Page: 108

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১০৮

ওরে বেটা ভণ্ড তুই আয় দেখি শুনি।
কি বুঝিয়া ছেড়ে দিলি ঘরের রমণী।।
এত মেয়েলোক কেন দেখি তোর ঘরে।
ঠাকুরে লইয়া কেন এত প্রেম করে।।
ভাল ভাল অই যদি ঠাকুর হইবে।
মেয়েদের সঙ্গে কেন এ রঙ্গ করিবে।।
দশরথ বলে বাবু মোর দোষ কিসে।
যার যার নারী সেই সেই ল’য়ে আসে।।
জেনে শুনে বল বাবু কেবা করে দোষ।
প্রভুকে আনিনু আমি হইয়া সন্তোষ।।
ঠাকুর আছেন মত্ত হরিনাম গানে।
পাষাণ গলিত হয় এ নামের গুণে।।
মেয়েরা এসেছে সব নাম আকর্ষণে।
অগ্নি দেখে পতঙ্গিনী থাকিবে কেমনে।।
নায়েব কহিছে কেন হুলুধ্বনি দেয়।
দশরথ বলে হ’য়ে আনন্দ হৃদয়।।
নায়েব কহিছে কেন পদধরি পড়ে।
দশরথ বলে শুধু গাঢ় ভক্তি করে।।
নায়েব কহিছে তোর নারী কোন প্রমে।
ঠাকুরের কাছে বৈসে মেতে কোন নামে।।
দশরথ কহে ইহা কভু নহে মন্দ।
এ আমার বহু ভাগ্য পরম আনন্দ।।
নায়েব কহিছে ওরে ভণ্ড তপস্বী।
যাহা শুনিয়াছি তাহা দেখিলাম আসি।।
এ হেন কুকর্ম কেবা দেখেছে কোথায়।
ঠাকুরের ত্যজ্য চাবা তোর নারী খায়।।
নারী লোক সঙ্গে করে হরিনাম গান।
শীঘ্র ভণ্ড তপস্বীরে বাহিরেতে আন।।
কোন প্রেম করে নারী লোক সমিভ্যরে।
নিয়া আয় আমি তাই জিজ্ঞাসি ঠাকুরে।।
দশরথ বলে বাবু স্থির কর মন।
আমি সব বলিতেছি ক্রোধ কি কারণ।।
সাধু মুখামৃত খাবে শাস্ত্রে ইহা আছে।
গৌরাঙ্গ লীলায় ইহার প্রমাণ রয়েছে।।
বৈষ্ণব বন্দনা মধ্যে মধুর আখ্যান।
গৌরাঙ্গের নিস্টীবন নারী লোকে খান।।
বন্দিব বৈষ্ণবী শ্রীমাধবী ঠাকুরানী।
প্রভু যারে আলবাটী বলেন আপনি।।
গৌরাঙ্গ যখন নিস্টীবন ফেলাইত।
বদন ব্যাদান করি মাধবী খাইত।।
থু থু করি যখন ফেলিত নিস্টীবন।
মুখে মুখে মাধবী তা করিত গ্রহণ।।
কাকী যে আধার আনি বাছারে খাওয়ায়।
তেমনি মাধবী দেবী খাইত সদায়।।
বিশেষতঃ ভগবান মুখ নিস্টীবন।
মম নারী খেলে তার সফল জীবন।।
নায়েব কহিছে বেটা ভাঙ্গিব ভণ্ডতা।
করেছিস এতদিন আজ যাবি কোথা।।
আন অই ঠাকুরকে কাছারী লইব।
আ’জ অই ঠাকুরের মর্ম কি শুনিব।।
দশরথ বলে আমি প্রাণে যদি মরি।
সেও ভাল প্রভু কেন যাবেন কাছারী।।
করি মানা ঘরে নাহি যেও কোন জন।
মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পতন।।
মালাবতী ঘর থেকে শুনিলেন তাই।
ডেকে বলে এখানে আসিলে রক্ষা নাই।।
দশরথ মস্তকেতে ছিল এক টিকি।
নায়েব ধরিয়া তাই দিল এক ঝাঁকি।।
চর্মের পাদুকা ছিল নায়েবের পায়।
গোঁড়া বাঁধা লোহাতে কঠিন অতিশয়।।
সেই জুতা খুলে মারে ক্রোধে পরিপূর্ণ।
দশরথ বলে নাহি ভাবি তার জন্য।।
দশরথ মৃত্তিকায় শুইয়া পড়িল।
নায়েবের পদধরি পিঠ পেতে দিল।।
দশজুতা মারিব তোরে রে দশরথ।
যাহাতে না যা’স আর ঠাকুরের সাথ।।
এতবলি পৃষ্ঠে মারে দশজুতা বাড়ী।
জরিমানা ডেকে দশরথে দিল ছাড়ি।।
জরিমানা করিলাম তোরে দশটাকা।
শীঘ্র ফেলা টাকা নৈলে আরো মা’র খাবি।
টাকা যদি নাহি দিস কাছারী যাইবি।।
প্রভু বলে মালাবতী শীঘ্র ঘরে যাও।
দশ টাকা চাহে ওরে কুড়ি টাকা দেও।।
তাহা শুনি মালাবতী কুড়ি টাকা এনে।
নায়েব নিকটে টাকা দিলেন তখনে।।
ঘর হ’তে ঠাকুর কহেন নায়েবেরে।
আর দশ টাকা আমি দিলাম তোমারে।।
কত নিবে কত খাবে প্রজা বেঁচে রৈলে।
ধনে বংশে মজাইলে যে মা’র মারিলে।।