Page: 236
শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২৩৬
পিছে ছিল মহানন্দ পাগলের দল।
দ্রুত বেগে উতরিল বলি হরিবল।।
নাচিছে মানুষ গরু তার মধ্যে দিয়া।
হাতে হাতে ধরাধরি চলেছে ধাইয়া।।
চলেছে দক্ষিণ দিকে জ্ঞান নাহি আর।
লম্ফ দিয়া জটকের খাল হ’ল পার।।
তাহা দেখি লম্ফ দিয়া পড়ে লোক সব।
রাখালেরা লম্ফ দিল মনেতে উৎসব।।
জলে পড়ি কেহ কেহ ঝাঁপাঝাঁপি করে।
সাঁতারিয়া সাঁতারিয়া কহে যায় পারে।।
অনুমান দুই রসি আড়ে পরিসর।
লম্ফ দিয়া মহানন্দ হয়ে গেল পার।।
জলেতে নামিয়া সবে হরিবোল দিয়ে।
ঝাঁপাইয়া সাঁতারিয়া গেল পার হয়ে।।
গভীর খালের মধ্যে চারি হাত বারি।
হরি বলে লম্ফে ঝম্পে সবে দিল পাড়ি।।
গোচরে যতেক গরু খাল কিনারায়।
দৌড়িয়া আসিয়া খাল পার হ’তে চায়।।
পাগল ওপারে থেকে কহিছে ডাকিয়া।
তোরা প্রেমানন্দ কর ওপারে থাকিয়া।।
থাক থাক বলে ঘুরে ঘুরাইল যষ্ঠি।
থামিল গরুর পাল তাহা করি দৃষ্টি।।
ওপারে নাচিছে গরু এপারে মানুষ।
পশু কি মানুষ সবে হারিয়েছে হুঁশ।।
কোলাকুলি ঢলাঢলি কাঁদাকাঁদি করি।
মাতুয়ারা মাতোয়ারা বলি হরি হরি।।
চারি পাঁচ জনে ধরে বাহু প্রসারিয়া।
তদ্রূপ রাখাল গণে ধরিয়া ধরিয়া।।
রাখালগণেরে সব দিলেন বিদায়।
উত্তর পারেতে গেল গো-পাল যথায়।।
গো-পাল শান্তায়ে নিল যতেক গো-পাল।
গো-পাল বাছিয়া নিল যার যে গো-পাল।।
এদিকে মতুয়াগণ হরিধ্বনি দিয়া।
সাহাবাজপুরে সব উতরিল গিয়া।।
কতকাংশ জয়পুর কতক কুন্দসী।
হরিনাম করে সবে প্রেম নীরে ভাসি।।
কতকাংশ রহিলেন সাহাবাজপুর।
মহানন্দ রহে আর অক্ষয় ঠাকুর।।
পূর্ণচন্দ্র অধিকারী হরিশ্চন্দ্র পাল।
তপস্বী পালের বাড়ী কীর্তন রসাল।।
অর্ধনিশি পর্যন্ত হইল সংকীর্তন।
ঘাটে পথে মাতিল পুরুষ নারীগণ।।
রামাগণে যায় সবে আনিবারে জল।
হুলুধ্বনি দেয় আর বলে হরিবল।।
স্ত্রী পুরুষ যেই জনে যেই কার্যে যায়।
চক্ষে জল ঝরে আর হরিনাম লয়।।
কীর্তন হইল সাঙ্গ বিশ্রামে সবায়।
দুই তিন পালেঙ্গায় কেহ বা পিঁড়ায়।।
প্রাঙ্গণে তপস্বী পাল আর হরিপাল।
হেনকালে দধি দিতে আইল গোয়াল।।
বাঁকস্কন্ধে হরি নাম করিতে করিতে।
দুই জন করে নৃত্য প্রাঙ্গণ মাঝেতে।।
হরিপাল ধরি তার বাঁক নামাইল।
মতুয়ারা সবে মিলি ভোজন করিল।।
নাম গানে মত্ত হ’য়ে নিশি পোহাইল।
প্রাতেঃ সবে জয়পুর গমন করিল।।
জয়পুর উত্তরিল সাধনার বাড়ী।
প্রেমে মত্ত সকলে করিছে দৌড়াদৌড়ি।।
কুন্দসী নিবাসী নাম দীননাথ পাল।
হরিনামে মত্ত হ’য়ে হ’য়েছে বেহাল।।
তার ছিল মহাব্যাধি নাসিকাগ্র ফুলা।
নাকের নীচে ফুলে বর্ণ হ’ল ধলা।।
মুখে চাকা চাকা দাগ রসপিত্ত দোষ।
ব্যাধিযুক্ত তার মনে সদা অসন্তোষ।।
তার নারী স্বপ্নে দেখে ব্যাধি হবে মাপ।
জয়পুরে তারকে ডাকিলে ধর্মবাপ।।
তারকে ডাকিল বাপ ব্যাধি সেরে গেল।
সেই হ’তে দীন পাল বড় ম’তো হ’ল।।
মানসিক ছিল তার মহোৎসব দিবে।
নিবেদিল পাগলের শ্রীপদ পল্লবে।।
গললগ্নীকৃতবাসে পাগলেরে কয়।
মহোৎসব দিতে হ’বে কুন্দসী আলয়।।
একখানি বাড়ী করিয়াছেন তারক।
দীনেপালে আছে সেই বাড়ীর রক্ষক।।
তারকের দাস আমি থাকি সেই ঠাই।
দয়া করি সেই বাড়ী চলুন গোঁসাই।।
তাহা শুনি পাগল চলিল সেই বাড়ী।
মতুয়ারা সবে ধায় করি দৌড়াদৌড়ি।।
মতুয়া একত্র দীননাথের বাটীতে।
কীর্তন করিছে সবে মহানন্দে মেতে।।