Page: 130

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৩০
ঠাকুর জিজ্ঞাসা করে ভক্তগণ ঠাই।
বলত ঠাকুর বাড়ী যাই কি না যাই।।
হইয়া গুরু ঠাকুর এ হেন দীনতা।
চক্ষে জল দন্তে তৃণ গলে ছেঁড়া কাঁথা।।
মৃত্যুঞ্জয় দশরথ বলে যোড় হাতে।
যাওয়া উচিৎ হয় ঠাকুর বাড়ীতে।।
ঠাকুর চলিল সব ভক্তগণ ল’য়ে।
নাম সংকীর্তন করে আনন্দে মাতিয়ে।।
ঠাকুর বসিল গিয়া ঠাকুরের বাড়ী।
অধিকারী গোস্বামী প্রণামে ভূমে পড়ি।।
গোস্বামী গোলোক বলে জয় হরি বোল।
জয় হরি বলরে গৌর হরি বোল।।
সব ভক্তগণ বলে জয় জয় জয়।
অধিকারী লোটাইল ঠাকুরের পায়।।
প্রভু হরিচাঁদ বলে শুন হে গোঁসাই।
তুমি গুরু আমি শিষ্য ভিন্ন ভেদ নাই।।
ভব কর্ণধার হ’য়ে জগৎ তরা’লে।
নিজে যে তরিবা ইহা কবে ভেবেছিলে।।
কাঁদিয়া কহেন তবে গুরু অধিকারী।
তুমি গুরু আমি শিষ্য তায় যদি তরি।।
মহাপ্রভু বলে কোথা হেন কল্পতরু।
গুরু হ’য়ে শিষ্যকে বলিতে পারে গুরু।।
ভক্তগণ বলে এই ঈশ্বর অধিকারী।
গৌরাঙ্গ লীলায় ছিল শ্রীঈশ্বরপুরী।।
সে ঈশ্বর পুরি ইনি ঈশ্বরাবতার।
ঈশ্বর ঈশ্বর নাম হয় দোঁহাকার।।
অধিকারী ঈশ্বর, ঠাকুরে কেঁদে কহে।
অন্ন ভোজ নিতে হবে এ দীনের গৃহে।।
ঠাকুর কহেন বহু ভক্তগণ সাথে।
একা আমি অন্ন ভোজ লইব কি মতে।।
তাহা শুনি কাঁদে অধিকারী মহাশয়।
কান্না দেখে বলে হরিচাঁদ দয়াময়।।
ভোজন করা’তে ইচ্ছা পাইয়াছি টের।
মাকে বল রাঁধিতে তণ্ডুল দশ সের।।
কাঁচা কলা কুষ্মাণ্ডের করহ ব্যঞ্জন।
এক সের ডাল বল করিতে রন্ধন।।
গৃহে আছে ঘৃত ভাণ্ড আনহ বাহিরে।
কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ করি দেহ সবাকারে।।
পাক হ’ল ভক্ত সব করিল ভোজন।
মহাপ্রভু ভোজ লন আনন্দিত মন।।
গণনাতে একশত ষাটি জন লোক।
ভোজন দেখিয়া নাচে গোঁসাই গোলোক।।
পরিপূর্ণ ভোজনে সকলে হৈল তৃপ্ত।
নৃত্য করে অধিকারী ভোজন সমাপ্ত।।
অধিকারী প্রতি প্রীতি মহাপ্রভু কন।
গোলোকে ল’য়ে আপনি করুন ভোজন।।
ঈশ্বর কৃতার্থ হ’ল প্রভুর সেবায়।
পরে স্বরূপের বাড়ী চলিল ত্বরায়।।
সব ভক্তগণ উঠে হরিধ্বনি দিয়ে।
হীরামন চলিলেন অগ্রবর্তী হ’য়ে।।
অধিকারী গোস্বামীর গলে কাঁথা ছিল।
সেই কাঁথা হীরামন মাথায় লইল।।
প্রভু হরিচাঁদ কহে হীরামন জয়।
জান না কি জন্যে কাঁথা ল’য়েছে মাথায়।।
উহার মনের ভাব দুই প্রভু পিছে।
আমি ভৃত্য দাসরূপ অগ্রে পাঠিয়াছে।।
মহাপ্রভু কহে অগ্রে যাক হীরামন।
অধিকারী কর তার পশ্চাতে গমন।।
আমি যাব তব পিছে আনন্দ হৃদয়।
তার পিছে যাবে দশরথ মৃত্যুঞ্জয়।।
আর সব ভক্ত যাবে তাহার পশ্চাতে।
গোলোক যাউক তার যথা ইচ্ছা মতে।।
তুমি মম অগ্রে থেকে গান ধরে দেও।
নেচে গেয়ে স্বরূপের বাড়ী চলে যাও।।
অধিকারী গোস্বামী ধরিল সংকীর্তন।
পশ্চাতে দোহারী করে যত ভক্তগণ।।
অধিকারী কণ্ঠধ্বনি সিংহের গর্জন।
মৃত্যুঞ্জয় দশরথ তাদৃশ দু’জন।।
আর সব ভক্তগণ পিছে পিছে যায়।
ভীম নাদ কণ্ঠধ্বনি মত্ত হস্তী প্রায়।।
সব জিনি দেয় ধ্বনি গোলোক গোঁসাই।
জ্বলন্ত পাবক যেন অগ্রে পিছে ধাই।।
জয় হরি বল মন গৌর হরি বল।
সব ভক্ত মধ্যে গোলোকের এই বোল।।
সব ভক্তগণ গায় সুমধুর ধুয়া।
হেলিয়া দুলিয়া নাচে গোবিন্দ মতুয়া।।
বিমুখ হইয়া পিছে মাথা নোয়াইয়া।
কক্ষ বাদ্য বুড়বুড়ি দু’বাহু তুলিয়া।।
তাহা শুনি মঙ্গল সে বুড়বুড়ি দেন।
বুড়বুড়ি করিতে বদনে উঠে ফেণ।।