Page: 140
শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৪০
জমি স্বামী নন্দরায় নমঃশূদ্র তিনি।
রাখালে মারিতে যায় ধাইয়া অমনি।।
তিল ভেঙ্গে নাশ কৈলি আমার এ জমি।
যমালয় তোদের পাঠা’ব অদ্য আমি।।
রাখালেরা বলে মার রায় মহাশয়।
গোস্বামী না পেলে মোরা যাব যমালয়।।
এ বাক্য গোস্বামী যবে শুনিবারে পায়।
জয় হরি বল বলে উঠিয়া দাঁড়ায়।।
এই আমি এই আমি বলেন গোঁসাই।
রাখালেরা বলে তারে পেয়েছিরে ভাই।।
ওরে ভাই তিল আলা মারিবি’ত মার।
মারা ধরা বলে কিছু ভয় নাই আর।।
গোঁসাই বলেন ওরে কে মারিতে চায়।
দেখি কেবা মারে তারে ডেকে ল’য়ে আয়।।
রাখালেরা বলে গিয়া রায়ের গোচরে।
মার যদি এস বাবা ডেকেছে তোমারে।।
প্রভু কাছে যোড়করে কহে এক দাই।
আমার জমিতে এসে নাচো হে গোঁসাই।।
রায় কহে যাও যাও যে ডাকে তোমারে।
আমার জমির তিল গেছে একেবারে।।
আমার জমিতে আর যেওনা পাগল।
যাও যদি তিল ভেঙ্গে যাইবে সকল।।
দাই বলে এই তিল ক্ষেত্র মোর হয়।
নাচো গাও হরি বল যত মনে লয়।।
গোস্বামী বলেছে তোর তিল ভেঙ্গে যাবে।
দাই বলে তিল গেলে তিল দিতে হ’বে।।
যায় যাক থাকে থাক সামান্য এ তিল।
দয়া করি প্রেমভক্তি দেহ এক তিল।।
একতিল প্রেমভক্তি মোরে যদি দেহ।
পরিপূর্ণ হ’বে গোলা নাহিক সন্দেহ।।
মোর গৃহে না ধরিবে ছড়িয়ে পড়িবে।
ধরায় না ধরিবে বিরাজা পার যাবে।।
‘ম্লেচ্ছ যবন যারা মোরে কভু নাহি মানে।
এই যুগে তারাও কাঁদিবে মোর নামে’।।
প্রভুর প্রতিজ্ঞা পূর্বে যাহা যাহা ছিল।
শেষ ‘লীলার প্রধান’ সব সম্ভবিল।।
গোঁসাই তাহার মুখে হস্ত দিয়ে কয়।
নাচিব তিলের মধ্যে জয় হরি জয়।।
অমনি চলিল প্রভু রাখাল সঙ্গেতে।
দক্ষিণাভিমুখ হ’য়ে চলে সকলেতে।।
একবার দৌড়ে যায় দক্ষিণের আলি।
উত্তরাভিমুখ পড়ে চলিল সকলি।।
পুনরায় দৌড়ে যায় পশ্চিম আইলে।
আরবার পূর্ব আলি চলিল সকলে।।
আসে যায় নাচে গায় যেন মল্লযুদ্ধ।
নেচে নেচে তিল ভাঙ্গে করে কক্ষবাদ্য।।
তিল গাছ ভেঙ্গে চুরে নেচেছে রাখাল।
কিয়দংশ গাছে রৈল দুই এক ডাল।।
ডালপাতা ভূমিসাৎ পাড়ায় পাড়ায়।
ভেঙ্গে চুরে তিল গাছ প’ল মৃত্তিকায়।।
এইমত তিল নৃত্য গীতভঙ্গ করি।
পাগল বাহির হইল বলে হরি হরি।।
মহাসংকীর্তন মহা পীযুষের রস।
রসনা রসনা পেয়ে রসনা বিরস।।
গোস্বামীর ভোজের আয়োজন।
পয়ার।
নৌকা চলে খাল দিয়া পাগল কিনারে।
শিলনার বালারা সে নৌকা টেনে ধরে।।
আজ সবে এইস্থানে করুণ বিশ্রাম।
কৃতার্থ করুণ সবে করি হরিনাম।।
তাহা শুনি সব নৌকা লাগিল কিনারে।
বালাদের বাটী নাম সংকীর্তন করে।।
বাহির বাটীতে নাম সংকীর্তন হয়।
মহাসংকীর্তন প্রেমবন্যা বয়ে যায়।।
কেহ কাঁদে কেহ হাসে গড়াগড়ি যায়।
হরি হরি হরি হরি হরি হরি হরি ময়।।
মাতিল তিতিল বক্ষ বহে অশ্রুজল।
গোস্বামী ডাকেন কোথা রাখালের দল।।
শুনিয়া রাখালগণে দেয় হরিধ্বনি।
পাগলের সম্মুখেতে করি যোড়পাণি।।
গোস্বামী কীর্তন মাঝে যখন বিরাজে।
রাখাল মিশিল এসে কীর্তনের মাঝে।।
হাতে লড়ি গোস্বামী দাঁড়াল বাঁকা হয়ে।
রাখালেরা নাচে সুখে আবাধ্বনি দিয়ে।।
বাল বৃদ্ধ যুবা পৌঢ় কিংবা নর নারী।
ধন্য যুগে একযোগে বলে হরি হরি।।
তার মধ্যে বসেছে ঈশ্বর অধিকারী।
মন্ত্রদাতা গুরু সদা করে গুরুগিরি।।