Page: 133

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৩৩

কত ঠাই কতদিনে কর দৌড়াদৌড়ি।
অদ্য যাও গজারিয়া লক্ষ্মণের বাড়ী।।
শুনিয়া গোলোকচাঁদ করিল গমন।
বেগেতে চলিল হয় হরষিত মন।।
জয় হরি বল মন গৌর হরি বল।
নামধ্বনি করি চলে তেজেতে অনল।।
ক্ষণে লম্ফে ক্ষণে দৌড়ে নামে করে দর্প।
বিল মধ্যে দেখে এক অজগর সর্প।।
বিল মধ্যে খাল এক আড়ে দুই নল।
নামিল পাগল তাতে উরু সম জল।।
সেই জল মধ্যে হ’তে উঠে অজগর।
ভেসে উঠে তাহার প্রকাণ্ড কলেবর।।
দুই চক্ষু জ্বলে যেন আকাশের তারা।
নাসারন্ধে কর মুষ্ঠি যায় যেন ধরা।।
চক্ষু মূল লাল নাসারন্ধ্রে টানে জল।
হইতেছে শব্দ বুড় বুড় কল কল।।
শ্বাস পরিত্যাগে স্বাহা স্বাহা শব্দ করে।
নর্দমার জল যেন বেগে পড়ে সরে।।
সর্ব অঙ্গ অজগর কালকূট বর্ণ।
মস্তক উপর মণি হরিপদ চিহ্ন।।
গোস্বামীর অঙ্গে যেই কান্থাখানি ছিল।
শ্বাস পরিত্যাক্ত জলে কান্থা ভিজে গেল।।
বদন ব্যাদান করি পড়িল অমনি।
দন্ত দুই পাঁতি যেন মুক্তার গাঁথনি।।
তাহা দেখি পাগলের লাগে চমৎকার।
বুঝিতে না পারে মর্ম কি হ’ল ব্যাপার।।
খাল পাড় হয়ে কূলে রহে দাঁড়াইয়া।
অজগর পানে প্রভু রহিল চাহিয়া।।
এ কখন সর্প নহে ভাবে মনে মনে।
ধাইয়া চলিল সর্প পাগলের স্থানে।।
হাঁ করিয়া পাগলকে চলিল গ্রাসিতে।
পাগল দৌড়িয়া যায় তাহার ত্রাসেতে।।
ক্ষণেক দৌড়িয়া শেষে দেখেন ফিরিয়া।
আসিতেছে অজগর মুখ বিস্তারিয়া।।
গোস্বামী ভেবেছে মনে ভয় করি কার।
মরণ জীবন সম হরিনাম সার।।
লইয়া বাবার নাম মারিতেছি ডঙ্কা।
চৌদ্দ ভুবনের মধ্যে কারে করি শঙ্কা।।
এসেছে আমাকে খেতে উহাকে ধরিব।
ধরিয়া লইয়া মহাপ্রভুকে দেখাব।।
হনুমান গিয়াছিল গন্ধমাদনেতে।
পর্বত মাথায় রাখে সূর্য শ্রবণেতে।।
ভরত বাটুলাঘাতে মুখে উঠে রক্ত।
রামনাম লইয়া বাঁচিল রাম ভক্ত।।
প্রথমতঃ কুম্ভিরিণী করিল উদ্ধার।
কালনেমী রাক্ষসের জীবন সংহার।।
কাহারে না করে ভয় রাম নাম জোরে।
নির্ভয় শরীরে হনু রামকার্য করে।।
কিছার মিছার প্রাণে কেন বেঁচে রই।
ভাবিতেছি মানব জনম হ’ল কই।।
বুঝি এই হেতু পাঠালেন কল্পতরু।
সর্প দর্প দেখে কেন হই এত ভীরু।।
বদন ব্যাদান করি যায় অজগর।
দর্প করিলেন প্রভু সর্প ধরিবার।।
জয় হরি বল রে গৌর হরি বলে।
লম্ফ দিয়া প’ড়ে অজগরে ধ’রে তুলে।।
অতি দর্পে কহে সর্পে তোরে ধ’রে নিব।
ওরে ফণী তোর মণি প্রভু পদে দিব।।
ফণীবর পেয়ে ডর তখনি দাঁড়ায়।
সুন্দর কুমার হ’য়ে দৌড়াইয়া যায়।।
ধেয়ে যায় ফণী, হ’য়ে সুন্দর বালক।
পিছে পিছে ধেয়ে যায় গোস্বামী গোলোক।।
কৃষকেরা হাল ধরা করিছে দর্শন।
যোগালে রাখালে তারা একাদশ জন।।
বালক সেখানে গিয়া বলে সবাকারে।
রক্ষা কর তোমরা এ বেটা মোরে মারে।।
তাহা শুনি কৃষকেরা রুষিয়া উঠিল।
দাঁড়াও এখানে দেখি কোন বেটা এল।।
আমাদের কাছে তুমি আসিয়াছ হেথা।
তোমাকে মারিবে হেন কাহার যোগ্যতা।।
তাহা শুনি গোস্বামী আইলেন বাহুড়ী।
উপনীত হ’ল গিয়া লক্ষ্মণের বাড়ী।।
আহারাদি করিলেন লক্ষ্মণের বাসে।
পাগলামী করে ক্ষণকাল বীর রসে।।
বীর রসে যান ভেসে গোলোক গোঁসাই।
ওঢ়াকাঁদি আসিলেন ঠাকুরের ঠাই।।
পুষ্করিণী তীরে হরি বসিলেন এসে।
কিছুদূর গোলোক নিভৃতে গিয়া বসে।।
প্রভু হরিচাঁদ জিজ্ঞাসিলেন গোলোকে।
লক্ষণ কেমন আছে কি এসেছ দেখে।।