Page: 053

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৫৩
হরি বলে ধন পাই আরো পাই খেতে।
ইচ্ছা নাই আর যাই ডাকাতি করিতে।।
ব্রাহ্মণ বৃত্তান্ত তারে কহিল সকল।
ব্রাহ্মণব্রাহ্মনী মিলে বলে হরিবল।।
রাজ দূত তাহা শুনি রাজাকে জানায়।
শুনিয়া রাজার মন হরষিত হয়।।
রাজা বলে প্রজা যদি হইল বৈরাগী।
রাজভেট উপহার লও তার লাগি।।
দুই রাজদূত দুই রাজভেট ল’য়ে।
স্তব করে ব্রাহ্মণেরে রাজভেট দিয়ে।।
দ্বিজ ভাবে বৈষ্ণবের সাজের কি গুণ।
বেশ দেখে বৈশ্য মোর সেবায় নিপুণ।।
আরো যাবে কৃষ্ণমন্ত্র করিনু গ্রহণ।
তাহা দেখি সদাগর মোরে দিল ধন।।
পরম বৈষ্ণব ধর্ম্ম ধন্য ধন্য মানি।
রাজা দিল ভেট দূতে কহে স্তুতি বাণী।।
বিশুদ্ধ বৈরাগী আমি যখনে হইব।
নাহি জানি তখনে কি হ’ব কিনা হ’ব।।
এ হেন বৈরাগ্য আমি কবে বা পাইব।
কবে ব্রজে যাব আমি কবে দীন হ’ব।।
এ হেন বৈষ্ণব ধর্ম্ম আমাকে ছাড়িয়া।
কোথা ছিল হরিনাম আমাকে বঞ্চিয়া।।
যখন হইল মম দস্যুবৃত্তি মন।
কোথায় বৈষ্ণব ধর্ম্ম ছিলরে তখন।।
যে নামে জগৎ ভুলে প্রেমে মত্ত হ’য়ে।
সেই নাম মোরে ত্যাজে ছিল লুকাইয়ে।।
পেয়েছি তোমাকে যদি আর কি ছাড়িব।
যে দেশে তোমাকে পাব সেই দেশে যাব।।
আর না করিব আমি কর্ম্ম দুরাচার।
অভেদ নাম-নামীন বুঝিলাম সার।।
দস্যুবৃত্তি করি নিত্য ভুঞ্জিয়াছি দুঃখ।
এক দিন বৈরাগী হইয়া কত সুখ।।
কল্য যারা আমাকে ক’রেছে দূর দূর।
তাহারা আদরে বলে বৈষ্ণব ঠাকুর।।
রাজ দূত দন্ড দিত আমাকে ধরিয়া।
রাজা মোরে দন্ড দিছে কারাগারে নিয়া।।
সেই রাজা সেই দূতে ব’য়ে দেয় ভেট।
বোধ হয় যমরাজা মাথা করে হেট।।
কিবা মন্ত্র লীলাজী দিলেন শিখাইয়া।
জগৎ বৈষ্ণব হো’ক আমাকে দেখিয়া।।
কিবা বৈষ্ণবের গুণ কহা নাহি যায়।
বেশ ধরিলেই মাত্র চোর সাধু হয়।।
একদিন মাত্র আমি সাধু সাজ পরি।
আর ফিরে মোর মনে না আইসে চুরি।।
একবার নাম নিলে যত পাপ হরে।
পাপীর কি শক্তি আছে তত পাপ করে।।
এই জন্যে নামে হ’ল ব্রহ্মাদেব দীক্ষে।
অভেদ নাম নামীন পাইনু পরীক্ষে।।
এই জন্যে নামে হৈল বৈষ্ণবী পার্ব্বতী।
এই জন্য রত্নাকর ছাড়ে দস্যুবৃত্তি।।
নারায়ণ অংশে রত্নাকর জন্ম ধরে।
নামের নাহাত্ম্য জানাইতে পাপ করে।।
যার নাম সেই এই মাহাত্ম্য জানা’ল।
আর এক কথা মোর মনেতে হইল।।
জেনে তত্ত্ব নামে মত্ত শঙ্কর গোঁসাই।
যার নাম তার অঙ্গ তারাই তারাই।।
পাপী করে পাপ তাপ সাধুসঙ্গ লয়।
একবার নাম নিলে সর্ব্ব পাপ ক্ষয়।।
অন্ন কষ্ট ছলা করে বেশ ধরিলাম।
অনিচ্ছাতে নাম ল’য়ে বৈষ্ণব হৈলাম।।
আমি যে বৈষ্ণব হই আমি কেন কই।
ইহাতে কি আমি বড় অপরাধী হই।।
আমি যে বৈষ্ণব আমি যদি নাহি কই।
তাহা না বলিলে নামে গুণ থাকে কই।।
লীলাজী গুরু যে মম তার গুণ কই।
পরশ পরশে আমি বৈষ্ণব যে হই।।
পরশ পরশে যেন লৌহ হয় সোনা।
বৈষ্ণব পরশে কেন বৈষ্ণব হ’ব না।।
হাতে তালি দিয়া বলিল যে সাধু সব।
চোর ছিল দিজসুত হইল বৈষ্ণব।।
বৈষ্ণবের মুখপদ্ম বাক্য অখন্ডিত।
অই বলে আমি সাধু হইনু নিশ্চিত।।
খেতে সুতে বসিতে আমার চিন্তা নাই।
ভুক্তি দাসী লক্ষ্মীমাতা কুবের সেবাই।।
জীব সৃষ্টি করে সে কি আহার দিবে না।
নিরবধি কৃষ্ণপ্রেম করহ ভাবনা।।
যে কিছু দেখহ ভাই কৃষ্ণের সকল।
আর সব ধাঁ ধাঁ বাজী বল হরিবল।।
একদিন লীলাজীউ মহোৎসবে যেতে।
সদাগর বাটী যায় বহু শিষ্য সাথে।।