Page: 120

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১২০
ঠাকুর বলেন বাছা তুমি যাও ঘরে।
তুমি যাও এবে আমি যা’ব তার পরে।।
ঠাকুরে প্রণাম করি গোলোকে উঠিল।
হরিধ্বনি দিয়ে গৃহে হাঁটিয়া চলিল।।
সভাতে যতেক লোক ছিলেন বসিয়া।
সবে করে হরিধ্বনি আশ্চর্য মানিয়া।।
ঘরে ঘরে হুলুধ্বনি করে রামাগণে।
গোলোক উদ্ধার হ’ল কয়ে সর্বজনে।।
হরিচাঁদ ল’য়ে যত ভক্তগণ সাথে।
মাঝে মাঝে যান সে গোলোকের বাড়ীতে।।
মহানন্দ চিদানন্দ সৌরকর রাশি।
দিবানিশি সমভাতি গার্হস্থ সন্ন্যাসী।।
শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত পদ্ম প্রস্ফুটিত।
ভক্তবৃন্দ পদ্মমধু পিয়ে সর্বজীবে।
রসনা রসনা হরি হরি বল সবে।।
বিধবা রমণীর ব্যাধিরূপ পৈশাচিক দৃষ্টি মোক্ষণ।
পয়ার।
একদা প্রভুকে দেখি যাইয়া শ্রীধাম।
অপরাহ্ণ সময়ে বিদায় হইলাম।।
আমি আর মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস দু’জন।
তিলছড়া গ্রামেতে করিনু আগমন।।
উতরিনু শ্রীনবীন বিশ্বাসের বাড়ী।
তিনি রাখিলেন বড় সমাদর করি।।
আমাদের সংবাদ পাইয়া এক নারী।
নবীনের বাটীতে আসিল ত্বরা করি।।
সমস্ত রজনী হরিনাম সংকীর্তন।
সেই নারী বিষাদিতা মলিন বদন।।
নাহি আর অন্য কথা করেছে রোদন।
গোস্বামীর পদে মাথা কুটিছে কখন।।
একবার দুই হাতে দু’টি পদ ধরে।
কতক্ষণ রাখিলেন বক্ষের উপরে।।
চারিদণ্ড রজনী আছয় হেনকালে।
হরিনাম সংকীর্তন সবে ক্ষান্ত দিলে।।
সকলকে শয্যা দিয়া শুইল গোঁসাই।
একা সেই দুঃখিনীর চক্ষে নিদ্রা নাই।।
হেন অবকাশে সেই নারী কাঁদে খেদে।
ধরিলেন মৃত্যুঞ্জয় গোস্বামীর পদে।।
অনাথা বিধবা আমি দুঃখিনী যুবতী।
ধরি পায় সদুপায় কর মহামতি।।
জলোদরী বেয়ারাম হ’য়েছে আমার।
দুঃখিনীরে কর এই রোগ প্রতিকার।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে আমি উপায় না দেখি।
কর্মফল ফলিয়াছে আমি করিব কি।।
প্রভাতে উঠিয়া মোরা যাই নিজালয়।
সে নারী কাঁদিয়া ধরে গোস্বামীর পায়।।
তারক কহিছে আর সহেনা পরাণে।
তুচ্ছ ব্যাধি জন্য এত নিষ্ঠুরতা কেনে।।
যাহা ইচ্ছা দয়া করে তাহা দেন বলে।
শেষকালে যা থাকে তা’ হবে ওর ভালে।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে ওঢ়াকাঁদি যাত্রা কর।
প্রণামী প্রণামী দিয়া পাদপদ্ম ধর।।
পাঁচসিকে লয়ে তুই যাস ওঢ়াকাঁদি।
মহাপ্রভু পদে পড়ে কর কাঁদাকাঁদি।।
সেই নারী তাহা শুনি গিয়া নিজধাম।
নিশি জাগরণে জপে হরিচাঁদ নাম।।
কেমনে পাইব আমি প্রভুর চরণ।
বিনা সাধনায় নাহি পা’ব দরশন।।
হরিচাঁদ উদ্দেশ্যে থাকিয়া করি আশা।
বহু নিশি জাগরণে করিল তপস্যা।।
প্রাতেঃ উঠি একদিন মনে কৈল যুক্তি।
এ বিপদে হরিপদ বিনে নাহি মুক্তি।।
আমা হ’তে নাহি হ’বে সাধন ভজন।
ভরসা প্রভুর নাম পতিত পাবন।।
ওঢ়াকাঁদি গেল নারী কাঁদিতে কাঁদিতে।
দেখে একা বসে প্রভু পুকুর পাড়িতে।।
পাঁচসিকা জরিমানা রেখে পদপরে।
প্রণাম করিয়া নারী হরিপদে পড়ে।।
প্রভু দেখে পেটে ব্যাধি নহে কদাচন।
পৈশাচিক দৃষ্টি যেন উদরী লক্ষণ।।
দণ্ডবৎ করি যবে শ্রীপদে পড়িল।
দয়া করি পাদপদ্ম মস্তকেতে দিল।।