Page: 088
শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৮৮
খর্জূর কন্তক তবে চারিটি আনিয়া।
নখতলে মাংস মধ্যে দিল বিঁধাইয়া।।
ভাল রজ্জু দিয়া দিল পিঠ মোড়া বাঁধা।
নাহি তাতে হা হা হুঁ হুঁ নাহি তাতে কাঁদা।।
কেহ যদি বলে কেন এত কষ্ট কর।
ওঝা বলে তোমরা তা বুঝিবারে নার।।
হা হা হুঁ হুঁ নাহি করে পাও নাহি দিশে।
যার দৃষ্টি তার কষ্ট ওর কষ্ট কিসে।।
হীরাতে কি হীরা আছে সে হীরা এ নয়।
তা হ’লে কি হারামের কাঁচা মাংস খায়।।
পুনর্বার বেকী অস্ত্র আগুনে পোড়ায়।
পোড়া ঘা উপরে যবে ধরিবারে যায়।।
এমন সময় উঠি হুঙ্কার করিয়া।
গাত্রমোড়া দিয়া দড়া ফেলিল ছিঁড়িয়া।।
হাত ঝাড়া দিলে কাঁটা খসিয়া পড়িল।
আঙ্গুল বন্ধন হাত মোড়ায়ে ছিঁড়িল।।
স্বাভাবিক ভাবে যে শরীর তার ছিল।
ভয়ঙ্কর দেহ তার দিগুণ বাড়িল।।
বেকী অস্ত্র কাড়িয়া লইল অতি কোপে।
আরক্তলোচন ক্রোধে ওষ্ঠাধর কাঁপে।।
দাঁড়াইল হীরামন অপরূপ দেহ।
যে দেখিল সে হইল জ্ঞান হারা মোহ।।
ভূমিকম্প প্রায় বাড়ী লড়িয়া উঠিল।
স্ত্রী পুরুষ নাহি হুশ ঢলিয়া পড়িল।।
ছিল সে চৈতন্য বালা পীড়ির উপরে।
তার দিকে ধেয়ে যায় বেকী অস্ত্র ধরে।।
কতদিনে শাস্তিভোগী মনে বড় কোপ।
ক্রোধভরে চৈতন্যরে মারে এক কোপ।।
সে কোপ লাগিল গিয়া চালের উপরে।
চাল কাটি খাম্বা কাটি লাগে তার শিরে।।
চেঁচায়ে চৈতন্য বলে রক্ষা করে কেবা।
রাখরে রাখরে ওরে কালাচাঁদ বাবা।।
কিয়দংশ কোপ লাগে চৈতন্যরে শিরে।
রক্ত বয় মোহ যায় বাক্য নাহি সরে।।
মোহপ্রাপ্ত ফকির সে চৈতন্য পাইল।
বাবারে চাচারে বলে চেঁচায়ে দৌড়িল।।
ফকিরের প্রতি পরে হইল ধাবমান।
ফেলিয়া মারিল সেই বেকী অস্ত্র খান।।
পাও কাটে ফকিরের বেকী অস্ত্র পশি।
দৌড়িয়া ফকির গেল চারি পাঁচ রসি।।
রুধিরের ধারা বহে পাও গেল কাটি।
অজ্ঞান হইয়া ভূমে করে ছটফটি।।
এল এল বলে ওঝা ওঠে আর পড়ে।
কৃষকেরা বলে শালা দূর পাতি নেড়ে।।
দলে দলে কৃষাণ রয়েছে মাঠ জুড়ে।
বসে বলে দূর দূর শালা পাতি নেড়ে।।
ফকির তাড়ায়ে পড়ে গৃহেতে প্রস্থান।
হীরামনে দেখে সবে ভয়ে কম্পমান।।
সবে চিত ভয়ে ভিত ভূতবৎ রয়।
সবে ভাবে যেন কবে প্রমাদ ঘটায়।।
সাধুজনে বলে এযে কৃষ্ণ প্রেমোন্মাদ।
এ জনার মন রহিয়াছে হরিচাঁদ।।
অক্রুর গুরুচরণ আর কোটিশ্বর।
তারা বলে এ মানুষ রুদ্র অবতার।।
মন মানুষেতে মন হ’য়েছে ইহার।
সামান্য মানুষ নহে উগ্র কলেবর।।
যে ভাবে ঘটেছে সেই ভাবেতে থাকুক।
কেহ কিছু না বলিও যা ইচ্ছা করুক।।
বিনয় চৈতন্য বলে শুন ওরে বাপ।
অপরাধী তোর ঠাই করিয়াছি পাপ।।
শুনি কথা হীরামন মৃদুভাষে বলে।
লাফিয়া প্রস্রাব কর কমলের দলে।।
হারে কটা ভেক বেটা কর কট্ কট্।
ষট্ পদে সুধাস্বাদে তুমি কর হট্।।
এইভাবে কিছুদিন নিজালয় থেকে।
চলিলেন হীরামন উত্তরাভিমুখে।।
হরি হরি হরি হরি হরি হরি বল।
হরি বলি রসনা শ্রীহরিধামে চল।।
গোস্বামীর শ্রীধামে গমন।
পয়ার।
সোজা সুজি চলিলেন উত্তার নয়নে।
পথ কি বিপথ তাহা কিছুই না জানে।।
বাড়ীর উত্তর পার্শ্বে থেকে কিছুক্ষণ।
ঝুঁকে ঝুঁকে করে হরিনাম উচ্চারণ।।
পরিধান বস্ত্র ফেলে কিঞ্চিৎ ছিঁড়িয়া।
চলিলেন মাত্র এক লেংটি পরিয়া।।
সম্মুখে বাঁধিল অগ্রে বিল খাগাইল।
মল্লবিল হাটঝাড়া, তালতলা বিল।।