Page: 156

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৫৬

কার্ত্তিক যাইয়া দাঁড়াইয়া সভা পার্শ্বে।
দেখেছে সভায় যত চেগা বগা বসে।।
শিয়াল কুকুর আর শকুন বিড়াল।
ছাগ মেষ গো-মহিষ আছে পালে পাল।।
পাঁচ ছয় শত লোক ছিল যে সভায়।
তার মধ্যে শতেক মনুষ্য দেখা যায়।।
দেখিয়া কার্ত্তিক হ’ল বিস্মিত হৃদয়।
লুঠিয়া পড়িল এসে পাগলের পায়।।
এ ভব মায়া প্রপঞ্চ সার কিছু নাই।
কহিছে তারকচন্দ্র হরি বল ভাই।।


রুদ্র উদ্ধার।

পয়ার।

চলিল গোলোকচন্দ্র উত্তরাভিমুখে।
বাসুড়িয়া গ্রামে যাব কহিল সবাকে।।
ভক্তগণ কতক চলিল সঙ্গে সঙ্গে।
হরি বলে হাসে কাঁদে নাচে গায় রঙ্গে।।
রাইচরণ মদনকৃষ্ণ কোটিশ্বর।
মহেশ শ্যামাচরণ শ্রীহরি পোদ্দার।।
সবে যায় হরিবোল বলিতে বলিতে।
উত্তরিল মধুমতী নদীর কূলেতে।।
বড়গুণীর পশ্চিমে ভৈরব নগর।
রুদ্র মণ্ডলের বাড়ী নদীর কিনার।।
বাড়ী হ’তে মধুমতী অতি দূরে নয়।
শত হস্ত পরিমিত যদি বেশী হয়।।
পরিষ্কার ঘাট তার বাড়ীর নিকট।
সবলোক তারে ব্যাখ্যা করে রুদ্রঘাট।।
মতুয়ারা হরি বলে যবে যায় হেঁটে।
মারিবার জন্য রুদ্র লাঠি ল’য়ে ছুটে।।
তাহা দেখি মতুয়ারা চুপ করে যায়।
কোনদিন তথা নাহি হরি নাম লয়।।
এইভাবে বহুদিন চুপে চুপে যায়।
অদ্য সেই ঘাটে গিয়া হইল উদয়।।
পাগল বলিছে সবে সেই ঘাটে গিয়া।
আজ সবে হরিবোল নাচিয়া নাচিয়া।।
যাহার শরীরে আছে যতটুকু শক্তি।
সেই শক্তি দিয়া নাম বল করে ভক্তি।।
তাহা শুনি যার যত ছিল নিজ বল।
সিংহের প্রতাপে সবে বলে হরি বল।।
তাহা শুনি রুদ্র এক ষষ্ঠি নিল হাতে।
যত হরিবোলাগণে আসিল মারিতে।।
মহাদস্যু মহাকায় মহা বলবান।
দেশের যতেক লোক ভয়ে কম্পমান।।
পাগল দেখিয়া রুদ্র আসিল মারিতে।
দৌড়িয়ে গেলেন সেই রুদ্রের সাক্ষাতে।।
ক্রোধভরে কহে তারে ওরে রুদ্র দাদা।
তোর ঘাটে হরিবলে এত বড় স্পর্ধা।।
হরি হরি হরি বলে ওরা মারে ডঙ্কা।
তুমি আমি দুই ভাই কারে করি শঙ্কা।।
হরি বলে ভণ্ডামী করিছে সব ভণ্ড।
আমি দিব উহাদের সমুচিত দণ্ড।।
রুদ্রের হাতের ষষ্ঠি লইল কাড়িয়ে।
আয় দাদা বলিয়ে চলিল বেগে ধেয়ে।।
তর্জন গর্জন করি গোস্বামী চলেছে।
পাগল চলিল আগে রুদ্র যায় পিছে।।
গোস্বামী বলিছে পাষণ্ডীর রক্ষা নাই।
কার ঘাটে হরি হরি বলিস সবাই।।
তর্জনে গর্জনে ধায় হরিবোলা দিকে।
মারিবারে বাড়ি হাকে রুদ্রের সম্মুখে।।
আগুলিয়া লম্ফ দিয়ে পিছে চলি যায়।
অধরোষ্ট কাঁপে রাগে কাঁপিতেছে কায়।।
বিমুখ হইয়া পড়ে হ’য়ে মাতোয়ারা।
রুদ্রকে ঘিরিয়া করে লাঠি পাইতারা।।
সঙ্গীরা ইঙ্গিতে হরি বলিতে বলিতে।
ধরিয়া রুদ্রের হস্ত লাগিল ঘুরিতে।
মধ্যে রুদ্র চতুর্দিকে নাচে ভক্তগণ।
নদী মধ্যে গোলা পড়ি হইল তেমন।।
তার মধ্যে হুহুঙ্কার ছাড়িল পাগল।
জয় হরি বল মন গৌর হরি বল।।
অচৈতন্য হ’য়ে রুদ্র হইল বিহ্বলা।
রুদ্রকে ঘেরিয়া হরি বলে হরিবোলা।।
সবে বলে হরি বল বল হরি বল।
রুদ্র সে চৈতন্য পেয়ে বলে হরি বল।।
হরিবলে রুদ্র গোস্বামীর পায় পড়ি।
কীর্তনের মধ্যে রুদ্র যায় গড়াগড়ি।।
রুদ্র বলে আমাকে বলিলে যদি দাদা।
এইভাবে তব মন থাকে যেন সদা।।
আমি তোর দাদা তুই মোর ভাই।
জনমে জনমে যেন হেন সঙ্গ পাই।।