Page: 145

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ১৪৫
বলে মাধা অসম্ভব কথা বল্লি কেনে।
বৃষ্টি হইবে না তুই জানিলি কেমনে।।
অদ্য রাত্রে হবে বৃষ্টি সন্ধ্যার পরেতে।
চারি দণ্ড বৃষ্টি হ’বে পারিবি ঠেকাতে।।
রথের নীচায় পড়ে চাহিলি মরিতে।
গুরুপাটে আসিলি কি জাহিরী জানা’তে।।
তোর দেহে হেন শক্তি হইয়াছে কবে।
অসময় মৃত্যু তোরে কোন যমে নিবে।।
কমল চরণে দিলি রজত পাদুকা।
যে পদ কমলে সদা কমলা সেবিকা।।
এনে দে কমল ফুল যারে পদ্মবনে।
চন্দন মাখিয়া দিব যুগল চরণে।।
অমনি মাধব যাত্রা করে ফুল জন্যে।
গোলোক বলেছে মাধা যা’স কোনখানে।।
হারে মাধা নাহি মেধা শক্তি হৃদি পদ্মে।
বসে থাক মন পাঠা পদ্মবন মধ্যে।।
মাধব নয়ন মুদি বসিল তখন।
গোলোক মানসে পুঁজে শ্রীগুরু চরণ।।
মনে মনে মাধবেরে বনে পাঠাইল।
বন হ’তে পদ্ম পুষ্প মাধব আনিল।।
মনে মনে করিলেন চন্দন ঘর্ষণ।
চন্দনে মাখিয়া পদ্ম পুঁজে শ্রীচরণ।।
বিস্মিত মাধব কহে পাগলের পাশ।
কোথা হ’তে আসে দাদা চন্দনের বাস।।
গোলোক কহিছে ভাই দেখ মন দিয়া।
কে যেন দিতেছে ফুল চন্দনে মাখিয়া।।
আরোপে মাধব করে চরণ নেহার।
চন্দনে চর্চিত পদ্ম দেখে পদোপর।।
তাহা দেখি মাধব উঠিল শিহরিয়া।
গোলোকের পদ ধরি পড়িল কাঁদিয়া।।
মাধবের হস্ত ধরি গোলোক উঠায়।
বলে ভাই শুন কিছু বলি যে তোমায়।।
তোর সঙ্গে মোর হ’ল ভজনের আড়ি।
ধান্য আর দিসনারে ঠাকুরের বাড়ী।।
এত দিন গুরুপাটে কেন ধান্য দিলি।
তুই কি আমার মাকে বারানী পাইলি।।
যদি দিতে ইচ্ছা থাকে আনিস বানিয়ে।
জননীর ঠাই দিস তণ্ডুল আনিয়ে।।
পুনর্বার গুরুপাটে ধান যদি দিস।
ধান বানিবারে তোর নারীকে আনিস্।।
ফিরে যদি গুরুপাটে ধান যাবি দিয়ে।
আমার নিকটে মরিবিরে মা’র খেয়ে।।
শুনিয়া মাধব পাগলের পদ ধরি।
দাদা দাদা বলে কেঁদে যায় গড়াগড়ি।।
পাগল কহিছে মাধা আয় মোর সাথে।
রথের মেলায় যাই সন্ধ্যার অগ্রেতে।।
ডাক দিয়া ভ্রাতুস্পুত্র মহানন্দে বলে।
দোঁহে বৈস পুকুরের দক্ষিণের কূলে।।
দক্ষিণের পাড়ীর দক্ষিণ পার্শ্ব নিয়া।
দু’জনে রাখিল সেইখানে বসাইয়া।।
একখানা ভাঙ্গা চাঁচ দিয়া দুজনায়।
রাখিলেন নিয়া এক গাছের তলায়।।
অল্পক্ষণ পরে বৃষ্টি হ’বে দণ্ড চারি।
তখনে এ চাঁচ দিও মস্তক উপরি।।
বৃষ্টি হ’বে উত্তরিয়া বাতাস হইলে।
বাত বৃষ্টি লাগিবেনা এখানে থাকিলে।।
বৃষ্টি হ’য়ে গেলে ভাল সুবিধা হইলে।
তখনে দু’জনে যেও বাড়ীপরে চলে।।
মাধবে লইয়া তবে গোলোক গোস্বামী।
বাড়ীর উপর গিয়া করে পাগলামী।।
নিজে নানা কার্য করে আরো লোক ধরে।
সকলে বলিয়া দেয় কার্য করিবারে।।
ব’লে দিলে কার্য করে কেহ আনে কাষ্ঠ।
জলপাতা আনে যারা ভক্ত শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ।।
পাক করিবারে নাহি করে আয়োজন।
চুলা জালাইতে, সবে করিল বারণ।।
ঢাকিয়া রাখিল কাষ্ঠ সামগ্রী যতেক।
সব সাবধান করে করি এক এক।।
সভা করি বলিলেন কীর্তন করিতে।
উন্মত্ত পাগল যেন লাগিল নাচিতে।।
জয় হরি বল হরি গৌর হরি বল।
হুঙ্কার করিয়া নাচে কাঁপে ভূমণ্ডল।।
লম্ফ দিয়া পাঁচ সাত হাত উর্দ্ধ হয়।
হেন জ্ঞান হয় যেন শূন্যে উড়ে যায়।।
এক এক বার কহে কেহ হরিচাঁদ।
এক এক বার কহে সত্য গুরুচাঁদ।।
গুরু ঠাকুরকে বলে পাছে ভুলে যাও।
জগন্নাথ বলে ওঢ়াকাঁদি মুখ চাও।।
এক এক বার যায় অন্তঃপুর মাঝে।
এক এক বার আসে বাহিরের কাজে।।