী।
এতে মোর আসে হাস, তার কি কলম বাঁশ
কি পত্রে বা লিখাইবি পাঁতি।।