Page: 207
শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২০৭
ওঢ়াকাঁদি যাইবারে, রামভরত যাত্রা করে,
অন্তরেতে কাঙ্গালের ভাব।
বাহিরে দেখায় বেশ, নাহি যেন ভক্তি লেশ,
রাজসিক বীরত্ব স্বভাব।।
মহিষ চর্ম পাদুকা, মোজা তোলা পদ ঢাকা,
পরিধান রেশমের ধুতি।
গরদ চাদর গায়, নামাবলীটে মাথায়,
হাতে ধরা কাপড়ের ছাতি।।
বড় এক ষষ্ঠী হাতে, চৌগোপ আছে মুখেতে,
মুখে হরিবোল বলি ধায়।
কতক পথ আসিয়ে, ক্ষণেক কাল বসিয়ে,
নয়নের জলে ভেসে যায়।।
রামভরত যাত্রা পথে, ওঢ়াকাঁদি শ্রীধামেতে,
সব ভক্তে কহে হরিচাঁদ।
তোরা সব থাক হুঁশ, আসিয়াছে এক মানুষ,
পূর্ণ হবে তার মনোসাধ।।
বলিতে বলিতে এসে, রামভরত প্রবেশে,
ওঢ়াকাঁদি প্রভুর বাটীতে।
উপস্থিত হ’য়ে একা, পাইয়া প্রভুর দেখা,
করজোড়ে দাঁ’ড়াল সাক্ষাতে।।
অনিমিষ বারি চক্ষে, প্রভুর শ্রীঅঙ্গ দেখে,
ছাতি লাঠি ছাড়িয়া দিলেন।
ঠাকুর বলেন বাঁচি, তোমা আমি চিনিয়াছি,
ভূমে লোটাইয়া পড়িলেন।।
ঠাকুর বলেন তায়, তোমার ঘর কোথায়,
কোথা হ’তে এলে মহাশয়।
কহিছে রামভরত, জান প্রভু ত্রিজগত,
দুঃখী দেখে চেন না আমায়।।
প্রভু হরিচাঁদ কয়, থাক থাক মহাশয়,
যতদিন লয় তব মন।
যাহা ইচ্ছা তাই খাও, যাহা ইচ্ছা তাই লও,
কর সদা শ্রীহরি সাধন।।
থেকে ওঢ়াকাঁদি ধাম, সদা করে হরিনাম,
দুই তিন দিন পরে যায়।
কভু যায় রোজে রোজে, ময়দা চাপড়ী ভাজে,
ভোগ দিয়া সন্ধ্যারতি গায়।।
ঠাকুরের আজ্ঞাধীন, রহিলেন কিছুদিন,
একদিন ঠাকুরকে কয়।
এবে আমি আসি গিয়া, কিছুদিন বেড়াইয়া,
আসিয়া মিলিব তব পায়।।
গিয়া তারাইল গ্রামে, থাকি কাছারী মোকামে,
পেয়াদা হইব বলি রয়।
করেন পেয়াদাগিরি, দিবানিশি বলে হরি,
গোমস্তা ভাবেন একি দায়।।
না করেন রাজ কাজ, থাকিয়া কাছারী মাঝ,
দিবানিশি হরিগুণ গায়।
ইনি হ’ন হরিভক্ত, ইহাকে করিতে ত্যক্ত,
আমার যে উচিৎ না হয়।।
আমরা করিলে ত্যক্ত, রাজজী হবে বিরক্ত,
আমাদের মহাপাপ তায়।
নায়েব কহে তখন, তুমি প্রেম মহাজন,
কাছারীতে থাকা যোগ্য নয়।।
তব কার্য সুমাধুর্য, মোরা করি রাজকার্য,
কি জন্য বিষয় মধ্যে রও।
জেনে যে মানুষতত্ত্ব, হইয়াছ যে উন্মত্ত,
নয় সে মানুষ ঠাই যাও।।
আমরা বড় পাষণ্ড, কভু কারু করি দণ্ড,
তাহা দেখি তুমি দুঃখী হও।
কর গিয়া সাধুসঙ্গ, প্রেমকথা রসরঙ্গ,
যেখানে যাইয়া তুমি পাও।।
শুনিয়া এতেক বাণী, সাধু উঠিল অমনি,
ধীরে ধীরে করিল গমন।
যাত্রা করে হরি বলে, এমন সময়কালে,
আসিতেছে একটি ব্রাহ্মণ।।
পদেতে নাহি পাদুকা, তাহার পাইয়া দেখা,
পাদুকা ধরিয়া দিল তায়।
করে প্রেম কোলাকুলি, মস্তকের নামাবলী,
বেঁধে দিল তাহার মাথায়।।
গায় গরদ চাদর, বলে কার্য নাহি মোর,
এত বলি দিল তার গায়।
ফেলিয়া হাতের লাঠি, বামহাতে এক ঘটি,
তাই ল’য়ে পূর্বদিকে ধায়।।
রূপদাস বৈরাগীরে, দেখা পাইয়া তাহারে,
হাতে হাতে ধরিয়া চলিল।
আসি তার আখড়ায়, ঘটি ধরি দিল তায়,
হাতের ছাতিটা তাকে দিল।।
বলে তার পায় পড়ি, আমার মস্তক মুড়ি,
দেও ভেক হইব বৈরাগী।
ষষ্টি রৌপ্য মুদ্রা ছিল, তাহারে ধরিয়া দিল,
বলে মোরে কর অর্থত্যাগী।।