Page: 123

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১২৩
পাত্র ল’য়ে প্রভু তবে আসিল বাহিরে।
কুক্কুরকে অন্ন দিয়া প্রভু সেবা করে।।
পালগুরু তাহা দেখি করে হায় হায়।
কিসের ঠাকুর এই কুক্কুরে খাওয়ায়।।
হারে চূড়া হারে বুধ কাণ্ডজ্ঞান নাই।
এই ঠাকুরকে ল’য়ে তোদের বড়াই।।
ওই বেটা যশোমন্ত বৈরাগীর ছেলে।
ঠাকুর জন্মিবে কেন নমঃশুদ্র কুলে।।
অতিশয় ভালোলোক ছিল যশোমন্ত।
তার ঘরে হেন ছেলে বিধির কি কাণ্ড।।
হরিভক্তি বিলাসাদি গ্রন্থ নাহি জানে।
কুক্কুর দৃষ্ট নৈবিদ্য খায় সে কারণে।।
না করে আহ্নিক স্নান নাহি জপমালা।
কুক্কুর লইয়া খায় বেশ করে লীলা।।
মেয়ে মর্দে একসাথে মিশিয়া সকল।
তাল নাই মান নাই বলে হরিবোল।।
আমি গুরু আমার নিকটে না বসিয়া।
প্রেমে মত্ত যত মূর্খ কাহাকে লইয়া।।
বুধই কহিছে হারে পোদা গুরু পাল।
ডাকিলে পড়ে না আর বেল কলা তাল।।
তুমি হও শুদ্র জাতি কায়স্থের কুলে।
গুরুযোগ্য নও গুরু অধিকারী ছেলে।।
গুরু দেখি ভক্তি নাই হয় শিষ্য মনে।
শূদ্রের অবজ্ঞা হয় দেখিয়া ব্রাহ্মণে।।
হাঁড়ি মুচি জোলা দেখি ভক্তির উদয়।
গুরু কি শিষ্যের দোষ বুঝিলেই হয়।।
গ্রন্থে কহে অবৈষ্ণব গুরু কর্তে নাই।
আমাদের ভাগ্যদোষে ঘটিয়াছে তাই।।
‘বিষ্ণুর্জনাতি বৈষ্ণব’ বলে জ্ঞানীজনে।
নিন্দা কর সাক্ষাতে পাইয়া জনার্দনে।।
রাজসূয় যজ্ঞে কি করিল যদুবীর।
মুচিরাম দাস পূজা কৈল যুধিষ্ঠির।।
যজ্ঞে এল মুনি ঋষি ব্রাহ্মণ প্রধান।
সবার উপরে মুচিরামের সম্মান।।
শ্রীরঘুনাথের খুড়া বুড়া কালীদাস।
ঝড়ু ভুঁইমালীর উচ্ছিষ্ট কৈল গ্রাস।।
কুবের জোলার ছেলে তাত বুনে বৈসে।
কৃষ্ণের গলায় মালা পরায় মানসে।।
নকিম তাহার ছেলে দেখিবারে পায়।
আরোপে দিতেছে মালা কৃষ্ণের গলায়।।
চূড়ায় ঠেকিয়া মালা ভূমে পড়ি গেল।
নকিম ডাকিয়া তার পিতাকে বলিল।।
বুনো তাঁত ওহে তাত তবে পা’বে সুখ।
উঁচু কর হাতখানা আরো একটুক।।
পিতার আরোপ পুত্র আরোপেতে জানে।
অন্তরে কৃষ্ণ আরোপ হাতে তাঁত বুনে।।
তাহার তোড়ানি যেবা ভক্তি করি খায়।
হৃদিপদ্মে কালাচাঁদে সেই দেখা পায়।।
কোন কালে পাল বেটা দেখেছিস তারে।
গালাগালি দিস বেটা মরিবার তরে।।
গৃহ হ’তে এক টাকা এনে তাড়াতাড়ি।
প্রণামী বলেছে তুমি শীঘ্র যাও বাড়ী।।
বিদায় করিতে তারে হইল উৎকণ্ঠা।
নাহি গেল বিকালে বাজায় শঙ্খ ঘণ্টা।।
দেবলা গোপাল শ্রীবিগ্রহ সেবা করে।
প্রভু বলে পাল গুরু সেবা করে কারে।।
যে গোপালে পূজা করে ওকি তারে চিনে।
গোপাল উহার পূজা ল’বে কি কারণে।।
ঝাঁজ ঘণ্টা শঙ্খ বাজায়েছে সন্ধ্যাকালে।
তাহা শুনে আমার সর্বাঙ্গ যায় জ্বলে।।
প্রাতেঃ উঠে মহাপ্রভু ওঢ়াকাঁদি যায়।
বুধই বৈরাগী তার পিছে পিছে ধায়।।
পথে হাতে আর কহে অঙ্গ জ্বলে যায়।
তাহা শুনি পাল গুরু ফিরে ফিরে চায়।।
ওঢ়াকাঁদি গিয়া প্রভু হইল উপনীত।
ফিরে এল বুদ্ধিমন্ত হ’য়ে দুঃখ চিত।।
গুরুকে প্রণাম করি বিদায় করিল।
দক্ষিণার টাকা ল’য়ে গুরু গৃহে গেল।।
অগ্রহায়ণ মাসেতে এই কার্য হ’ল।
দৈবযোগে একদিন বিপদ ঘটিল।।
মাঘমাসে বেলা দেড় প্রহর সময়।
অগ্নি লেগে বাড়ী তার দগ্ধ হ’য়ে যায়।।
দশ বিঘা জমির যে ধান্যগোলা সহ।
ঘর দ্বার শয্যা সব হ’য়ে গেল দাহ।।
হুঁ হুঁ শব্দে অগ্নি যদি উঠিলেন জ্বলি।
তার মধ্যে বুদ্ধিমন্ত ঘৃত দিল ঢালি।।
করজোড়ে গলে বস্ত্র বলেছে বচন।
শ্রীমুখের নিমন্ত্রণ করুণ ভোজন।।
তারপর ওঢ়াকাঁদি গেল দুই ভাই।
শ্রীধামে বলিল গিয়া মহাপ্রভু ঠাই।।