Page: 235

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২৩৫

কহে বলে পাল ধন্য ক’ল হরিপাল।
কেশবপুর নিবাসী শ্রীগোলোক পাল।।
তার জ্যেষ্ঠ পুত্র নাম হরিশ্চন্দ্র পাল।
কেহ বলে হরিপাল পালের ভূপাল।।
মধ্যম দুর্গাচরণ অপরে প্রহলদ।
কনিষ্ঠ শ্রীগৌর পাল নামেতে উন্মাদ।।
চারি পুত্র সহ মাতোয়ারা হরিবোলা।
কেহ কেহ হরিপালে বলে হরিবোলা।।
হরিবোলা হ’য়ে হরি মাতাইল পাল।
সবে বলে হরিপাল পালের ভূপাল।।
এইভাবে সবাই দিতেছে হরিধ্বনি।
জটকের বিলে তার হ’ল প্রতিধ্বনি।।
হরিধ্বনি শুনা যায় গগন মণ্ডলে।
জ্ঞান হয় দেবগণে হরি হরি বলে।।
সকলে থামিল শুনি হরি হরি ধ্বনি।
তবু শূন্যে শুনা যায় হরি হরি ধ্বনি।।
শুনে প্রেমানন্দ চিত্ত মতুয়া সকলে।
লম্ফ দিয়া যেতে চায় দেবতার দলে।।
অক্ষয় ঠাকুর আর হরিশ্চন্দ্র পাল।
পূর্ণচন্দ্র অধিকারী মতুয়া মিশাল।।
গুরু গিরি করিতেন শিষ্য ছিল তার।
শিষ্য সহ মাতিলেন আনন্দ ওপার।।
রসনা তারক সঙ্গে এই চারিজন।
কতক মতুয়া আছে সঙ্গেতে মিলন।।
এক এক দলে লোক অন্যূন পঞ্চাশ।
সবে মিলে হরি বলে মনেতে উল্লাস।।
জটকের বিল মধ্যে গরু পালে পাল।
দশ বিশ গরু রাখে একেক রাখাল।।
কেহ কেহ বিল কূলে গরু বাঁধিয়াছে।
দলে দলে রাখালেরা খেলা করিতেছে।।
হরি বোল শুনে তারা আনন্দ হৃদয়।
কেহ কেহ হরি বলে দৌড়াইয়া যায়।।
দৌড়িয়া দৌড়িয়া মাঝে মাঝে মারে লম্ফ।
আনন্দে বসুধা নাচে যেন ভূমিকম্প।।
তার মধ্যে তারক রসনা বলে বোল।
এই ঠাই দাঁড়া দেখি মতুয়া সকল।।
আর ছয় দল রহিয়াছে ছয় ঠাই।
একদল মাঝখানে দাঁড়ায় সবাই।।
তারক কহিছে তোরা ছিলি বৃন্দাবনে।
গোচারণ করিতি সে গোপালের সনে।।
অন্য অন্য ঠাই যদি যেত ধেনু সব।
এক ঠাই হত শুনি শ্যাম বংশী রব।।
কানু গিয়া গোচারণে বাজাইত বেণু।
তোরা দিতি আবাধ্বনি নাচিত সে ধেনু।।
সেই কানু যশোদানন্দন দয়াময়।
এখন হইল যশোমন্তের তনয়।।
সেই যশোমন্ত সুত প্রভু হরিচাঁদ।
তোদের হৃদয় আছে তারে ধরা ফাঁদ।।
তোরা সেই চাঁদ সঙ্গে অনুসঙ্গী ছিলি।
প্রভু আগমনে তোরা সঙ্গে সঙ্গে এলি।।
একবার ব্রজভাবে দেরে আবাধ্বনি।
ব্রজবুলি বল সেই রাখালিয়া বাণী।।
স্থানে স্থানে পালে পালে ধেনু বৎসগণ।
তাহা দেখি ব্রজভাবে দ্রবীভূত মন।।
এই সেই বৃন্দাবন সেই গোবর্ধন।
খেলা করে এই সেই রাখালের গণ।।
উন্মত্ত রাখাল দিকে বলেছে তারক।
তোরা ত ব্রজেতে ছিলি ব্রজের বালক।।
ব্রজভাবে একবার বল হারে রে রে।
অদ্য তোরা সবে মিলে নাচ একত্তরে।।
তাহা শুনি রাখালেরা হল একত্তর।
রাখালেরা নৃত্য করে মতুয়া ভিতর।।
চৌদিকে মতুয়াগণ গোলাকার হ’য়ে।
নাচে গায় লম্ফ দেয় হরিধ্বনি দিয়ে।।
রাখালেরা প্রেমে মেতে বলে হরিবোল।
জলে হরি স্থলে হরি শূন্যে হরিবোল।।
মত্ত হ’য়ে প্রেমাবেশে কীর্তন ভিতরে।
তারক টানিয়া নিল অক্ষয় ঠাকুরে।।
পূর্ণচন্দ্র হরিপাল ধরাধরি করে।
বাঁকা হ’য়ে দাঁড়াইল আবাধ্বনি করে।।
শুনে আবাধ্বনি করে যতেক রাখাল।
তাহা শুনি নাচে সব গোধনের পাল।।
নাচিতে লাগিল বাঁধা গরু দড়ি ছিঁড়ে।
উচ্ছ পুচ্ছ নাচে গরু গলা করে লম্বা।
উর্দ্ধ কর্ণ মুণ্ড নেত্র করে হাম্বা হাম্বা।।
কতদূরে দৌড়ে গিয়া দাঁড়াইয়া কম্প।
তার মধ্যে কোনটা দৌড়িয়া মারে লম্ফ।।
তাহা দেখি সবে মিলে কাঁদিয়া কাঁদিয়া।
নাচিছে মানুষ গরু একত্র হইয়া।।