Page: 060

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৬০

তাতে মাত্র দেখা যায় অগ্নির মণ্ডল।
দণ্ড না দেখায় অগ্নি দেখায় কেবল।।
তেমনি মঙ্গল যবে ঘুরাইত মুখ।
এক মঙ্গলের দেখাইত শত মুখ।।
বড় প্রেম উথলিয়া পড়িত গোবিন্দ।
কক্ষবাদ্য করি হেলি দুলিয়া আনন্দ।।
পিছেতে প্রভুকে রাখি বিমুখ হইয়া।
প্রভুর মুখেতে মুখ থাকিত চাহিয়া।।
প্রেমে ঝাঁকাঝাঁকি নাকে শ্লেষ্মা উঠিয়া।
প্রভু অঙ্গে পড়িত যে ছুটিয়া ছুটিয়া।।
নাকে মুখে চোখে যাহা যেখানে পড়িত।
যত্ন করি প্রভু তাহা অঙ্গেতে মাখিত।।
কক্ষবাদ্য করি রামকুমার ভকত।
কীর্ত্তন মধ্যেতে হেলে দুলিয়া পড়িত।।
এইরূপে ভক্তবৃন্দ হয়ে একতর।
দিক নাই কে পড়িত কাহার উপর।।
মহাভাবে চিত্তানন্দ হৃদয় আহ্লাদ।
গম্ভীর প্রকৃতি যেন প্রভু হরিচাঁদ।।
ভক্তগণে প্রেমন্মত্ত হইত যখন।
বিকৃতি আকার প্রভু হইত তখন।।
ক্ষণে কৃষ্ণবর্ণ ক্ষণে গৌরাঙ্গ বরণ।
রক্তজবা তুল্য হ’ত যুগল লোচন।।
ক্ষণে দূর্বাদল শ্যাম ক্ষণেক পাটল।
ক্ষণে নীলোৎপল বর্ণ নয়ন যুগল।।
ভক্তগণে হুঙ্কারিত বলে হরিচাঁদ।
সে ধ্বনি শ্রবণে যেন মত্ত সিংহনাদ।।
সবলোক মত্ত হয়ে দিত হরিধ্বনি।
তাহাতে হইত যেন কম্পিতা মেদিনী।।
কেহ না জানিত দিবা কি ভাবেতে গেল।
না জানিত যামিনী কিভাবে গত হল।।
প্রেমানন্দ সদানন্দ আনন্দে বিভোল।
ভণে শ্রীতারকচন্দ্র বল হরি বল।।


প্রভুর নতুন বাটি বসতি।

পয়ার।

একদা প্রভুর জ্যেষ্ঠ নামে কৃষ্ণদাস।
ঠাকুরকে কহে ডেকে শুন হরিদাস।।
আমরা সকলে থাকিলাম এক বাড়ী।
তুমি বা একাকী কেন থাক সবে ছাড়ি।।
এস সবে একত্রেতে সুখে করি বাস।
তাহা শুনি মহাপ্রভু যেতে কৈল আশ।।
এ সময় জমিদার এসে ওঢ়াকাঁদি।
পূর্ব্ববাড়ী যাইবারে করে কাঁদাকাঁদি।।
না হইল পঞ্চভাই তাহাতে স্বীকার।
কাঁদিতে কাঁদিতে ফিরে গেল জমিদার।।
আমভিটা ত্যাজি প্রভু পোদ্দার বাটিতে।
পাঁচ ভাই বসতি করিল একসাথে।।
নড়াইলবাসী বাবু নাম রামরত্ন।
জমিদার বসাইল করি বহু যত্ন।।
রামরত্ন হরনাথ আর সীতানাথ।
এ তিনের নাম নিলে হয় সুপ্রভাত।।
তেলীহাটী পরগনে ইহারা মালেক।
আমিরাবাত ওঢ়াকাঁদি জমিদার এক।।
এই ওঢ়াকাঁদি প্রভু করেন বসতি।
সমাদরে জমিদার করিলেন স্থিতি।।
ভকত ভবনে প্রভু যাতায়াত করে।
ভক্ত সঙ্গে থাকে রঙ্গে আনন্দ অন্তরে।।
ওঢ়াকাঁদি আর ঘৃতকাঁদি মাচকাঁদি।
কুমারিয়া চন্দ্রদ্বীপ আর আড়োকাঁদি।।
ইত্যাদি অনেক গ্রাম চতুঃপার্শ্বে রয়।
ভক্তি করি যে ডাকে তাহার বাড়ী যায়।।
ভক্তবৃন্দ পান করে কৃষ্ণ প্রেমরস।
হাসে কাঁদে নাচে গায় অন্তরে উল্লাস।।
দুই পুত্র তিন কন্যা ল’য়ে ঠাকুরাণী।
সুখের সাগরে ভাসে লোচন নন্দিনী।।
ভকত ভবনে ফিরে প্রভু হরিচাঁদ।
বাঞ্ছাপূর্ণ করে হরি যার যেই সাধ।।
যেখানে যেখানে আছে প্রভুর ভকত।
ক্রমে এসে এক ঠাঁই হয়েন একত্র।।
এইভাবে ওঢ়াকাঁদি কালাতিবাহিত।
ভক্তগণে আসে যায় হয়ে হরষিত।।
কোন কোন দিন প্রভু ভক্তগণে ল’য়ে।
পুষ্করিণী তীরে গিয়ে থাকেন বসিয়ে।।
পরিধান একবস্ত্র অর্দ্ধাংশ গলায়।
শীত গ্রীষ্মে সমভাব ছেঁড়া কন্থা গায়।।
শয্যাহীন দূর্ব্বাসনে থাকিত বসিয়া।
একে একে ভক্ত সব মিলিত আসিয়া।।
কখন বসিত প্রভু তৃণাসন করি।
ভক্তগণ বসিয়া বলিত হরি হরি।।