Page: 090

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৯০
ত্রেতাযুগে তব শ্রীমুখের আজ্ঞা পাই।
আঠার বর্ষের পথ এক লম্ফে যাই।।
আনিনু গন্ধমাদন তব কৃপাগুণে।
কপি তনু ধরি হনু ভানুকে শ্রবণে।।
ব্রাহ্মণ অগস্ত্য মুনি তব কৃপালেশে।
সপ্ত সমুদ্রের জল খাইল গণ্ডূষে।।
চন্দ্র সূর্য শূন্যে চলে অচল সচল।
বাসুকিরে দিলে শিরে ধরা ধরা বল।।
মম শিরে দাঁড়াইয়া আজ্ঞা দিলে তাই।
যবনে মানিস কেন ওতে কিছু নাই।।
তব পাদপদ্ম দৃষ্টি করি দয়াময়।
ঝাঁকি দিলে কণ্টক বন্ধন খ’সে যায়।।
কোপ দৃষ্টে কটা ভেক পানেতে চাহিয়া।
কোপ দিলে ভেক বেটা পড়িল শুইয়া।।
ঈষৎ আঘাত মাত্র লাগিল মাথায়।
লাগিল সামান্য কোপ ফকিরের পায়।।
মারিতে দিলেনা প্রভু তুমি কৈলে মানা।
মারিতে আমার মনে হ’ল বড় ঘৃণা।।
সকল তোমার খেলা কি খেলা খেলাও।
করিয়া করাও রঙ্গ মারিয়া মারাও।।
মহাপ্রভু বলে আর কহিতে হবে না।
জানি সব তবু ইচ্ছা তোর মুখে শুনা।।
বাছা তোর অঙ্গ ধৌত করেছি যখন।
বাহু নখ ব্যাথা মম ঘুচেছে তখন।।
পোড়া অস্ত্রে অঙ্গ পুড়ে করে কৃষ্ণবর্ণ।
চেয়ে দেখ মম অঙ্গে সেই সব চিহ্ন।।
তাহা দেখি হীরামন কেঁদে ছাড়ে হাই।
এই জন্য আমি কোন কষ্ট পাই নাই।।
হীরামন বলে আজ্ঞা কর শ্রীনিবাস।
যবনেরে সবংশেতে করিব বিনাশ।।
প্রভু বলে তোর কিছু হবে না করিতে।
স্বকর্মে হইবে ধ্বংস আপন পাপেতে।।
মম প্রাণাধিক তুই উত্তম পুরুষ।
পরাধীন নহ বাছা খাসের মানুষ।।
যথা তথা আছ বাছা তথা আমি আছি।
তোর কাছে বাছা আমি বিক্রিত হয়েছি।।
ত্রেতাযুগে বিভীষণে বলে ভগবান।
সাধুর জীবন মৃত্যু উভয় সমান।।
অমনি বাহির হ’ল বিবর্ত পাগল।
অনুক্ষণ মহাভাবে থাকেন বিহ্বল।।
অদ্ভুত করুণ হাস্য রসেতে বিভোলা।
কভু থাকে গৃহেতে কখন বৃক্ষতলা।।
কভু থাকে শ্মশানে কখন থাকে জলে।
কভু থাকে বনে কভু ধান্য ভূমি আ’লে।।
কখন বসিয়ে থাকে কখন শুইয়ে।
অবিরাম করে নাম ঝুঁকিয়ে ঝুঁকিয়ে।।
যেচে দিলে কিছু খায় নৈলে অনাহার।
অন্ন ব্রহ্ম জ্ঞান নাহি জাতির বিচার।।
প্রখর রৌদ্র বর্ষণে নাহি ছায়া ছত্র।
শীতে গ্রীষ্মে সমভাব নাহি পাখা বস্ত্র।।
কখন উলঙ্গ কভু পরে মাত্র লেংটি।
বিল খাল নদ নদী পার হয় হাঁটী।।
ভাদ্রমাসে মধুমতি বানস্রোত বয়।
হিল্লোল কল্লোল করে দেখে লাগে ভয়।।
সেই জলে হীরামন হেটে পার হয়।
তরঙ্গ উঠিলে মাত্র জানু ডুবে যায়।।
কভু বিল মধ্যে দিয়া হেটে পার হয়।
কভু বক্ষ ডুবে কভু সাতারিয়া যায়।।
জলে ভাসে হীরামন হংসের আকার।
কেহ বলে গোঁসাই উঠহে নৌকাপর।।
ধরিতে পারেনা কেহ বলেন গোঁসাই।
কার নৌকা বাহিব নিজের খানা বাই।।
এইভাবে গোস্বামীর বিহার বিরাজ।
কহিছে তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।
ফকিরের শেষ বিবরণ।
পয়ার।
ফকির বাওয়ালে গিয়া রুল বাজাইত।
রুল শব্দে ব্যাঘ্র স্তব্দ বাওয়াল করিত।।
হীরামনে শাস্তি দিয়া গেল বা’য়ালেতে।
পারিল না চক মধ্যে লোক নামাইতে।।
গাছেতে আঘাত করে ধরে সেই রুল।
শব্দ নাহি হয় ক্রোধে হুংকারে শার্দূল।।
কাঠ কাটিবারে নারে আইল ফিরিয়ে।
দেশে এসে রহিল সে ব্যাধিযুক্ত হ’য়ে।।
দেখিলে সে ফকিরেরে নাহি মানে লোকে।
রোগ না সারিতে পারে কেহ নাহি ডাকে।।