Page: 185

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৮৫

অগাধ জলের পরে, হাঁটিয়া গমন করে
মৃত্যুঞ্জয় তরী বেয়ে যায়।
গোস্বামীর সন্নিকটে, যবে তরী বেয়ে উঠে
সে সময় জলে সাঁতরায়।।
নৌকাপরে রেখে বটে, গলে বাস করপুটে
মৃত্যুঞ্জয় কহিছে তখন।
বলে গোস্বামীর ঠাই, মোর দেশে চল যাই
তরী পরে করি আরোহণ।।
হীরামন বলে দাদা, নিজ তরী বাহি সদা
তরঙ্গিণী নীরে ডুবি ভাসি।
নিতে তোমাদের দেশে, ইচ্ছা যদি মনে ভাসে
তবে তোমাদের নায় আসি।।
মৃত্যুঞ্জয় হস্ত ধরি, উঠাইল যত্ন করি
দ্রুতগতি তরী বেয়ে যায়।
মধুমতী নদী এসে, নদী মাঝখানে শেষে
হীরামন ঝাঁপ দিতে চায়।।
কেঁদে কয় মৃত্যুঞ্জয়, নামিও না ধরি পায়
নামিলে পাইব বড় শোক।
প্রভু বলে কি বলিস, তুইত আমারে নিস
আমারে ত নেয়না গোলোক।।
মৃত্যুঞ্জয় উচাটন, গোলোক ধরিয়া চরণ
কাঁদিয়া কহিছে উচ্চৈঃস্বরে।
জানিয়া আমার মন, গোঁসাই নামে এখন
কাজ কিবা এ জীবন ধরে।।
মনে যা ভেবেছি আমি, গোঁসাইত অন্তর্যামী
অন্তরেতে জানিয়া সকল।
এই নদী দিয়া পাড়ি, আগে যাব মম বাড়ী
বাড়ী নিব লেংটা পাগল।।
লেংটি এনে দিলে কেহ, পরিতে বলিলে সেহ
ওত কারু কথা না মানিবে।
যদি লেংটি নাহি পরে, গেলে বাড়ীর ভিতরে
মেয়ে লোকে দেখে লজ্জা পাবে।।
না বুঝিয়া পাই কষ্ট, হারে মোর দুরদৃষ্ট
কর্ম জালে বন্দী হইলাম।
অষ্ট পাশ মুক্ত যিনি, অন্তর্যামী শিরোমণি
হেন পদ পেয়ে হারালাম।।
গোঁসাই কহিছে দাদা, হাঁদলে গাধার বাঁধা
খাঁদা আধা দেহ নামাইয়া।
দেহ পড়ি দেহ পড়ি, মাসীবাড়ী মাসীবাড়ী
সূর্য মাসী আছে ডুমুরিয়া।।
লেংটি পরে অবশেষে, সূর্য নারায়ণ বাসে
গোঁসাই যাইয়া বসিলেন।
মাসী কই মাসী কই, আয় মাসী দেখে যাই
গোঁসাই ডাকিতে লাগিলেন।।
সূর্যনারায়ণ এসে, দণ্ডবৎ হ’য়ে শেষে
করজোড়ে রহে দাঁড়াইয়া।
গোঁসাই কহেন মাসী, তোরে বড় ভালবাসি
মাসীমারে দেহ ডাকাইয়া।।
পাতলার মাসী যিনি, তাহারে কর রাঁধুনী
শীঘ্র তাড়াও গৌরের মেয়ে।
বাজারে হয়েছে টান, পাতলা পাত দোকান
ক্রয়বান ফিরিয়া না যায়ে।
সূর্য হ’য়ে অতি স্ত্রস্ত, এনে এক নব বস্ত্র
গোস্বামীকে দিল পরাইয়া।
লেংটি পড়িয়া ছিল, তারক তুলিয়া নিল
লইলেন মস্তকে বাঁধিয়া।।
গোস্বামী বলে ডাকিয়া, সকলে লহ ভাগিয়া
লেংটি ধরে করে কাড়াকাড়ি।
সবে করে ধরাধরি, একটু একটু করি
সকলে সে লেংটি নিল ফাঁড়ি।।
কেহ গলে ঝুলাইল, কেহ মস্তকে বাঁধিল
প্লীহা কি যকৃত ছিল যার।
কারু ছিল কাশি জ্বরা, ধারণ করিল যারা
দুই দিনে রোগারোগ্য তার।।
বসন ফেলায়ে দিয়ে, গোঁসাই উলঙ্গ হ’য়ে
যে সময় যাত্রা করিলেন।
মেয়েলোক যত ছিল, গোস্বামীর কাছে এল
প্রণামী শ্রীপদ সেবিলেন।।
গোঁসাই উলঙ্গ বেশে, গোলোক বিশ্বাস এসে
এমন সময় উপনীত।
গোস্বামীর পদধরে, মেয়েরা রোদন করে
দেখিয়া গোলোক চমকিত।।
গোলোক বিশ্বাস কাঁদে, ধরিয়া গোস্বামী পদে
গোঁসাই কহিছে রে গোলোক।
যাইতাম তোর ঘরে, তুই নিলি না আমারে
দেখিয়া নিন্দিবে যত লোক।।
তোর বাড়ী যত নারী, তাহারা লজ্জিতা ভারি
নির্লজ্জ লোকের বাড়ী যাই।
মাসী বড় ভালবাসে, আসিয়া মাসীর বাসে
মাসীমার হাতে ভাল খাই।।