Page: 204

শ্রীশ্রীহরি লীলামৃতপৃষ্ঠা নং : ২০৪

নড়াইল গ্রামে ভক্ত শ্রীরামকুমার।
ভবানী নামিনী হয় ভগিনী তাহার।।
একদিন ঠাকুরকে আনিব বলিয়া।
ভাই বুনে পরামর্শ করিল বসিয়া।।
রাত্রিভরে সে ভবানী বধূগণে ল’য়ে।
ভক্তিরসে নানা মিষ্টি তৈয়ার করিয়ে।।
ব্রহ্ম মুহূর্তের কালে যাত্রা করিলেন।
তরী রামকুমার বাহিয়া চলিলেন।।
দু’দণ্ড আড়ই দণ্ড পথ পরিমাণ।
দণ্ডেকের মধ্যেতে তথায় চলি যান।।
ঘোর ঘোর ভোরকালে কেহ না গা তুলে।
হেনকালে ওঢ়াকাঁদি গিয়া পহুঁছিলে।।
ছড়া ঝাটি জল আনা গৃহাদি মার্জন।
রান্নাঘর পরিষ্কার প্রাঙ্গণ লেপন।।
গাত্রোত্থান করিয়া উঠিলা ঠাকুরানী।
হেন কালে গলে বস্ত্র দাঁড়াল ভবানী।।
মন জানি অন্তর্যামী সত্ত্বর উঠিল।
ভগবান ভবানীর নৌকায় বসিল।।
ভবানী উঠিল রামকুমার উঠিল।
ব’ঠে ধরি ধীরে তরী বাহিয়া চলিল।।
অর্ধ পথে যেতে যেতে হ’ল ঘোর মেঘ।
দক্ষিণে বাতাস বহে অতিশয় বেগ।।
প্রভু রামকুমারে বলেন কি করিবি।
এই বাতাসেতে নৌকা কেমনে বাহিবি।।
কুমার বলেন প্রভু মেঘে নাহি ডরি।
আপনি আছেন নায় এই শঙ্কা করি।।
মহাপ্রভু বলে তবে না হও বিমুখ।
দিলাম উহারে ভার যা ইচ্ছা করুক।।
তরণী বাহিয়া যায় শ্রীরামকুমার।
চতুর্দিকে মেঘ দিনে ঘোর অন্ধকার।।
অবিরলধারে ঘন মেঘ বৃষ্টি হয়।
বৃষ্টিবিন্দু নাহি পড়ে ঠাকুরের নায়।।
নিরাপদে উদয় হইল নড়াইল।
আনন্দে প্রভুকে ল’য়ে সেবা করাইল।।
পায়স পিষ্টক আদি লাড্ডুক শাল্যন্ন।
ডাল বড়া ভাজা শাক শুক্তাদি ব্যঞ্জন।।
সেবাদি শুশ্রূষা ইষ্ট গোষ্ঠ দিবা ভরি।
সন্ধ্যা সমাগম ক্রমে হইল শর্বরী।।
প্রভুকে নিজ বাসরে রাখিল কুমার।
গেল দিন কহে দীন কবি সরকার।।


ভক্ত মহেশ ও নরহরি শালগ্রাম

পয়ার

নড়া’ল কানাই আর ভক্ত সনাতন।
শ্যামাচরণ বিশ্বাস ভুক্ত বহুজন।।
ভকত ভবনে যান প্রভু জগন্নাথ।
সনাতন শ্যামের বাটীতে যাতায়াত।।
ফলসী নিজামকাঁদি আর তালতলা।
মত্ত মাতালের প্রায় হ’ল হরিবোলা।।
হরিশ্চন্দ্র মহেশ কনিষ্ঠ ভজরাম।
তিন ভাই হরিভক্ত সুন্দর সুঠাম।।
শ্রীউমাচরণ চণ্ডী বৈরাগী ঠাকুর।
হরিনাম করে তারা মধুর মধুর।।
নেহাল বেহাল হ’ল আর গঙ্গাধর।
হরিচাঁদে মানে তারা স্বয়ং ঈশ্বর।।
মহেশ প্রভুকে ল’য়ে নিজ বাড়ী যান।
নেহাল জমিতে গিয়া নিগড়ায় ধান।।
ঠাকুর কহিছে তুই আয়রে নেহাল।
নেহাল দাঁড়ায় যেন সুদাম কাঙ্গাল।।
নিড়ানিয়া ঘাস ছিল আইলের পরে।
তার এক তৃণ সাধু দশনেতে ধরে।।
আর এক গোছা সাধু ধরে স্কন্ধ পরে।
গলে জড়া’য়া ধরি কহে যোগাড় করে।।
অই ভাবে উঠিলেন ঠাকুরের নায়।
দণ্ডবৎ হইয়া পড়িল রাঙ্গা পায়।।
ঠাকুর উঠিল এসে মহেশের বাড়ী।
গড়াগড়ি যায় সবে প্রভু পদে পড়ি।।
উমাচরণের বাড়ী যান হরিশ্চন্দ্র।
যেন সবে হাতে পেল আকাশের চন্দ্র।।
দক্ষিণ দেশের ভক্ত ওঢ়াকাঁদি যায়।
পথে যেতে তিষ্ঠেন নিজামকাঁদি গায়।।
উমাচরণ বাড়ই মহেশ ব্যাপারী।
বারুণীর অগ্রে মহোৎসব এই বাড়ী।।
মতুয়ারা নাহি করে স্বজাতিকে গ্রাহ্য।
লৌকিক সামাজিকতা করেছেন ত্যজ্য।।
সামাজিক পুরোহিত হইয়েছে বন্ধ।
মহেশ বলেন সামাজির ভাগ্য মন্দ।।
মহেশের ভাইঝির মৃত্যু হ’য়েছিল।
পুরোহিত আনিবারে মহেশ চলিল।।