Page: 109

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১০৯

বারে বারে ইচ্ছা কর মোরে মারিবারে।
এই মা’র আমা ছাড়া মারিয়াছ কারে।।
জরিমানা দিলাম যে দশ টাকা বেশি।
এখন নায়েব বাবু হ’য়েছ কি খুশী।।
এমন মধুর নামে পাষণ্ডী হইও না।
এজন্য দিলাম আমি বেশি জরিমানা।।
এখন আমরা গান করিতে কি পারি।
পরকাল যা’তে রহে বলে হরি হরি।।
নায়েব কহিছে এবে আর কার ভয়।
দিবা নিশি হরি হরি বলহ সদায়।।
অমনি বলিয়া সবে প্রভু হরিচাঁদ।
উচ্চৈঃস্বরে সবে করে নাম গান পদ।।
নামে প্রেমে দিশেহারা মাতিয়া উঠিল।
বিষাদে হরিষ হ’য়ে সুখেতে ভাসিল।।
কারু মনে দুঃখ দশরথরে মেরেছে।
তাহা মনে করি হরি বলে কাঁদিতেছে।।
নায়েবের প্রতি কেহ ক্রোধ করি পড়ে।
সে ভাবেও হরি বলে দম্ভ কড়মড়ে।।
কোন মেয়ে বলে হরি আর ভয় নাই।
আনন্দে বলিল হরি আর কিবা চাই।।
কি করিবে কোন বেটা বলে কোন মেয়ে।
নায়েব দিয়েছে আজ্ঞা জরিমানা নিয়ে।।
কোন মেয়ে বলে সব মঙ্গল কারণ।
কি দিয়ে কি করে হরি বুঝে কোন জন।।
একাকী বিশ্বাস মহাশয় মা’র খেল।
নির্বিঘ্ন হইল দেশ ভয় দূরে গেল।।
হরিনাম লইতে নির্বিঘ্ন যদি হয়।
বিশ জুতা বাড়ী খেলে তাতে কিবা ভয়।।
কোন মেয়ে বলে কেন মোরে মারিল না।
চল্লিশ জুতাতে মোর কিছুই হ’ত না।।
কেহ বলে আমারে মারিলে ভাল হ’ত।
কেন মারিল না মোরে পঞ্চাশৎ জুত।।
শ্রীহরি নামের গুণ বাড়ে যে প্রহারে।
তাহাতে কি ব্যাথা হ’ত আমার অন্তরে।।
ধন্য দশরথ ধন্য নায়েব প্রহার।
হরিনাম বিঘ্ন নাশ করে খেয়ে মা’র।।
হরিচাঁদ হরিচাঁদ হরিচাঁদ বল।
কি করিতে পারে আর পাষণ্ডীর দল।।
পাষণ্ডীর গণ সব এল ত্বরা করি।
দাস হ’য়ে হরি বলে দন্তে তৃণ ধরি।।
তাহা দেখি সবে বলে জয় হরি জয়।
জয় মহাপ্রভু হরিচাঁদ জয় জয়।।
কেহ বলে প্রেমানন্দে হরি হরি বল।
এইভাবে মহাভাবে সবে মেতে গেল।।
লম্ফ ঝম্ফ ভূমিকম্প পুলকিত অঙ্গ।
কেহ বা বেহুঁশ আর নহে প্রেম ভঙ্গ।।
বিপক্ষেরা বলে গিয়ে নায়েবের ঠাই।
বলে বাবু দেখ গিয়া আর রক্ষা নাই।।
নায়েব কহিছে খুব কীর্তন হউক।
প্রেমে মেতে যাহা ইচ্ছা তাহাই করুক।।
তোদের কথায় আমি মিছা করি রোষ।
ঘরে দ্বীপ বহুলোক কিবা করে দোষ।।
পতিব্রতা সতী নারী পতি আছে সাথে।
দোষ যদি করে তাহা করে গোপনেতে।।
এখন তাদের প্রতি নাহিক জুলুম।
নাম গান করিবারে দিয়াছি হুকুম।।
মারিয়াছি দশরথে ভাগ্যে কিবা হয়।
এ ঠাকুর সামান্য ঠাকুর যেন নয়।।
আজানুলম্বিত ভুজ আকর্ণ- নয়ন।
মানুষেতে নাহি মিলে এমন লক্ষণ।।
দশটাকা জরিমানা বিশ টাকা দিছে।
কি জানি ঠাকুর যেন মোরে কি ক’রেছে।।
স্বপ্নে দেখিয়াছি অই ঠাকুর আসিয়া।
হস্তের আঙ্গুলি মোর নিল খসাইয়া।।
আরো দেখিলাম যেন আসিয়াছে পত্র।
গৃহদাহ হইয়াছে ঘর নাহি মাত্র।।
ইতি উতি কত যে কি দেখিনু স্বপনে।
নৃত্য করে বাম অঙ্গ শান্তি নাই মনে।।
ফিরে গেল পাষণ্ডীরা অতি মৌন হয়ে।
এ দিকেতে সংকীর্তন উঠিল মাতিয়ে।।
যামিনী হইল ভোর নাম সংকীর্তনে।
সবে প্রেমে মত্ত, ক্ষুধা তৃষ্ণা নাই মনে।।
সংকীর্তন হইতেছে কার নাহি হুঁশ।
ভেদাভেদ জ্ঞান নাই নারী কি পুরুষ।।
বৃংহত বৃংহতি রবে হস্তী হস্তী যুঝে।
হেন রব হইতেছে কীর্তনের মাঝে।।
কীর্তনের রব যেন মত্ত সিংহ রব।
শৃগালের মত ভীত পাষণ্ডীরা সব।।
হেনজ্ঞান হইতেছে সময় সময়।
প্রবল ঝঞ্ঝাটে যেন গ্রাম উড়ে যায়।।