Page: 178

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৭৮

যদি কিছু দেখে থাক কাহারে না কও।
দেখিয়াছ ভাগ্যক্রমে চুপ করে রও।।
জাননা শুননা কিবা গাও বরাবরি।
সুধা গৌর নয়রে আমার গৌর হরি।।
অপরূপ রূপ কিবা মধুর মাধুরী।
কখনও পুরুষ হয় কখনও বা নারী।।
শুনিয়া ঠাকুর আর বাক্য না স্ফুরিল।
ব্রাহ্মণ অনেক ক্ষণ মৌন হ’য়ে র’ল।।
কবি ভাবি’ কহে ভাই রবি ডুবে গেল।
লোচনের প্রতি সবে হরি হরি বল।।


গোস্বামীর ভিক্ষা বিবরণ

পয়ার

ভিক্ষা করি গোস্বামী বেড়ান সর্বক্ষণ।
প্রাতঃ হ’তে দ্বিপ্রহর ভিক্ষায় ভ্রমণ।।
ভিক্ষার তণ্ডুল রাখিতেন যার ঘরে।
বলিতেন তণ্ডুল বিক্রয় করিবারে।।
কতক তণ্ডুল রাখি তারকের ঘরে।
বলিতেন তারকে বিক্রয় করিবারে।।
একদিন জয়পুর তারকের বাটী।
গৃহমধ্যে বসিয়া আছেন মাত্র দুটি।।
হেনকালে একজন তণ্ডুল কিনিতে।
উপস্থিত হইলেন সন্ধ্যার অগ্রেতে।।
বলিল তণ্ডুল নাকি আছে তব ঘরে।
বিক্রয় করহ যদি দেহত আমারে।।
তারক বলিল আছে রেখেছে গোঁসাই।
কি দরে খরিদ কর বল শুনি তাই।।
খরিদ্দার বলে ডর সকলের জানা।
বাজারের দর এক সের এক আনা।।
তারক তণ্ডুল এনে তার ঠাই দিল।
পাঁচ আনা দাম দিয়া পাঁচ সের নিল।।
তারকের নিকটেতে গোঁসাই বসিয়া।
বলিছেন মিষ্টভাষে হাসিয়া হাসিয়া।।
তণ্ডুলের মূল্য কেন পাঁচ আনা লও।
দশ পাই রেখে আর ফিরাইয়া দাও।।
আনা আনা লও যদি তণ্ডুলের দাম।
মন্বন্তর বলি তব হইবে দুর্নাম।।
তণ্ডুলের এক সের হ’লে অর্ধ আনা।
কিনিতে বেচিতে কোন আটক থাকে না।।
কিনিতেও ভাল আর বেচিতেও তাই।
উভয়ের মনে কোন গোলমাল নাই।।
তারক বলিল প্রভু কেন কর মানা।
বাজার চলিত দর সের এক আনা।।
গোঁসাই কহিল মূল্য অর্ধ আনা নিব।
দাম জানিবারে কেন বাজারেতে যা’ব।।
সাধুর বাজার বেদ বেদান্তের পার।
সৃষ্টি ছাড়া বেদ ছাড়া সাধুর বাজার।।
গুরু তরুমূলে আনন্দ বাজারে থাকি।
ভবের লোভের হাটে আর কিরে ঢুকি।।
ভিক্ষার তণ্ডুল খাস ভাণ্ডারের ধন।
দরাদরি দিয়া কিবা আছে প্রয়োজন।।
এত শুনি তারক লইল দশ পাই।
দশ পাই ফিরাইয়া দিলেন গোঁসাই।।
সেই হ’তে ভিক্ষার তণ্ডুল যত হয়।
অর্ধ আনা মূল্যে সব করেন বিক্রয়।।
চারিটাকা জমা হ’ল তারকের ঠাই।
চারি টাকা নৌকা হ’তে আনিল গোঁসাই।।
তারকেরে বলে এই টাকা তুমি লহ।
তারক বলিল প্রভু কেন টাকা দেহ।।
গোঁসাই বলিল এই টাকা দিব কেনে।
তোমাকে দিতে পারিলে শান্তি হয় প্রাণে।।
তারক কহিছে প্রভু তব প্রাণে শান্তি।
এ বাক্য মানিতে বড় আমার অশান্তি।।
আমি কেন গ্রহণ করিব তব স্থান।
তব কৃপাবলে মম হইবে কল্যাণ।।
সামান্য অর্থের দ্বারা তুষিবে আমারে।
বালকে পুতুল দিয়া মোহে যে প্রকারে।।
অতুল রাতুল পদ দেহ মস্তকেতে।
অন্যকে তুষিও প্রভু সামান্য ধনেতে।।
শুনিয়া গোঁসাই তবে কহিছে গর্জিয়া।
তবে মোর টাকা দেহ শীঘ্র ফিরাইয়া।।
তারক আনিয়া টাকা রাখিল চরণে।
প্রভু বলে টাকা রাখ তব সন্নিধানে।।
তব বাড়ী থাকি আমি শীতে কষ্ট পাই।
একখানি কাঁথা হ’লে গায় দিব তাই।।
গৃহ হ’তে তারক আনিল এক কাঁথা।
গোস্বামীর পাদ পদ্মে রাখিলেন তথা।।