Page: 093

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৯৩
দেখিব দয়াল হরি দু’নয়ন ভরি।
মুখে বলে হরি হরি হরি হরি হরি।।
বৃন্দাবন রাউৎখামার মল্লকাঁদি।
নবদ্বীপ ওঢ়াকাঁদি করজোড়ে বন্দি।।
মহাভাবে এইরূপ প্রলাপাদি হয়।
তার মধ্যে দুইজন উঠিয়া দাঁড়ায়।।
তারা কহে মোরা দোঁহে শমনের দূত।
সান্দীপানি মুনিবংশ ব্রাহ্মণের সুত।।
আর এক মেয়ে নাচে হ’য়ে প্রেম স্ফূর্তি।
বলে আমি যম ভার্যা নাম মোর মূর্তি।।
যমপুরী শূন্য করি আসি পুরিশুদ্ধ।
আমরা পূজিব হরিচাঁদ পাদপদ্ম।।
শূন্যে থেকে দৈববাণী হইল দৈবাৎ।
আবির্ভাবে হরিপদে করি প্রণিপাত।।
কমলে পূজিব হরি শ্রীপদ কমল।
প্রেমানন্দে তোরা সবে হরি হরি বল।।
রাউৎখামার মল্লকাঁদি দুই গ্রাম।
এই মত মত্ত হ’য়ে করে হরিনাম।।
ক্রমে বন্যা বেগে চলে হ’ল ধন্য ধন্য।
উঁচু নীচু ভেদ নাই দেশ পরিপূর্ণ।।
দিবা রাত্রি গত হয় হ’য়ে জ্ঞানশূন্য।
কীর্তন ছাড়িয়া লোক পাইল চৈতন্য।।
আয়োজন দশ বিশ জনের রন্ধন।
শতেক দ্বিশত লোকে করিল ভোজন।।
ঘরে কিংবা বাহিরে কি ঘাটে আর পথে।
হরি বল হরি বল সবার মুখেতে।।
মনোভৃঙ্গে মধুপায়ী শ্রীহরিপাদাব্জে।
পিপাসু তারকচন্দ্র কবি রসরাজে।।
ভক্ত দশরথ বৈরাগীর উপাখ্যান।
পয়ার।
সাধুসুত দশরথ উপাধি বৈরাগী।
রাউৎখামারবাসী মহা অনুরাগী।।
প্রভু যবে লীলা খেলা করে এই মতে।
এ সময় দশরথ প্রেমে যায় মেতে।।
প্রভুর সঙ্গেতে ফিরে সেই দশরথ।
হইলেন প্রভুর প্রিয় পরম ভকত।।
প্রভু স্থানে আসে লোক হ’য়ে ব্যাধিযুক্ত।
প্রভুর আজ্ঞায় তারা হয় ব্যাধিমুক্ত।।
তাহা দেখি মনে দুঃখী দশরথ ভক্ত।
রোগাভক্ত প্রভুকে করয় বড় ত্যক্ত।।
মনোদুঃখে দশরথ গিয়া প্রভুস্থানে।
করজোড়ে নিবেদিল প্রভুর চরণে।।
বহু লোক রোগযুক্ত হ’য়ে বহু দেশে।
রোগমুক্তি পাইতে তোমার ঠাই আসে।।
আত্মসুখী রোগাভক্ত ব্যাধিমুক্তে তুষ্ট।
তাহাতে আমার মনে হয় বড় কষ্ট।।
আমার মনের ইচ্ছা যত লোক রোগী।
সবাকার রোগ ল’য়ে আমি একা ভোগী।।
ওহে দয়াময় হরি আজ্ঞা কর তাই।
সবাকার রোগ ল’য়ে একা কষ্ট পাই।।
রোগী না থাকিলে ভবে কেহ আসিবেনা।
তোমাকে ওরূপ করে ত্যাক্ত করিবেনা।।
অহৈতুক ভক্তিমান ভক্ত আছে যারা।
প্রেমের পিপাসু হ’য়ে আসিবেক তারা।।
সেই সঙ্গে হ’বে সুখে প্রেম আলাপন।
দয়া করি বল নৈলে ত্যজিব জীবন।।
প্রভু বলে দশরথ একি কথা কও।
সংসারের রোগ কি উঠায়ে নিতে চাও।।
কর্মক্ষেত্র সংসারেতে কর্ম মহাবল।
সকলেই পায় কর্ম অনুযায়ী ফল।।
তবে তোর বাঞ্ছাহেতু দিব তোরে রোগ।
বার বছরের পরে হ’বে তোর ভোগ।।
পাইয়া প্রভুর আজ্ঞা হইল সন্তুষ্ট।
বার বছরের পরে হ’ল তার কুষ্ঠ।।
ঠাকুর বলেন বাছা আর কিবা চাও।
সংসার ছাড়িয়া এবে ভিক্ষা করে খাও।।
কতদিনে এইভাবে ভিক্ষায় প্রবৃত্ত।
আজ্ঞামতে করে নিল অযাচক বৃত্ত।।
একদা ঠাকুর তারে বলিল গোপনে।
ভিক্ষার্থে বেড়াও বাছা যেই যেই স্থানে।।
চাহিয়া কহিয়া ভিক্ষা করনা কখন।
হেঁটে যেতে সেধে দিলে করিও গ্রহণ।।
তাই ল’য়ে সন্ধ্যাকালে নৌকায় আসিও।
তাহাই রন্ধন করি একবেলা খেও।।
বর্ষা আর শরৎ হেমন্ত গত হ’লে।
পদব্রজে ভিক্ষা মেগে খাইও সেকালে।।
বেড়াইও পদব্রজে ভিক্ষার নিমিত্ত।
যাচিয়া না লইও এ অযাচক বৃত্ত।।