Page: 195

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৯৫
রামচাঁদ চৌধুরীর বুদ্ধি বিচক্ষণ।
বলে বৃথা পরিশ্রম কর কি কারণ।।
চৌদ্দ জনে বেত টানি কিছুই না হয়।
এ হেন আশ্চর্য কেবা দেখেছে কোথায়।।
দুই বেত তুলিবারে প্রভু দেন বলি।
সে আজ্ঞা লঙ্ঘন ক’রে কেন বেত তুলি।।
চৌদ্দ জনে টানি বেত নাহিক বিরাম।
নিশ্চয় জানিও এই ঠাকুরের কাম।।
কেন মিছা টানাটানি পরিশ্রম কর।
চল গিয়া প্রভুকে জানাই সমাচার।।
কে যাবে কে যাবে সবে ভাবে মনে মনে।
সবে কহে তারকে পাঠাও প্রভু স্থানে।।
তারক দাঁড়ায় গিয়া প্রভুর সম্মুখে।
মৃত্যুঞ্জয় কিছুদূরে দাঁড়াইয়া থাকে।।
প্রভু কন একা কেন আসিলে তারক।
এক বেত ল’য়ে বুঝি হাসাইলে লোক।।
দু’টি বেত নিব আর নাহি আবশ্যক।
তিন বেত কাটিয়াছি কহিল তারক।।
ঠাকুর কহেন কেন এ কার্য করিলে।
সামান্য একটি কথা মানিতে নারিলে।।
যেমন লোভের বশ করিয়াছ তাই।
চৌদ্দ জনে হার কেন এক বেত ঠাই।।
ছোট এক বাক্য তাহা না পার মানিতে।
ধন্যবাদ দেই আমি সে বিন্ধ্য পর্বতে।।
এখন উঠিতে পারে রাখে কোন জনে।
উঠিতে না পারে মাত্র এক বাক্য মেনে।।
বাক্য না মানিতে পার কাপুরুষ হও।
সিংহের শাবক হ’য়ে ছাগ রীতি লও।।
তাহা শুনি তারক জুড়িল দুই হাত।
অপরাধ ক্ষমা কর অনাথের নাথ।।
কালীনগরের কর্তা বেত কাটিয়াছে।
অপরাধ করিয়াছি স্বীকার ক’রেছে।।
গুরুকার্য করি মোরা মনের হরিষে।
প্রভু কার্যে বেত নিব দোষ হবে কিসে।।
লঙ্কাদগ্ধে বন ভাঙ্গে বস্ত্র হরে হনু।
রাম কার্য রাম করে সমর্পিত তনু।।
এত বেত লালচাঁদ কি কার্যে লাগাবে।
আমরা লইলে বেত গুরুকার্য হ’বে।।
ইহা বলি এই বেত কেটেছেন তিনি।
ঠাকুর বলেন যাও সব আমি জানি।।
ধর গিয়া সেই বেত সেই তিন জনে।
চৌদ্দ জনে টান বেত কিসের কারণে।।
বেত ধরি টান দিল সেই তিন জন।
অমনি বাহির বেত হইল তখন।।
তিন জনে ছাঁটিয়া করিল পরিষ্কার।
তিন বেত প্রায় দুই বোঝা দু’জনার।।
এদিকে সকলে করে মাধ্যাহ্নিক ক্রিয়া।
স্নানাদি ভোজন করে হরিবোল দিয়া।।
প্রভু হরিচাঁদ স্নান করে প্রথমেতে।
অমৃত খাইনু হরি বলে আনন্দেতে।।
পরে অন্ন ভোজনে বসেন হর্ষ মনে।
ঘৃতপক্ক ডাল বড়া শাকাদি ব্যঞ্জনে।।
অমৃত অম্বল দধি দুগ্ধ আম্রসহ।
খাইলেন ভক্তসব বড়ই উৎসাহ।।
পায়স পিষ্টক আদি সেবা খাজা গজা।
ক্ষীর চুষি, ক্ষীরের লড্ডুক, সর ভাজা।।
ঠাকুরের বামদিকে আমপোরা ঝাকা।
প্রভু কন এত আম রাখ কেন একা।।
লালচাঁদ বলে এই আমগুলি চুকা।
মূলে টক দেখিতে সুন্দর যায় দেখা।।
প্রভু কহে মিঠা আম আর নহে চাই।
এ আম খেয়েছি আন ওই আম খাই।।
ভাল ভাল আম খেয়ে কি করিনু কাজ।
ভোজনের শেষ চুকা তাই খাব আজ।।
চুকা আম খাই নাই ওই আম খাব।
অই আম খেয়ে মন মালিন্য ঘুচা’ব।।
লালচাঁদ দেন আম্র ভকতি প্রচুর।
প্রভু ক’ন কই চুকা অতিব মধুর।।
মধুর হ’তে মধুর সুমধুর আম।
শ্রীমুখের মধুবাক্য তাই পরিণাম।।
যে গাছের চুকা আম্র খাইল ঠাকুর।
সে গাছের আম হ’ল সে হ’তে মধুর।।
ভক্তবৃন্দ সেবা কার্যে ছিল যতজনে।
তৃপ্ত হ’ল চুকা আম্রে মধু আস্বাদনে।।
সে কার্য করি হরি যাত্রা করিলেন।
লালচাঁদ বেত ল’য়ে সঙ্গে চলিলেন।।
অগ্রে অগ্রে ভোলা নামে কুক্কুর ধাইল।
ওঢ়াকাঁদি গোলোকের ঠাই উত্তরিল।।