Page: 063

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৬৩
কংস দিল আজ্ঞা করে সাপুড়িয়াগণে।
কালকুট বিষ পুতনাকে দেও এনে।।
আজ্ঞা পেয়ে সাপুড়িয়া কালফণী ধরে।
দন্তভেঙ্গে সাপড়িয়া বিষ বের করে।।
যে কালে সর্পের গলা চাপিয়া ধরিল।
এ সময় কালসর্প কাঁদিতে লাগিল।।
তবু দন্ত ভেঙ্গে বিষ করিল বাহির।
কাঁদিয়া সে ফণীবর হইল অস্থির।।
দূত বলে ওরে সর্প কাঁদ কি লাগিয়া।
দন্তভঙ্গ এইটুকু বেদনা পাইয়া।।
রাজকার্য্য তোমা হ’তে সাহায্য হইবে।
ঔষধ লাগায়ে দিলে বেদনা ঘুচিবে।।
সর্প বলে ওরে দূত মনে দেখ ভেবে।
সামান্য বেদনা পেয়ে সর্প কাঁদে কবে।।
তবে যে কেঁদেছি আমি চক্ষে বহে বারি।
এই ব্যাথা হ’তে মম ব্যাথা আছে ভারি।।
এই বিষ পুতনা মাখিয়া যা’বে স্তনে।
বিষমাখা দুগ্ধ খাওয়াবে ভগবানে।।
যে মুখে যশোদা দেয় ক্ষীর-সর-ননী।
সেই মুখে বিষ দিবে কংস নৃপমণি।।
এতদিন বিষ ধরি আমি বিষধর।
এ বিষ করিবে পান হরি বিষহর।।
তাহা বলে নাহি কাঁদি ভাঙ্গিবে দশন।
কৃষ্ণমুখে বিষ দিবে কাঁদি সে কারণ।।
সাধন ভজন কিছু করিবারে নারি।
আরো মম বিষ পান করিবেন হরি।।
এজন্য আমাকে সৃজিলেন জগদীশ।
অমল কমল মুখে দিবি মম বিষ।।
ভাবিয়া দেখিনু মম জনম বিফল।
এই মনোদুঃখে মম চক্ষে পড়ে জল।।
আমারে ধরিলি আমি কোন অপরাধী।
জগদীশ খা’বে বিষ এই দুঃখে কাঁদি।।
সেই সর্প অইদুঃখে করিল বিলাপ।
তোমারে দংশিল এই কোন দেশী সাপ।।
নিজে কৃষ্ণ কষ্ট পেলে কষ্ট নাহি তায়।
ভক্তে কষ্ট পেলে তার কষ্ট অতিশয়।।
ক্রুরজাতি সর্প ওর পাপ উপজিল।
বিনা অপরাধে তোরে দংশি ম’রে গেল।।
সর্পের দংশনে কভু সজ্জন মরেনা।
সজ্জনের কোপ হ’লে সর্পই বাঁচে না।।
যে কালেতে কালীদহে কালীয়ের বিষ।
সেই বিষ উর্দ্ধগামী যোজন পঁচিশ।।
পক্ষী উড়ে কালীদহ পার হ’তে নারে।
কালীয়ের বিষে পুড়ে পক্ষী যেত মরে।।
সেই কালীদহ তীরে কদম্বের বৃক্ষ।
অদ্যপি বাঁচিয়া আছে কে বা তার পক্ষ।।
গরুড় যে কালে স্বর্গে ইন্দ্রজয়ী হয়।
চন্দ্র আসি জননীরে দাসীত্ব ঘুচায়।।
গরুড়ের মুখ হ’তে সুধা বিন্দু পড়ে।
তাহাতে অমর বৃক্ষ এখনো না মরে।।
সুধার গুণেতে বাঁচে কদম্বের দ্রুম।
যাহার শরীরে আছে কৃষ্ণভক্তি প্রেম।।
কৃষ্ণপ্রেম মহারস সুধা যেবা খায়।
সে কেন মরিবে সর্প বিষের জ্বালায়।।
কি ছার সে স্বর্গ সুধা যথা প্রেমসুধা।
প্রেমসুধা খাইলে নিবৃত্তি ভব ক্ষুধা।।
তার নিদর্শন দেখ মরিয়াছে সর্প।
হরি বল দূরে গেল শমনের দর্প।।
শমনের দর্প সর্প মাররে সকলে।
খাণ্ডাও বিষয় বিষ কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে।।
মুখে খাও কৃষ্ণরস হাতে কর কাজ।
কহিছে তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।
ভক্তগণের উদার ভাব।
দীর্ঘ-ত্রিপদী।
রাউৎখামার গ্রামে, শ্রীরামসুন্দর নামে,
প্রভুর এক ভকত মহান।
ভক্তগণ ল’য়ে সাথ, তার ঘরে যাতায়াত,
সদা করে হরিগুণ গান।।
একদিন সবে মেলি, নাচে গায় বাহু তুলি,
গোবিন্দ মতুয়া সঙ্গে রয়।
কোলেতে বালক ছিল, এক ঘরে শোয়াইল,
এক কন্যা সে ঘরে আছয়।।
ভগবান প্রেমরসে, নাচে গায় কাঁদে হাসে,
ভাববেগে মত্ত মাতোয়াল।
গাইয়া যশোদা উক্তি, কেহ বা করয় ভক্তি,
ননী খাও বাপরে গোপাল।।
কেহ নিজ স্তন ধরে, একজন বলে আরে,
গ্রীবা ধরে বলে বাপধন।