Page: 152

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৫২
তথা দিয়ে দেখে সবে মোহ হইয়াছে।
রাই কাঁদি কহিলেন পাগলের কাছে।।
পাগল যাইয়া শম্ভুনাথের ভবনে।
হরি বলি সবাকার করা’ল চেতন।।
গঙ্গাচর্ণা মহারাস পাগলের কাজ।
রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।
পাগলের তালবৃক্ষ ছেদন।
পয়ার।
কতদিন পর্যন্ত সে রাই ভাবে মনে।
পাগলের কার্য কিছু বুঝিতে পারিনে।।
অমানুষী কার্য সব না বুঝে দেবতা।
আমি কোন ছার এর মর্ম পা’ব কোথা।।
পাগল চাঁদের দেখি মহিমা অপার।
শ্রীমন্ত লোকের ভক্তি হইল সবার।।
রাইচরণের ভক্তি একান্ত অন্তরে।
মন হ’ল পাগলকে আনিবার তরে।।
রাইচরণের নাই আশার অবধি।
নারিকেল বাড়ী গিয়া গেল ওঢ়াকাঁদি।।
পাগল বসিয়া আছে ঠাকুরের বামে।
রাই গিয়া ঠাকুরের শ্রীপদে প্রণামে।।
ঠাকুরে জিজ্ঞাসা করে আ’লি কোথা হ’তে।
মনের মানসা তোর পাগলকে নিতে।।
রাই বলে আজ্ঞা প্রভো! অই মনোনীত।
বুঝিয়া করুণ কার্য যে হয় উচিৎ।।
ঠাকুর ইঙ্গিত কৈল গোলোকের পানে।
গোলোক ইঙ্গিত বুঝি উঠিল তখনে।।
অমনি চলিল রাইচরণ সঙ্গেতে।
ঠাকুর নিকটে রাই নারিল বসিতে।।
নারিকেল বাড়ী গিয়ে পাগলামী করে।
মারপিট করে জোরে যারে তারে ধরে।।
পদাঘাত মুষ্ট্যাঘাত চপেট আঘাত।
দশ বার জনে করে ভূমিতে নিপাত।।
পরে গেল করপাড়া যুধিষ্ঠির বাড়ী।
এক লাউ কাটিয়া পুরিল এক হাঁড়ি।।
জ্বাল দিয়া হাঁড়ির উপরে রেখে হাঁড়ি।
উঠানে আনিয়া ভাঙ্গে লাউ পোড়া হাঁড়ি।।
গোস্বামী তখন রাগে দর্প করে অতি।
রাইচরণের পৃষ্ঠে মারে দুই লাথি।।
দর্প করি বলে রাই শীঘ্র যারে বাটী।
বাড়ী আছে তালগাছ শীঘ্র ফেলা কাটি।।
তাহা শুনি রাই তবে বাটীতে আসিল।
রাত্রি এল তালগাছ কাতিতে নারিল।।
পাগল যথা তথায় পাগলামী করে।
পাটগাতী খেয়াঘাটে রাত্রি দ্বিপ্রহরে।।
পাটনীর ঘর খেয়া ঘাটের উপর।
বলে ওরে পাটনী আমাকে পার কর।।
পাটনী কহিছে রাগে তুই কার বেটা।
এত রাত্রে বল তোরে পার করে কেটা।।
জয় হরি বল মন গৌর হরি বল।
দর্প করি যখনেতে উঠিল পাগল।।
পাটনীর হৃদকম্প হৈল তাহা শুনে।
নিত্য পার করি মন্দ ব’লেছি না চিনে।।
রাবণ পাটনী নাম হয় যে আমার।
পার করি অন্তে যদি মোরে কর পার।।
প্রভু বলে যাহা দিবি পাবি সেই ধন।
হরি তরাইবে তোরে বলিনু বচন।।
এতবলি পাগল চলিল গঙ্গাচর্ণা।
রাইচরণের বাড়ী চলে উগ্র মনা।।
বলে রাই মোর বড় ভ্রম হইয়াছে।
আমাকে সুস্থির কর এসে মোর কাছে।।
রাই ডেকে বলে তার রমণীর স্থান।
পাগলকে সুস্থ করি তৈল জল আন।।
তাহা শুনি ক্রোধেতে পাগলচাঁদ কয়।
তেলে জলে সুস্থ হওয়া পাগল এ নয়।।
তালগাছ কাটিতে তোমাকে আমি কই।
তাহা যদি কেটে ফেল তবে সুস্থ হই।।
রাই কহে আসিতে যে রাত্রি হ’ল মোর।
অবশ্য কাটিব গাছ নিশি হ’লে ভোর।।
প্রভাত সময় তালগাছ কেটেছিল।
গাছের ডাগুয়া পাতা বাটীতে রাখিল।।
বাস্তু ঘর বেড়া সঙ্গে বেড়া হেলা দিয়া।
ডাগুয়া নীচায় পাতা উপরে রাখিয়া।।
পাগল তাহার পরদিন ফিরি ঘুরি।
গঙ্গাচর্ণা এল রাইচরণের বাড়ী।।
রাত্রিযোগে পাগল সে ডাগুয়া পাতায়।
আগুন লাগা’য়ে দিয়া নাচিয়া বেড়ায়।।