Page: 169

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৬৯
দুই তিন জনের হয়েছে জরিমানা।
নদীকূলে মরাদাহ করিবারে মানা।।
জরিমানা তুচ্ছ কথা বড়ই আটক।
সাক্ষী বিনা হয় তার ছ মাস ফাটক।।
তারা বলেন আমি পড়িয়া এসেছি।
খেয়াঘাটে বিজ্ঞাপন লেখা দেখিয়াছি।।
মরা জলে দিলে দুই মাস জেল লেখা।
জরিমানা ছাড়া পঞ্চায়েত নেয় টাকা।।
তাতে নাহি ভয় হয় হউক ফাটক।
এ কার্য হইলে মম জীবন স্বার্থক।।
খুন কি ডাকাতি পরদারী হিংসা চুরি।
তাতে জেল হলে কলঙ্কের ভয় করি।।
গোস্বামীকে জলে দিয়া যাইব ফাটকে।
স্বর্গ সুখ অনুভব করি সে আটকে।।
দিব যদি এতে দিতে হয় জরিমানা।
অক্লেশে করিব সহ্য পুলিশ যাতনা।।
বলিল সাধনা দেবী ইহা যদি কর।
প্রভাতে লাগিবে টাকা কি আছে যোগাড়।।
তারক কহিল যদি না থাকে যোগাড়।
ঘর বেচি দিব নয় খাটিব চাকর।।
নগদ চল্লিশ আছে আর কিবা ভাব।
যদি আরো কিছু লাগে নৌকা বেঁচে দিব।।
তাহা শুনি সাধনা কহিছে ভাল ভাল।
শীঘ্র তবে গোস্বামীকে ঘাটে লয়ে চল।।
তারক করিল কোলে পদ পড়ে ঝুলে।
সাধনা শ্রীপদ ধরি তুলে নিল কোলে।।
গোস্বামীকে ঘাটে এনে নৌকা পরে রেখে।
ঘৃত মেখে সলিতার অগ্নি দিল মুখে।।
বৈশাখী পূর্ণিমা ঊনত্রিশে শনিবার।।
গোস্বামীকে লয়ে গেল গঙ্গার ভিতর।।
হেনকালে পূর্ণচন্দ্র গগনে উদয়।
নিশিতে দেখায় যেন দীপ্তকার ময়।।
গোধূলি উত্তীর্ণ রাত্রি দন্দেক সময়।
দশ দণ্ড উপরেতে শশাঙ্ক উদয়।।
চন্দ্রিমায় নীলাকাশ চিত্র বিচিত্রিত।
শ্বেত লাল সবুজ হরিদ্রা নীল পীত।।
তার অধোভাগে হ’ল মেঘ গোলাকার।
নবগঙ্গা মধ্যে হ’ল ঘোর অন্ধকার।।
তার চতুর্দিকে জ্যোৎস্না আলোময়।
মধ্যে অন্ধকার কিছু লক্ষ্য নাহি হয়।।
তারকের কোলে গোস্বামীর পুত দেহ।
পাঁছনায় বৈঠা বায় গোপাল উৎসাহ।।
গোস্বামীর সিদ্ধ দেহ ছাড়িলেন জলে।
বুড় বুড় শব্দ তাতে তুফান উঠিলে।।
তার মধ্যে পাক হ’ল পাগলে লইয়া।
সেই পাকে গোস্বামীকে দিলেন ছাড়িয়া।।
জল হাতে লয়ে দোঁহে দিল করতালি।
হরি বলে মস্তক উপরে হাত তুলি।।
এড়েন্দার হাটুরিয়া নৌকা দুইখান।
লোক দুই নৌকায় নব্বই পরিমাণ।।
হরিধ্বনি শুনিয়া তাহারা বলে হরি।
জলে স্থলে সবে বলে হরি হরি হরি।।
মেঘ গেল চন্দ্রমণ্ডলে শোভা প্রকাশে।
দণ্ড অন্ধকার থাকি পূর্ব শোভা হাসে।।
এদিকে শ্মশানে আছে কাষ্ঠের পাঁজাল।
সাধনা কহিছে র’ল একটি জঞ্জাল।।
শ্মশানে থাকিলে কাষ্ঠ ভাল না দেখায়।
কাষ্ঠ জ্বালাইয়া শীঘ্র এস দুজনায়।।
তারক গোপাল দোঁহে নৌকা বেয়ে গেল।
কূল দিয়া গ্রন্থ আর সাধনা চলিল।।
কাষ্ঠেতে আগুন দিয়া বলে হরি হরি।
দু’জন পুরুষ আর দুইজন নারী।।
দুই কূলে দেখা যায় লোক সারি সারি।
জলে স্থলে সকলে বলেছে হরি হরি।।
হেন মতে চারিজন আসিলেন ঘরে।
মহোৎসব করিবেন কহে গোপালেরে।।
গোস্বামীর হুঁকা যষ্ঠি জয়পুর ছিল।
রজনী প্রভাতে ওঢ়াকাঁদি পাঠাইল।।
সদ্য সদ্য মহোৎসব করিতে বাসনা।
গোপালকে কহিলেন মনের কামনা।।
দুইটি পূজারী আর ট’লো ছয়জন।
ভেকধারী দ্বাবিংশতি বৈষ্ণব সুজন।।
জয়পুর কৃষ্ণপুর নারায়ণদিয়া।
কুন্দসীর নমঃশূদ্র স্বজাতি লইয়া।।
গোস্বামীর স্বর্গার্থে করেন মহোৎসব।
হরিবোল বলিয়া ভোজন হ’ল সব।।
যত লোক পরিমাণ আয়োজন ছিল।
অভ্যাগত লোক তার দ্বিগুণ হইল।।
দুইশত লোক পরিমাণ আয়োজন।
লোকের সমষ্টি হ’ল চারিশত জন।।