Page: 219

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২১৯

তব লীলা দর্শনে উদ্যোগী মম হিয়া।
কিছুদিন বেড়াইয়া আসিব ফিরিয়া।।
এত বলি মহাসাধু করিল গমন।
এবে শুন শ্রীক্ষেত্র প্রসাদ বিবরণ।।
একদিন বসি প্রভু পুষ্করিণী কূলে।
ক্ষেত্র বাসী দুই পাণ্ডা এল হেন কালে।।
অনিমেষ নেত্রে রূপ করি দরশন।
সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করি স্পর্শিল চরণ।।
প্রভুকে দেখিয়া বলে চিনেছি তোমায়।
ফাঁকি দিয়া লুকাইয়া এসেছ হেথায়।।
শ্রীধাম উৎকলে আছ দারুব্রহ্ম মূর্তি।
তাহাতে তোমাতে এক পরমার্থ আর্তি।।
তুমি তিনি অভেদ আমরা নহে চিনি।
আদেশে জানা’লে প্রভু তাই মোরা জানি।।
পাণ্ডা কহে প্রভু হাসে দিয়া করতালি।
নড়া’লের ভবানী তা শুনিল সকলি।।
ভবানী দাঁড়িয়া ছিল মহাপ্রভু ঠাই।
কাঁদিয়া ব্যাকুলা তার অন্য জ্ঞান নাই।।
পাণ্ডা কহে তুমি হও নন্দের নন্দন।
ত্রেতাযুগে করেছিলে রাবণ নিধন।।
এবে ওঢ়াকাঁদি এসে পাতকী তরা’লে।
জগন্নাথ আবেশেতে জনম লভিলে।।
কৃষ্ণ আবেশেতে প্রভু কৈল গোষ্ঠলীলে।
শ্রীগৌরাঙ্গ আবেশেতে হরিনাম দিলে।।
তিন শক্তি আবির্ভূত এক দেহ ধরি।
করিলে মানুষ লীলা মধুর মাধুরী।।
উদাসীন গিরিপুরি করিলেন উদ্ধার।
হয় নাই হবে না এমন অবতার।।
আদেশ করিয়া দিলে খোদ পাণ্ডা ঠাই।
ইচ্ছা করে পেট পুরে পায়সান্ন খাই।।
সেই পায়সান্ন পাক কমলার হাতে।
খোদ পাণ্ডা গেল পায়সান্ন ভোগ দিতে।।
ভোগ দিয়া মন্দিরের কপাট আঁটিল।
ভোগ না লইল সে কপাট না খুলিল।।
খোদ পাণ্ডা দ্বার খুলে মন্দিরেতে যায়।
স্বর্ণথালা শূন্য দেখে ভোগ নাহি পায়।।
খোদ পাণ্ডা হত্যা দিয়া রহিল তখন।
শূন্যে হ’ল শূন্য বাণী প্রভুর বচন।।
পায়সান্ন পাক ইচ্ছা বহু দিনাবধি।
এই অন্ন পাঠাবে শ্রীধাম ওঢ়াকাঁদি।।
করিবারে কৃষ্ণ সেবা আমার মনন।
তেকারণে পায়সান্ন করাই রন্ধন।।
শ্রীগৌরাঙ্গ রাম কৃষ্ণ গোপাল গোবিন্দ।
এক ভোগে হইবেক সবার আনন্দ।।
আমার ইচ্ছায় হইয়াছে এক কাণ্ড।
মন্দিরেতে দেখ গিয়া এক মেঠে ভাণ্ড।।
দেখ গিয়া তাহাতে আছয় মিষ্ট অন্ন।
মোর পিছে বামভিতে ভাণ্ড পরিপূর্ণ।।
শিবনাথ ভবনাথ দুই পাণ্ডা দিয়ে।
পায়সান্ন ওঢ়াকাঁদি দেহ পাঠাইয়ে।।
ফরিদপুর জিলা তেলীহাটী পরগণে।
মুকসুদপুর থানা তাহার দক্ষিণে।।
তাহার মধ্যেতে আছে ওঢ়াকাঁদি ধাম।
সাধু যশোমন্ত সুত হরিচাঁদ নাম।।
ঝটপট কর কার্য আর কিবা চাও।
শীঘ্র এই ভাণ্ড সেই শ্রীধামে পাঠাও।।
সেই আমি, আমি সেই নহে ভেদ ভিন্ন।
সেই দেহে মোর সেবা হইবে এ অন্ন।।
তব আদেশেতে আসিয়াছি ভাণ্ড ল’য়ে।
বৈঠ প্রভো! দিব তব শ্রীমুখে তুলিয়ে।।
ক্ষেত্র হ’তে একদিন পথে আসিলাম।
নিশিযোগে বৃক্ষমূলে শয়নে ছিলাম।।
শয়নে ছিলাম দুই ভাই নিদ্রাবেশে।
জগন্নাথ বলরাম কহে স্বপ্নাদেশে।।
বলিলেন অন্ন ল’য়ে যাওরে সত্বরে।
জগন্নাথ দেখা পাবে পুষ্করিণী তীরে।।
প্রভুর আদেশে মোরা এলাম এদেশে।
ওহে প্রভো সেইভাবে তোমা দেখি এসে।।
পাণ্ডা দিল ভাণ্ড খুলি কি দিব উপমা।
চেয়ে দেখে ভাণ্ড মুখে উঠিতেছে ধুমা।।
প্রেমানন্দে দুই পাণ্ডা পরম আন্তরিকে।
একটু একটু দোঁহে দিল প্রভু মুখে।।
প্রভু বলে প্রসাদ এনেছ যেই দিনে।
আমি ইহা গ্রহণ করেছি সেই দিনে।।
এখনে তোমরা লও ফিরে মোরে দিও।
যাহা হোল আর কারে ইহা না বলিও।।
পাণ্ডা কহে মোরা জানি জানে সে দুজন।
ভাগ্যবান যেই সেও জানুক এখন।।
কে জানে তোমার খেলা কে বুঝিতে পারে।
অনন্ত না পেল অন্ত অভ্রান্ত অন্তরে।।