Page: 041

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ৪১
সে মহাপুরুষ কহে নাহি তোর কষ্ট।
আমি তোর কৃষ্ণ হই আমি তোর ইষ্ট।।
যশোদা দুলাল আমি ভকত বৎসল।
তোর জন্য বাছা আমি হ’য়েছি পাগল।।
গুরুমন্ত্র লয় জীবে মোরে পাইবারে।
এই আমি পশিলাম তোমার শরীরে।।
গুরুনিষ্ঠা লোক হয় আমার পরাণ।
তুই মোর প্রাণ বাছা আমি তোর প্রাণ।।
দুষ্ট দুশ্চারিণী তোর গুরুর রমণী।
গুরুদণ্ড করিল তোমারে যাদুমণি।।
গুরুপাট নিকটেতে আর নাহি যেও।
হরি বলে ঘরে ঘরে ভিক্ষা করে খেও।।
এবে আমি হইয়াছি যশোমন্ত সুত।
তোমার দেহেতে হইলাম আবির্ভূত।।
মুখডোবা ছিনু বাসুদেব মূর্তি ধরে।
যশোমন্ত সুত হইনু রামকান্ত বরে।।
পরশুরামের দেহে বিষ্ণুতেজ ছিল।
রামের দেহেতে তেজ যেমন মিশিল।।
যশোমন্ত সুত দেখা যেখানে পাইব।
আমি গিয়া সেই দেহে মেশামেশি হ’ব।।
তোমা হেন ভক্ত ছেড়ে না যা’ব কখনে।
আমি তোর তুই মোর জীবনে মরণে।।
এত শুনি ব্রজনাথ ভ্রমিয়া বেড়ায়।
কখন বা বৃক্ষতলা কখন আলয়।।
মনে চিন্তা যশোমন্ত সুত কোন জন।
কবে তার শ্রীঅঙ্গ করিব দরশন।।
এদিকেতে সফলানগরে প্রভু বাস।
ব্রজনাথ মিলনেতে মনে হ’ল আশ।।
উত্তরাভিমুখে প্রভু একদিন চলে।
ডাকে প্রভু আহারে ব্রজারে কোথা বলে।।
এমন সময় উপস্থিত ব্রজনাথ।
বসাইল প্রভু তারে হাতে ধ’রে হাত।।
নাটু আর বিশ্বনাথ সঙ্গে দুইজন।
দোঁহে দেখে দু’জনার অপূর্ব মিলন।।
বার তের বৎসর বয়স এক ছেলে।
পরিধান পীতাম্বর বনমালা গলে।।
রতন বলয় হাতে চরণে নুপুর।
নবঘনশ্যাম বর্ণ মুরতি মধুর।।
শিরে শোভে শিখিপাখা করে শোভে বাঁশী।
বিধুমুখে মধুমাখা মৃদু মৃদু হাসি।।
ব্রজনাথ অঙ্গ হ’তে উঠে এক জ্যোতি।
সেই জ্যোতি হ’তে এই মধুর মুরতি।।
ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিম বাঁকা হাসি কথা কয়।
হরিচাঁদ শ্রীঅঙ্গেতে সে অঙ্গ মিশায়।।
ঠিক যেন ব্রজধামে যমুনা মাঝেতে।
বাসুদেব পড়ে বসুদেব হাত হ’তে।।
সেই দেহে আবির্ভূত গোলোকবিহারী।
বসুদেব সেই পুত্রে নিল কোলে করি।।
যশোদার গর্ভে হয় যমজ সন্তান।
সেই পুত্র এই পুত্র দোঁহে মিশে যান।।
ভাগবতে শ্লোক আছে তাঁহার প্রমাণ।
ব্যাসদেব রচিত শ্লোক শুকদেব গান।।
শ্লোক।
বসুদেবগৃহে জাত বাসুদেবখিলাত্মনি।
নীলনন্দসুতে রমা ঘনে সৌদামিনী যথা।।
গর্গোবাচ।
সত্যে শ্বেতবর্ণানি চ ত্রেতায়াং রক্তবর্ণানি।
পীতবর্ণ তথা কলৌ ইদানিং কৃষ্ণতাং গতঃ।।
পয়ার।
পীতবর্ণ কলিকালে যখনে গৌরাঙ্গ।
দ্বাপরে নারদ কহে লীলার প্রসঙ্গে।।
নারদীয় পুরাণে।।
কলৌ প্রথমসন্ধ্যায়াং লক্ষ্মীকান্তো ভবিষ্যামি।
সন্ন্যাসঃ গৌরবিগ্রহঃ সান্ত্বায়পুরুষোত্তম।।
পয়ার।
স্বয়ং এর কার্যে জন্মে ব্রহ্মা ইন্দ্রে ভ্রম।
কভু নাহি হয় তার গর্ভেতে জনম।।
শচীগর্ভে অবতীর্ণ হইল প্রকাশ।
ভারতীর কাছে যবে লইল সন্ন্যাস।।
হা কৃষ্ণ বলিয়া প্রেমে হইল বিভোর।
ভারতী কপিন দিল আর দিল ডোর।।
কি মন্ত্র দেবেন তাই ভারতী ভেবেছে।
বলেন গৌরাঙ্গ প্রভু ভারতীর কাছে।।
স্বপনে পেয়েছি মন্ত্র গুরু তোমা কই।
ভারতী বলেন সন্ন্যাসের মন্ত্র অই।।
সন্ন্যাস গ্রহণ হ’লে নামান্তর লাগে।
কি নাম রাখিব গুরু ভেবেছেন যোগে।।
হেনকালে শূন্যবাণী কহে থেকে শূন্য।
রাখ নিমাইর নাম শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য।।