Page: 244

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২৪৪

ভক্ত হরিপাল উপাখ্যান।

পয়ার।

গোলোক পালের পুত্র হরিপাল নামে।
যশোহর অধীনে কেশবপুর গ্রামে।।
ওঢ়াকাঁদি হরিচাঁদ নিকটে না যায়।
উদ্দেশ্যে মতুয়া হ’য়ে হরিগুণ গায়।।
হরিপাল হরিবোলা হইয়া গিয়াছে।
মতুয়া বলিয়া নাম প্রচার হ’য়েছে।।
এই সময়েতে তার হ’য়েছিল জ্বর।
জ্বরেতে অজ্ঞান প্রায় হইয়া বিকার।।
তার পিতা ভয় ভীত হইয়া মনেতে।
ডাক্তার আনিতে যায় ঔষধ খাওয়াতে।।
অমনি চৈতন্য হ’য়ে হরিপাল কয়।
হরিবোলা হ’য়ে কি ঔষধ খাওয়া যায়।।
হরিবোলা হ’য়ে যেবা ঔষধ খাইল।
জানিবে সে হরিবোলা সেদিন মরিল।।
তবে যদি বাঁচে কোন ঔষধি খাইয়ে।
সে বাঁচা সে মিছা বাঁচা বাঁচে কি লাগিয়ে।।
আমি তারে মনে করি জ্ঞান প্রাণ হত।
মায়াদেহ কায়া যেন ছায়াবাজী মত।।
না রহে নৈষ্ঠিক তার নাম নিষ্ঠা হারা।
দিন দুই চারি খেলা জীয়ন্তে সে মরা।।
ওঢ়াকাঁদি হরিচাঁদ হ’য়েছে উদয়।
পতিত পাবন প্রভু বড় দয়াময়।।
যাই যাই ভাবি আমি যাইতে না পারি।
শ্রবণে শুনেছি নাম চক্ষে নাহি হেরি।।
না দেখিতে পারিলাম প্রভুর শ্রীঅঙ্গ।
হেনকালে শুনিলাম লীলা হ’ল সাঙ্গ।।
গোলোকের নিত্যধন গেলেন গোলোকে।
উদ্দেশ্য ভাবি শ্রীপদ মনের পুলকে।।
শুনেছি সাধুর মুখে কহে পরস্পর।
অধর ধরিবি যে ধরেছে তারে ধর।।
অধর মানুষ যে ধরেছে ধরাপর।
মানুষ পড়িবে ধরা সে মানুষ ধর।।
সূর্যনারায়ণ খুড়া ডুমুরিয়া আছে।
ঠাকুরের কথা শুনিয়াছি তার কাছে।।
আমারে বাঁচাও যদি ওঢ়াকাঁদি যাও।
হুকুম আনিয়া পিতা আমাকে বাঁচাও।।
চলিল গোলোক পাল ওঢ়াকাঁদি যেতে।
ডুমুরিয়া গেল সূর্যনারায়ণে নিতে।।
কহিল আমার সাথে যেতে হবে ভাই।
হরিপুত্র গুরচাঁদে আনিবারে যাই।।
সূর্যনারায়ণ এল হরি হরি বলে।
তেতুল গুলিয়া খাওয়াইল হরিপালে।।
কাঁচি দধি পান্তাভাত খাওয়াইয়া দিল।
কাঁচা জলে স্নান জ্বর ধুয়ে ফেলাইল।।
সূর্যনারায়ণ ল’য়ে পরামর্শ করে।
বল খুড়া ওঢ়াকাঁদি যাই কি প্রকারে।।
হরিচাঁদ জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রভু গুরুচাঁদ।
সে প্রভু কেমন আমি দেখিব সে পদ।।
করিলেন দিন ধার্য ওঢ়াকাঁদি যেতে।
ঠিক হ’ল সূর্যনারায়ণ যা’বে সাথে।।
একখানা নৌকা আছে বাওয়ালে পাঠাবে।
নৌকা চালাইয়া শেষে ওঢ়াকাঁদি যাবে।।
নৌকার চালান দিল বাওয়ালেতে গেল।
বাদায় সুন্দরী বনে গাছ কাঁটা ছিল।।
চাঁদপাই দক্ষিণে সে সুন্দরীর চক।
সেখানে কাটিল গাছ মনেতে পুলক।।
গদাই নামেতে সেই বাওয়ালির পাড়া।
সেই চকে গাছ কাটে পড়ে গেল সাড়া।।
এদিকেতে ওঢ়াকাঁদি মানসী করিয়া।
পাড়ার বাওয়াল সবে কাঠ কাটে গিয়া।।
কাটিয়া কাটিয়া নিয়া নৌকায় বাঁধিল।
বাবা হরিচাঁদ বলি নৌকা ছেড়ে দিল।।
সে পাড়ার নৌকা ছিল অষ্টাদশ খান।
সব নৌকা সায়রে জোয়ারে দিল টান।।
চিলা হতে নৌকা ছাড়ে জোয়ারের গোণে।
রাত্রি দেখে নৌকা রাখে মাকড়ের টোনে।। (ঢোনে)
নৌকা রেখে সবে ঘুমাইল বিহুঁশিতে।
ভাটা লেগে তরণী ডুবিল অর্ধ রাতে।।
বাওয়ালিরা চারিজন নায় বাঁধে কাঁছি।
চেঁচা চেঁচি করে বলে কিসে মোরা বাঁচি।।
ভোর রাত্রি চারিজন অন্য নায় উঠে।
বাড়ী এসে বলে হরিপালের নিকটে।।
দিন ভরে অনাহারে হরিপাল রয়।
বাবা হরিচাঁদ বলে কাঁদে সর্বদায়।।
হত্যা দিয়ে থাকে শুয়ে দেখিল স্বপন।
স্বপ্নাদেশে কহে এসে সূর্যনারায়ণ।।
আর না কাঁদিস বাছা হ’য়ে অর্থলোভী।
চলে যা নৌকার কাছে নৌকা গাছ পাবি।।