Page: 131

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৩১

সব ভক্ত করে লম্ফ উল্লম্ফ প্রল্মফ।
ঠিক যেন তাহাতে হ’তেছে ভূমিকম্প।।
কীর্তন হুঙ্কার উঠে গগন ভেদিয়া।
বৃক্ষ ছেড়ে পক্ষী সব চলিল উড়িয়া।।
শূন্যে উড়ে যায় পক্ষী ভকতের সঙ্গ।
জ্ঞান হয় দেবতারা হ’য়েছে বিহঙ্গ।।
গ্রাম্য পশু বন্য পশু যে ছিল যেখানে।
কীর্তন শুনিয়া ধারা বহে দু’নয়নে।।
ফুকরা হইতে যান বোয়ালিয়া হাট।
দোকানিরা দেখে শুনে কীর্তনের নাট।।
কার হয় অশ্রুপাত করজোড়ে রয়।
কেহ পাখা ধরিয়া বাতাস দেয় গায়।।
বুনোপাড়া গাড়িটানা মহিষ যে ছিল।
সকল মহিষ এসে একত্র হইল।।
কীর্তনের ধ্বনি শুনি উর্দ্ধ মুখ হয়ে।
উর্দ্ধকর্ণ করি যায় পথ আগুলিয়ে।।
অশ্রুজলে পরিপূর্ণ মহিষেরগণ।
বন্দীগুলা রজ্জু ছিঁড়ে আইল তখন।।
মহিষ কতকগুলি দৌড়িয়া চলিল।
আর কতগুলি তারা চাহিয়া রহিল।।
রক্ষকেরা নাহি পারে মহিষ ঠেকাতে।
বহু পরে ঠেকাইল অনেক কষ্টেতে।।
গো-চর নিকটবর্তী যত গরু ছিল।
উর্দ্ধ মুখ কর্ণ পুচ্ছ ধাইয়া চলিল।।
কোনটা গোছড় ছিঁড়ে চক্ষে পড়ে জল।
বৃষভ বলদ চলে ফেলাইয়া হাল।।
বৎস গাভী একত্র হইয়া দেয় লম্ফ।
তাতে যেন হয় বাসুকীর ফণা কম্প।।
হুলস্থূল লাগিয়াছে জীবাদি জন্তুর।
সংকীর্তন সঙ্গে চলে যতেক কুকুর।।
কুক্কুরে কুক্কুরে দেখা বিষম বিপদ।
একত্র হইয়া চলে নাহি হিংসা বাদ।।
এই রূপে উতরিল পাইকডাঙ্গায়।
স্বরূপের বাটী প্রভু হ’লেন উদয়।।
চারি পাঁচ শত লোক একত্র হইল।
হরিনাম সংকীর্তনে সকলে মাতিল।।
বহুক্ষণ পরে সেই কীর্তন ভাঙ্গিল।
স্নানান্তে ভকতগণ ভোজন করিল।।
চিঁড়া দধি মহোৎসব অগ্রেতে হইল।
অন্নপাক অন্তে সবে ভোজনে বসিল।।
খাও খাও দেও দেও নেও নেও রব।
কেহ খায় কেহ দেয় মহা মহোৎসব।।
হেনকালে উপনীত দ্বিজ একজন।
আমাদা নিবাসী নাম শ্রীহরি ভজন।।
মাতুল আলয় ছিল পাইকডাঙ্গায়।
ঠাকুরে প্রণাম করি ভূমিতে লোটায়।।
কাঁদিয়া কাঁদিয়া কহে আমি নরাধম।
জন্মিয়াছি ব্রহ্মকুলে অধমস্যাধম।।
আমাকে করহ প্রভু কৃপার ভাজন।
বহুদিন ব্যাধি মম জ্বর পুরাতন।।
রোগে মুক্ত কর প্রভু নাহিক উপায়।
তব ভক্ত হ’য়ে আমি থাকিব ধরায়।।
হীরামনে ডেকে বলে গোলোক ঈশ্বর।
ব্রাহ্মণকে ধ’রে সেরে দেহ জীর্ণজ্বর।।
শুনি হীরামন গিয়া ব্রাহ্মণকে ধরে।
টানিয়া আনিল তারে বাড়ীর বাহিরে।।
বাটীর ঈশানকোণে পথে ছিল বালী।
পাতা দিয়া বাড়ি মারে আথালী পাতালী।।
উচ্ছিষ্ট কদলী পত্র ছিল তথা পড়ি।
চারি পাঁচ পাতা ধরি মারিলেন বাড়ি।।
বালী মধ্যে ব্রাহ্মণেরে ফেলে লোটাইয়ে।
বালী ধরি দেয় গায় মাজিয়ে ঘষিয়ে।।
প্রভু হরিচাঁদ আজ্ঞা সেরে যাবে জ্বর।
ব্যাধিমুক্ত উঠিয়া বসিল দ্বিজবর।।
ছেড়ে দিল ব্রাহ্মণেরে উঠিয়া দাঁড়ায়।
করজোড়ে দাঁড়াইল অশ্রুধারা বয়।।
ব্রাহ্মণের বক্ষঃস্থল প্লাবিত হইল।
যাও বলি হীরামন তারে আজ্ঞা দিল।।
লোটাইয়া পড়ে গিয়া প্রভুর চরণে।
মহাপ্রভু বলে তোর কি ভাব এখনে।।
ব্রাহ্মণ বলেন মোর আর ব্যাধি নাই।
আজ্ঞা কর নিরন্তর তব গুণ গাই।।
মহাপ্রভু বলে তোর যা ইচ্ছা করিস।
মম ভক্ত প্রতি সদা ভকতি রাখিস।।
থাকিলে ব্রহ্ম গায়ত্রী ব্রাহ্মণ শরীরে।
তবে কি ব্রাহ্মণ অঙ্গে ব্যাধি হ’তে পারে।।
সে সকল মন্ত্র দিয়া আর কি করিবা।
মানুষ বলিয়া আর্তি সতত রাখিবা।।
আজ তোর হ’ল বাছা ব্যাধি সব নাশ।
যাজনিক দ্বিজ বলে না হয় বিশ্বাস।।