Page: 144

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৪৪

পাগলের দৈব তামাক সেবন।

পয়ার।

একদা গোলোকচন্দ্র নিশীথে নিদ্রায়।
জাগরিত রাত্রি দুই যামের সময়।।
হরিচাঁদ রূপ চিন্তা করেছেন বসে।
ওঢ়াকাঁদি বাটী ঝাড়ু দিতেছে মানসে।।
এমন সময় হ’ল তামাক পিয়াস।
বাঞ্ছাকল্পতরু হরি জগতে প্রকাশ।।
হুঁকায় পুরিয়া জল তামাক সাজিয়া।
গোস্বামীকে মহানন্দ হুঁকা দিল নিয়া।।
তামাক সেবন করি হুঁকা দেওয়া ছলে।
ডাকিলেন মহানন্দ মহানন্দ বলে।।
নিদ্রাগত মহানন্দ নাহি শুনে ডাক।
মহানন্দে না দেখিয়া গোস্বামী অবাক।।
গা তুলে গোস্বামী যান মহানন্দ দ্বারে।
ডাকিলেন মহানন্দ আছ নাকি ঘরে।।
মহানন্দ বলে মোরে ডাক কি কারণ।
গোস্বামী বলেন কেন এত অচেতন।।
আমাকে তামাক খেতে হুঁকা ধরে দিলে।
আশা মাত্র এত ঘুম কেমনে ঘুমালে।।
মহানন্দ বলে আমি হুঁকা দেই নাই।
রাত্রির মধ্যেতে আমি বাহিরে না যাই।।
নাগরে জিজ্ঞাসা করে হুঁকা দিলে নাকি।
নাগর বলিল আমি কবে দিয়া থাকি।।
গোস্বামী গোলোক মনে মানিল আশ্চর্য।
রচিল তারক এত ঠাকুরের কার্য।।


গোস্বামী হরিচরণ অধিকারীর রথযাত্রা।

পয়ার।

পলিতা গ্রামেতে অধিকারী উপাধ্যায়।
নাম শ্রীহরিচরণ সাধু অতিশয়।।
পাগল গোলোকচাঁদ মন্ত্র শিষ্য তার।
করিবেন রথযাত্রা শুনি সমাচার।।
গোস্বামী গোলোক চলিলেন গুরুপাট।
গিয়া দেখিলেন রথে মিলিয়াছে টাট।।
পাগলের ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র মহানন্দ।
তিনজনে চলিলেন হ’য়ে প্রেমানন্দ।।
রথের বাজারে বহুতর লোক ভিড়।
তিনজন ভ্রমিতেছে দিতেছেন ভিড়।।
টাট মধ্যে পেয়ে সাধু মাধবের সঙ্গ।
দোঁহে করে কোলাকুলি পুলকিত অঙ্গ।।
মাধবে লইয়া গেল গুরুর গোচরে।
ভূমে পড়ি অষ্ট অঙ্গে দণ্ডবৎ করে।।
পদধূলি নিল তুলি দণ্ডবৎ হ’য়ে।
ঠাকুর নিকটে ক্ষণে রহে দাঁড়াইয়ে।।
পাগল কহেন ওহে দয়াল ঠাকুর।
লোকারণ্য সমারোহ করেছো প্রচুর।।
অধিকারী ঠাকুর কহেন যুড়ি কর।
আমি নহে কর্মকর্তা জগৎ ঈশ্বর।।
জ্ঞান কাণ্ড কর্ম কাণ্ড ঐশ্বর্যে যোগ।
আমার কর্তৃত্ব এ সকল পাপ ভোগ।।
গোলোক কহিছে সব ঈশ্বরের খেলা।
ঠিক যেন মিলিয়াছে শ্রীক্ষেত্রের মেলা।।
লোকের সংঘট এতে যদি বৃষ্টি হয়।
আষাঢ় মাসের দিন কি হবে উপায়।।
অধিকারী মহাশয় কহেন পাগলে।
বৃষ্টি নাহি হইবে মাধব দিছেন বলে।।
রথতলে পড়ি অদ্য ত্যাজিবে জীবন।
তাহাতে আমার আরো ভয়াকুল মন।।
শুনিয়া পাগলচাঁদ উঠিল গর্জিয়া।
সত্য কি মাধব ইহা বলেছে আসিয়া।।
আপনার প্রিয়শিষ্য মাধব সদ্‌জ্ঞানী।
ভক্ত শিরোমণি সে বৈষ্ণব চূড়ামণি।।
রজতের খড়ম দিয়াছে তব পায়।
গুরুপাটে থাকে প্রায় সকল সময়।।
মাস মধ্যে চারি পাঁচ দিন থাকে বাটী।
গুরুকার্য সদা করে অতি পরিপাটী।।
যে কিছু সময় নিজ বাটী গিয়া রয়।
কৃষিকার্য করে মাত্র সেটুকু সময়।।
ছয় পাখী জমি একমাত্র চাষ দেয়।
বীজ বুনাইয়া আর কাছে নাহি যায়।।
আবাদাদি নিগড়ান কিছুই না করে।
মাত্র পৌষ মাসে ধান্য কেটে আনে ঘরে।।
পরিমাণ ধান্য যাহা নিজ বাটী ব্যয়।
উদ্বর্ত ধান্যাদি গুরু পাটেতে পাঠায়।।
হেনকালে সম্মুখেতে আইল মাধব।
বলিতে লাগিল কথা লোকে অসম্ভব।।