Page: 138

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৩৮

মৃত্যুঞ্জয় দশরথ আসি তার স্থান।
সবে বলে করহ মায়ের স্তন পান।।
অক্রুর বিশ্বাস রামকুমার বিশ্বাস।
দুগ্ধপান করে সবে প্রেমেতে উল্লাস।।
পাগল ধরিয়া সেই অম্বিকার মুখে।
দুগ্ধ পান করে আর মা বলিয়া ডাকে।।
বলে মাগো এই বার হইবি গর্ভিণী।
ছেলে হবে তার নাম রাখিও অশ্বিনী।।
জয় হরি গৌর হরি বলি এই বোল।
সেখান হইতে যাত্রা করিল পাগল।।
পুনরায় সবে ল’য়ে গেল কলাতলা।
সেখান হইতে করে ওঢ়াকাঁদি মেলা।।
গোলোক পুলক আদেশিল স্বপ্নাদেশে।
রসনা র’সনা লুব্ধ ভাসে প্রেমরসে।।


জলে স্থলে নাম সংকীর্ত্তন।

পয়ার।

মতুয়ার গণ সব করিল গমন।
পদব্রজে চলে যায় বহুতর জন।।
পাঁচ হাত মুখে এক নৌকা সাজাইয়ে।
উত্তর দেশীয় সবে যায় তরী বেয়ে।।
কীর্তন করিছে সবে বাজাইয়ে খোল।
তার মধ্যে কেহ উঠে বলে হরিবোল।।
যে নায় উঠিলে লোক ধরে বিশ ত্রিশ জন।
সেই নৌকায় লোক উঠে বিয়াল্লিশ জন।।
বার চৌদ্দ জন লোক হইয়াছে বেশী।
নাম সংকীর্তন করে হ’য়ে মিশামিশি।।
দুই নৌকা জুড়ি বাহে কেহ মারে লম্ফ।
তাহাতে নদীর জল হইতেছে কম্প।।
গোস্বামী গোলোক নাচে আনন্দ হৃদয়।
কভু আগা নায় কভু যান পাছা নায়।।
গায় গায় মিশামিশি লোক সব ভীড়।
তার মধ্যে গোস্বামী উন্মত্ত নহে স্থির।।
সকল মতুয়া নাচে করি জড়াজড়ি।
তার মধ্যে গোস্বামী করেছে দৌড়াদৌড়ি।।
হাতে হাতে ধরাধরি হইয়া সবায়।
তার নীচ দিয়া প্রভু যান আগা নায়।।
যখনে সকলে বসি নামপদ গায়।
লম্ফ দিয়া গোস্বামী পড়েন পাছা নায়।।
নদীমধ্যে যত লোক নৌকা পরে ছিল।
আশ্চর্য মানিয়া সবে নিকটে আসিল।।
সব নৌকা গিয়া গোস্বামীর নৌকা ধরে।
সঙ্গে সঙ্গে তাহারাও হরিনাম করে।।
যত সব বাজে নৌকা হ’ল আগুয়ান।
সকলে বলে হরি হিন্দু মুসলমান।।
জলমগ্ন লোক যেন ভুলে খায় জল।
তেমনি সকলে বলে বল হরি বল।।
পদ ধরে গান করে ঈশ্বরাধিকারী।
উঠেছে তরঙ্গ নাচে মধুমতী নারী।।
অক্রুর বিশ্বাস আগা নৌকার চরাটে।
দাঁড়ায়ে কীর্তন করে হাতে ল’য়ে বৈঠে।।
হাতে বৈঠা লম্ফ দিয়া নেচে নেচে উঠে।
গোস্বামী লাফিয়া পড়ে তাহার নিকটে।।
পাগল শুইয়া পড়ি ডাকে হরিচাঁদে।
অক্রুর দাঁড়ায়ে তার দুই পদ মধ্যে।।
যেন দুই দাঁড় দুই পার্শ্বে নৌকা বায়।
হস্ত দিয়া সেই মত নৌকা টেনে যায়।।
চারি ছয় দাঁড়ে নৌকা যেই মত চলে।
সেই মত নৌকা চলে হস্ত টান বলে।।
গোস্বামীর নৌকা সঙ্গে যত নৌকা ধরা।
সব নৌকা সেইমত চলিল সুধারা।।
যত নৌকা ধরাধরি করিছে আসিয়ে।
বাহ্যজ্ঞান নাহি কারু প্রেমে মত্ত হ’য়ে।।
সময় সময় কারু বাহ্যস্মৃতি হয়।
চাহিলে পাগল পানে তাহা ভুলে যায়।।
হেনকালে জয়পুরবাসী চারিজন।
হৃদয় সীতানাথ ভোলানাথ রাইচরণ।।
ষোল হাত দৈর্ঘ্য নৌকা প্রস্থে নয় পোয়া।
হরিধ্বনি শুনি চারিজন দিল বাওয়া।।
বহু পরিশ্রমে নৌকা ধরিল আসিয়া।
ঠেকাইল নৌকা আগানা’র তল দিয়া।।
কেহ বলে সর বেটা মরিতে আসিলি।
নৌকার গলইর তলে নৌকা কেন দিলি।।
আসিলি নৌকার তলে ডুবিয়া মরিতে।
ভোলানাথ বলে আমরা এসেছি ডুবিতে।।
গোস্বামী বলেছে বাছা কে ডুবিতে চাও।
অক্রুর বিশ্বাস কহে জয়পুর নাও।।
লম্ফ দিয়া উঠিলেন গোঁসাই গোলোক।
জয়পুর নাও যদি এইত তারক।।