Page: 085

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৮৫

হরিচাঁদ রূপনীরে, বাছাধন সে পাথারে
একেবারে দিয়াছিল ঝাঁপ।
যাহা কহ তাহা ঠিক, শুনিতে যেন বিদিক
রামলীলা ভাবের প্রলাপ।।
দন্ডেক নিশি থাকিতে, হীরামন তথা হ’তে
গৃহে যায় এক নায় উঠে।
মল্লকাঁদি গ্রামে এসে, খালকূলে নেমে শেষে
রাউৎখামার যায় হেটে।।
হীরামনে দরশনে, সকলে আশ্চর্যগণে
হইল হৃদয় প্রফুল্লিত।
রামাগণে বামাস্বরে, হুলুধ্বনি সবে করে
জ্ঞাতি বন্ধু সবে পুলকিত।।
হীরামন প্রাণ পান, ব্যাধিমুক্ত দেশে যান
শ্রীহরি চরিত্র সুধাধার।
এ দুস্তার ভবার্ণবে, হরি-তরী কর সবে
কহে দীন রায় সরকার।।


হীরামনের দেশাগমনে সকলের শ্রীহরির প্রতি ঐশিভাব প্রকাশ ও হীরামনের পুত্রের জন্ম ও মৃত্যু।

পয়ার।

হীরামন দরশনে শ্রীচৈতন্য বালা।
কহে হরি ঠাকুরের কি আশ্চর্য লীলা।।
এ কভু সামান্য নহে পুরুষ প্রধান।
এখনে আমার যে হ’তেছে ব্রহ্মজ্ঞান।।
নলিয়া জামালপুরে হয়েছিল বার।
সেই হরি ওঢ়াকাঁদী হ’ল অবতার।।
নলিয়া, যখন বার হইল বিখ্যাত।
মুখের কথায় কত ব্যাধি সেরে যেত।।
তদধিক রূপে এই হরি বর্তমান।
মরা গরু বাঁচে মরা দেহে পায় প্রাণ।।
ইতিপূর্বে বার হ’ল সফলাডাঙ্গায়।
সফলাডাঙ্গার বার হরিচাঁদ পায়।।
হরি এসে হরিচাঁদে আবির্ভূত হ’ল।
মরা হীরামনে হরি তাই সে বাঁচাল।।
নলিয়া যে বার মোর মনে হেন লয়।
সেই বার এসেছিল সফলাডাঙ্গায়।।
তারপর সেই বার হরিচাঁদ পায়।
বেশী দিন থাকে হেন বিশ্বাস না হয়।।
মৃদুভাষে হেসে হেসে হীরামন বলে।
চিনেও চিনিতে নারে দূরদৃষ্টি হ’লে।।
দেশে এসে হীরামন গৃহকর্ম করে।
এক ছেলে হ’ল তার কিছুদিন পরে।।
প্রভু আজ্ঞা নারী ঋণ শোধ হ’লে পরে।
ত্যাজিয়া সকল কার্য হরিনাম করে।।
সবে বলে এ কেন বাঁচিয়া এল দেশে।
মরিলেই ভাল হ’ত এই সর্বনেশে।।
দিবসেতে ঘরে থাকে দ্বার বন্ধ করি।
ঝুঁকি ঝুঁকি গায় গুণ বলে হরি হরি।।
নিশাভাগে থাকে যোগে গিয়া সে শ্মশানে।
কখনে কি করে তাহা কেহ নাহি জানে।।
হিরার রমণী যত মেয়েদিকে কয়।
তোমরা না জান উনি রাত্রে কোথা রয়।।
কোথা যায় নিশিতে না থাকে মোর কাছে।
কার সঙ্গে যেন ওর গুপ্ত প্রেম আছে।।
সব নারী বলে হীরামনের নারীকে।
তুই কেন দেখিস না কোথা গিয়া থাকে।।
যখন উঠিয়া যায় টের যদি পাস।
অলক্ষিতে তুই ওর সাথে সাথে যা’স।।
তাই শুনি সেই ধনি জাগরীতা রয়।
যখনে সে হীরামন শ্মশানেতে যায়।।
লুকাইয়া পিছে পিছে সঙ্গে সঙ্গে গেল।
দেখিলেন পতি গিয়া শ্মশানে বসিল।।
গৃহে এসে সেই নারী সকলে বলেছে।
শ্মশানেতে থাকে ওরে ভূতে পাইয়াছে।।
শেষ রাত্রে হীরা এসে ডাকে ঘনে ঘনে।
তার নারী জাগরীতা ডাক নাহি শুনে।।
ঘুচাইতে দ্বারে হীরামন মারে লাথি।
তবু দ্বার ছাড়িল না সেই দুষ্টামতি।।
হীরামন শান্ত মন র’ল বাহিরিতে।
সে ধনির ছিল এক বালক কোলেতে।।
সকালে হইল ব্যাধি দিন গত হয়।
শ্বাসবদ্ধ মৃত্যু হ’ল সন্ধ্যার সময়।।
সবে বলে হীরামনে পাগলামি কর।
মরিয়াছে পুত্র তব পা’র যদি সার।।
নহে এই ছেলে ল’য়ে ওঢ়াকাঁদী যাও।
যে মতে বাঁচিলে তুমি সে মতে বাঁচাও।।
সে কথা শুনিয়া হীরামন গৃহে গেল।
গৃহদ্বার বন্ধ করি যোগেতে বসিল।।