Page: 246

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২৪৬
দুই তিন জোলা খাল পার হ’য়ে গেল।
দুর্গম বাদার মধ্যে হাঁটিয়া চলিল।।
হরিপাল বলে ওরে গদাই বাওয়ালি।
কই তোর কাঁটা গাছ কোথা ল’য়ে আলি।।
গদা বলে হরিপাল বুঝিতে না পার।
সময় থাকিতে পরকাল চিন্তা কর।।
আমার নিয়ম আছে বার্ষিক এ স্থান।
একটি মানুষ দেই বাঘের যোগান।।
সেই জন্য আসিয়াছি তোমারে লইয়ে।
তোরে দিয়ে সেই বার্ষিক যাব শোধ হয়ে।।
হরিপালে ধরে তথা বসাইয়া রাখে।
দূরে গিয়ে গদাই চালান মন্ত্র ডাকে।।
বসিলেন হরিপাল নয়ন মুদিয়া।
মরিলাম হরিচাঁদ বিদেশে আসিয়া।।
কেন মোরে বাদায় পাঠালে স্বপ্নাদেশে।
রাখ মহাপ্রভু আমি মরিনু বিদেশে।।
এ বিপদে যদি পদে স্থান নাহি দিবে।
অকলঙ্ক নামে তব কলঙ্ক রহিবে।।
বাঘে খাবে এত ভাবি ছেড়ে দিল দেহ।
চক্ষেধারা জ্ঞান হারা পড়ে দিল মোহ।।
কতক্ষণ তথা অচৈতন্য হ’য়েছিল।
দৈবে এক মহা পুরুষ তথায় আসিল।।
হরিপালে উঠাইল ধরে দুই হাতে।
বলে আমি আসিয়াছি ওঢ়াকাঁদি হ’তে।।
ভয় নাই বাছারে নয়ন মেলে থাক।
গদাই কি করে তাহা ব’সে ব’সে দেখ।।
হরি গ্রীবা পরে হরি বসে পাছা দিয়ে।
দুই দিকে দুইপদ বক্ষে ঝুলাইয়ে।।
দাঁড়িয়ে রহিল এক লৌহ গদা হাতে।
হরিপাল বসিয়া রহিল নির্ভয়েতে।।
উরুযুগ বক্ষে চাপি বঙ্কিম জঙ্গায়।
যেন নরসিংহ মূর্তি ভয়ংকর কায়।।
হরিপাল বাহুযুগে উরু চাপি ধরি।
শ্রীচরণে হেরি দুনয়নে বহে বারি।।
জীবমানে হেরি নাই শ্রীচরণ তরী।
দেখিব দেখিব মনে আশা ছিল ভারি।।
সেই আশা পূর্ণ হ’ল নৌকা বিসর্জনে।
বর্তমানে দেখিলা গদাইর গুণে।।
মৃত্যুঞ্জয় বিরচিত স্তোত্র গীতি যাহা।
অঙ্গ চিহ্ন লক্ষণাদি দেখিলাম তাহা।।
মন্ত্র পঠি ডাকে গদা হ’ল এক শব্দ।
ভূমিকম্পে প্রায় শব্দে বনজন্তু স্তব্ধ।।
সব পক্ষী উড়িল নিদান ডাক ছাড়ি।
চকের মধ্যেতে যেন মহা হুড়াহুড়ি।।
ভীষণ শার্দূল এক তথায় আসিয়া।
হরিপাল সম্মুখে পড়িল লম্ফ দিয়া।।
ব্যাঘ্র এসে অল্প মাত্র রহিল তফাৎ।
ব্যবধান অনুমান চারি পাঁচ হাত।।
লক লক জিহ্বা একহাত পরিমাণ।
লালাইছে বাহির করিয়া জিহ্বা খান।।
গর্জন করিছে ব্যাঘ্র হেন জ্ঞান হয়।
ভীমনাদে মহাক্রোধে মাটি ফেটে যায়।।
দণ্ডচারি এইরূপে গর্জন করিল।
লম্ফ দিয়া দৌড়াইয়া ব্যাঘ্র পালাইল।।
গদাইর দিকেতে হইল ধাবমান।
তাহা দেখি উড়ে গেল গদাইর প্রাণ।।
শঙ্কা পেয়ে গদাই কহিছে অতঃপরে।
বলে বাবা হরিপাল রক্ষা কর মোরে।।
না বুঝিয়া হেন কার্য করিয়াছি তোমা।
তুমি সাধু হরি ভক্ত মোরে কর ক্ষমা।।
তুমি মম পিতা হও আমি তব ছেলে।
মরেছি মরেছি বাবা রাখ পুত্র বলে।।
আর আমি আসিব না বাওয়াল করিতে।
এইবার বাঁচাইয়া লহরে দেশেতে।।
স্কন্ধে থেকে প্রভু ডেকে বলে হরিপালে।
বাঁচাইয়া লহ ওরে হ’ল যদি ছেলে।।
এ বেটারে যদি অদ্য বাঘে ধরে খাবে।
দুর্গম বাদার পথ কে দে’খায়ে ল’বে।।
হরিপাল আজ্ঞা দিল ব্যাঘ্র ফিরে গেল।
ভয় নাই বলিয়া গদারে আশ্বাসিল।।
দয়া করি গদাইর প্রাণ দান করি।
তরীতে আসিল হরি বলে হরি হরি।।
পুনর্বার সায়রে জোয়ারে দিল টান।
এক সঙ্গে ভাসাইল তরী তের খান।।
খুলনা আসিল যবে ট্যাক্সের অফিসে।
হরিপালের নৌকা সকলের পাছে আসে।।
ট্যাক্স ঘাটে সকলের নৌকা লাগাইল।
বিশ ত্রিশ টাকা প্রতি নৌকায় লাগিল।।
হরির তরণী না রাখিল ট্যাক্স ঘাটে।
নিজ ঘাটে নৌকা বেয়ে এল নিঃসঙ্কটে।।